রাজনৈতিক স্বার্থে ক্ষত বিক্ষত গণতন্ত্র

লেখক
প্রভাত খাঁ

২৬শে নভেম্বর হলো পবিত্র  সংবিধান দিবস এই দিনে মহান্‌ দেশনেতা বি.আর. আম্বেদকর বিভিন্ন দেশের সংবিধানের সারমর্মগুলি গ্রহণ করে ভারতের মৌলিক আদর্শকে সামনে রেখে ভারতের সংবিধান রচনা করেছিলেন৷ এটি একটি অভিনব সংবিধান যা সর্বাপেক্ষা বৃহত্তম সংবিধান বলে পরিচিত৷

এই পবিত্র দিবসে  কেন্দ্রের সেন্ট্রাল হলে বর্তমান সরকার উভয়কক্ষের  প্রতিনিধিদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে  মহান দিনটিকে স্মরণ করেন৷ প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং উপস্থিত ছিলেন৷

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাননীয় নরেন্দ্র মোদী সংবিধানকে পবিত্র বই’’ হিসাবে  ঘোষণা করেন৷

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন--- মহারাষ্ট্রের ঘন ঘন রাজনৈতিক পরিস্থিতির চেহারা বদলাচ্ছে৷ সেখানে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের বিরোধিতা করে বিরোধী দলগুলি সংবিধান দিবসের  অনুষ্ঠান বয়কট করেন৷ দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন ‘মহারাষ্ট্রে সরকার  ঘটনের  ব্যাপারে কেন্দ্র সরকার  যে ধরণের  ব্যবহার করেছেন, তাতে আমার মনে হয় না যে দেশের সংবিধানে উল্লিখিত নিয়মবিধি বর্ত্তমানে  সরকারের হাতে নিরাপদে রয়েছে৷ তিনি বলেন মহারাষ্ট্রে বিজেপি যেভাবে কাকভোরে শপথ গ্রহণ করেছিল, তা অপ্রত্যাশিত ও অগণতান্ত্রিক ঘটনা৷ শিবসেনা, কংগ্রেস এনসিপি জোট সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল৷

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সহ ভারতের অনেক রাজ্যেই সংবিধান দিবসকে স্মরণ করা হয়৷

এই পবিত্র সংবিধানকে ৭২ বছরের শাসনে প্রায় ১০০ বার সংশোধন করা হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের সেই পবিত্র সংবিধানকে আজ দেখাই  যায় না৷ পবিত্র সংবিধান আজ সংশোধনের কালির দাগে  ক্ষত বিক্ষত৷  কেন্দ্রে যে দল শাসনে এসেছে তারাই  সংবিধানকে সংশোধনের অছিলায় আঘাত করে আহত করেছে৷

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলেও সংবিধান  সংশোধন হয়েছে বহুবার৷ আর বিজেপি সরকারও সে পথ থেকে বিরত থাকে নি৷ সে-ও তার সুবিধার জন্য ইচ্ছামত সংশোধনের পথে পা বাড়িয়ে আছে৷ তাই মনে হয় শুধু সেই দিনটিকে  স্মরণ করলে তো হয় না  তাঁকে শ্রদ্ধার  সঙ্গে তাঁর নির্দ্দেশগুলি পালন করে তাঁর পবিত্রতা রক্ষা করে মহান গণতন্ত্রকে যথার্থ সম্মান দেওয়াটাই হ’ল গণতন্ত্রের প্রতি, সংবিধানের প্রতি রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর মহান কর্ত্তব্য৷

অত্যন্ত দুঃখের কথা আজ অবধি সেটা এদেশের  কোন দল শাসনে এসে করেনি৷ তাদের লক্ষ্য  হ’ল সংবিধানের অপপ্রয়োগ করে শাসন ক্ষমতাকে  আঁকড়ে থাকা৷ তাদের অনেকেই লোকসভা ও রাজ্যসভাকে জানিয়ে এমন সব কাজ করে গেছে ও করে চলেছে যেটা চরম স্বৈরাচারিতার পরিচয়৷ সেই কারণেই এই ১৩০ কোটি  দরিদ্র ভারতবাসীর জীবন আজ  নানা আর্থিক, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ও চরম বেকার সমস্যায় জর্জরিত৷ আজ জনগণ চরম আশা হত হয়ে দিন যাপনের গ্লাণী বহন করে অর্দ্ধমