অতীতের সেই ভারতবর্ষ আজ আর নেই! সেই মহান ভারতবর্ষকে তিনখণ্ড করে আজ পাকিস্তান ভারত ও বাংলাদেশ হয়েছে৷ মাঝে ভারত যুক্তরাষ্ট্র যেন আজ ডানা কাটা পক্ষী বিশেষ! এই ভারতে আবার বহু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর বাস৷ ভারতের লোকসংখ্যা বর্ত্তমানে ১৩০ কোটির বেশী৷ এই লোক সংখ্যার প্রায় ১কোটি ৩ লক্ষ এর মতো ভাগ্যবান প্রায় সারা ভারতের ৭০ শতাংশ সংম্পদের অধিকারী৷ তাঁরাই তাঁদের দলবল নিয়ে জঘন্য দলবাজি করে গণতন্ত্রের (?) নামে লুটে পুটে ভোগ দখল করছেন৷ এঁরা প্রায় সব কটি রাজনৈতিক দলের ভাগ্যবিধাতা৷ ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক তাঁরাই৷ গত ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করে প্রায় ৭৩ বছর ধরে দেশটাকে অস্থি চর্মসার করে ছেড়েছে৷ পাকিস্তান পশ্চিম ও পূর্ব (অধুনা বাংলাদেশ) সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হিন্দু ও অন্যান্য অমুসলমানদের পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নির্মমভাবে হত্যা ও নির্য্যাতন করে জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করেছে৷ উদ্বাস্তু হয়ে যারা ভারতে আশ্রয় নেন৷ আজ তারা ভারতে কয়েক কোটিতে সংখ্যায় পরিণত হয়েছেন৷ তাছাড়া বর্ত্তমানেও সীমান্ত পেরিয়ে চোরাপথে অনেক হতভাগ্য অমুসলমান ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন৷ তাই দেশভাগের অভিশাপ ভারতকে আজও সমস্যায় ভোগাচ্ছে৷ অন্যদিকে ভারতে এক ভয়ংকর ছন্নছাড়া অসংখ্যক ছোট ছোট আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হওয়াতে ভারতেরহতভাগ্য কোটি কোটি মানুষ আর্থিক, সামাজিক দিক থেকে শোষণের যাঁতাকলে যেন নিষ্পেষিত হয়ে চলেছেন! বর্ত্তমানে করোনায় ও রাজনৈতিক দলগুলোর নিছক গদীর লড়াইয়ের কাজিয়ায় যেন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়ছে! শাসক দলগুলোর লক্ষ্য শুধু শাসনক্ষমতা কায়েম করা৷ তাই আজও অনেক উদ্বাস্তু গোষ্ঠীর লোকজন নাগরিকত্ব পায়নি৷ সেই নিয়ে চলছে রাজনৈতিক নেতা ও নেত্রীদের মধ্যে দর কষাকষি৷ তবে জহরলাল নেহেরু দেশভাগে যে হিন্দু ও অমুসলমানদের চরম বিপর্যয় পাকিস্তানে বসবাসকারী তাঁদের জন্য ভারতের দুয়ার খুলে রাখেন৷ বাংলার উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধান জওহরলালের আমলে হয়ে যায়৷ পশ্চিমবাঙলা ও পূর্ব ভারতে আগতদের নিয়ে সরকরা ও বিরোধী দলের মধ্যে টানাটানি আজও চলছে৷ তবে সিপিএম রাজনৈতিক দল মূলতঃ উদ্বাস্তুদের দ্বারা পরিপুষ্ট৷ এইদল পশ্চিমবাঙলার শাসনও কায়েম করে৷ তাঁদের সদস্য ও মন্ত্রীরা এই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন ও আজও আছেন৷ স্মরণে রাখতে হবে বর্ত্তমান পশ্চিমবাঙলার যে জটিল অবস্থা বিশেস করে বাংলা ভাষাভাষী বাঙালীদের যদি ঐ পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত ভাইয়েরা না আসতেন তা হলে মনে হয় পশ্চিমী হিন্দি ভাষাভাষীরা ক্ষুদ্র এই ‘‘চিকেননেক’’ পশ্চিমবাংলাকে ছোট ছোট ব্যবসা, বাণিজ্য শিল্প সংস্থা থেকে উৎখাত করে ফেলতো৷ আগত বাঙালী ভাই ও বোনেরা