পরোপকারী

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

কোলকাতার বউবাজারের পথে দাঁড়িয়ে এক সবজিওয়ালা চেঁচাতে লাগলো---বাবু, আমার ঝাঁকাটা একটু মাথায় তুলে দিন না..? ও বাবু, একবারটি ধরুন-না ঝাঁকাটা?...

সবজিওয়ালা যাচ্ছিল বাজারে৷ পথে এক ক্রেতার কথামতো ঝাঁকাটা নামিয়েছিল৷ ক্রেতা জিনিস কিনে চলে যাবার পর আর সে পারলো না ঝাঁকাটা তুলতে৷ ঝাঁকাটা বেশ ভারি ছিল কিনা৷

সামনে দিয়ে যেই যায় তাকেই সবজিওয়ালা অনুরোধ করে, বাবু, ঝাঁকাটা একটু তুলে দিন-না?

কিন্তু কেউই তার কথায় কান দিল না৷ সকলেই ব্যস্ত৷ বিশেষত একটা মুখ্যু গেঁয়ো চাষীর ঝাঁকা তুলে মান হারাতে এগিয়ে এলোনা কেউই, পরোপকারের চাইতে আত্মসম্মানটা এতোই বড়!

অগত্যা কি আর করা যায়৷ দেরি হলে বাজারে জায়গা মিলবে না আনাজও বিক্রি হবে না৷ সবজিওয়ালা তাই হতাশ মনে নিজেই ঝাঁকাটা তুলতে লাগলো৷ কিন্তু বারবারই সে বিফল হলো৷

এমন সময় চোগা চাপ কান-পরা এক ফিটফাট ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন বললেন, নাও তোলো আমি ধরছি৷

সবজিওয়ালা তো অবাক! এমন ঝকঝকে তকতকে বাবু কিনা তার ময়লা ঝুড়িতে হাত লাগালো৷

ঝাঁকাটা মাথায় তুলে সবজিওয়ালা বাবুকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানালো৷

জানো, কে এই বাবুটি? ইনিই হলেন রাজা রামমোহন রায়৷ মানুষের সেবা, মানুষের উপকারে তিনি কখনো পরাঙ্মুখ হতেন না৷ মানুষ যখন অসহায় তখন তাকে সাহায্য করাই তিনি পবিত্র কর্তব্য মনে করতেন---সেক্ষেত্রে ঠুনকো আত্মমর্যাদা বা বাবুয়ানাতে তিনি মোটেই প্রশ্রয় দিতেন না৷ এটাই যথার্থ শিক্ষা৷ আশা করি, এই শিক্ষাই রাজা রামমোহনের জীবন থেকে তোমরা গ্রহণ করবে৷