বর্ত্তমানে বাঙালীর অস্তিত্ব রক্ষা করছে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক৷ অনেক বছর হয়ে গেছে তাই পশ্চিম বাঙলায় ও পূর্ব ভারতের এ দেশীয় ও পূর্ব বাংলা থেকে আগত বাঙালী ভাই বোনদের মধ্যে অনেকে আত্মীক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন৷ এই সমস্যা সংকূল রাজ্যকে রক্ষায় যেন গভীর আন্তরিকতা ও দৃঢ়তা রক্ষা হয় তা না হলে উড়ে এসে জুড়ে বসার চক্রান্ত কঠিন সমস্যা সৃষ্টি করবে৷ কারণ নীতির রাজা রাজনীতি কিন্তু বর্তমানে জঘন্য নোংরা দলবাজিটা রাজনীতির নামে চালু হয়েছে৷ সেটা জঘন্য আগ্রাসী মানসিকতারই প্রকাশ পাচ্ছে৷ বাঙলা ও বাঙালী সমাজের হিন্দু ও মুসলমান জনগোষ্ঠীকে বর্ত্তমানে খুব যুক্তিবাদী হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে৷ এই মাটির একটি বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্ত্ব আছে সারা ভারতে৷ সেটাকে ধবংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে একদল স্বার্থান্বেষী৷ যেটা ভয়ংকর অশুভ বাঙলার কৃষ্টি সংসৃকতি, আর্থিক, সামাজিক স্বকীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে৷ বাঙলা বাঁচলে ভারত বাঁচবে, আর বাঙলা ক্ষতিগ্রস্থ হলে ভারত ক্ষতিগ্রস্থ হবে কারণ--- বাঙালী জনগোষ্ঠী জন্মসূত্রে চিরকালই সংকীর্ণতার ঊর্দ্ধে৷ বাঙলার শ্রী চৈতন্য রাজা রামমোহন রায়, রামকৃষ্ণ রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, নেতাজী সুভাষচন্দ্র , কাজী নজরুল, মহান দার্শনিক প্রভাতরঞ্জন সরকার আরো অনেকে বিশ্ব মানবতার কথাই বলে গেছেন৷ আজ দেখা যাচ্ছে নিছক সংকীর্ণ স্বার্থে এদেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীগণ সাম্প্রদায়িকতা, সংকীর্ণ জাত পাত ও বিচ্চিন্নতাবাদকে হাতিয়ার করে শাসন ক্ষমতা কায়েম করতে সদাব্যস্ত যেটা বাঙলা তথা ভারতের মহান চিন্তাভাবনার পরিপন্থী৷ বিখ্যাত কবি সতেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন---
‘‘জগৎ জুড়িয়া একজাতি শুধু সে জাতির নাম মানবজাতি
একই পৃথিবীর স্তন্যে লালিত একই রবিশশী মোদের সাথী
তাই সেই মহান অখণ্ড বাংলার বর্তমান খণ্ডিত পশ্চিমবাঙলাকে রক্ষায় সকল বাঙালী জনগোষ্ঠী যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসেন৷ যেন কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী একে ধবংস করতে সাহস না পায়৷ তাই মীরজাফরদের ষড়যন্ত্র থেকে একে রক্ষা করার দায়িত্ব ঐক্যবদ্ধ বাঙলার হিন্দু ও মুসলমান ভাইবোনেদের৷ কেন্দ্রের বর্ত্তমান সরকার যেন বাঙালী জনগোষ্ঠী যাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনে সবচেয়ে বেশী রক্ত দিয়েছেন ও প্রাণ দিয়েছেন তাঁদেরই বাঙলাদেশী বলে বিতাড়িত করতে উঠে পড়ে লেগেছেন! ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে সাম্প্রদায়িকতাই যেন বেশী করে মাথাচাড়া দিচ্ছে দেশের ঐক্য সংহতিকে ধবংস করতে৷ বাঙালী জনগোষ্ঠী মানবতার পূজারী, তাই ভারতকে রক্ষা করবে বাঙালী জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধভাবে৷
- Log in to post comments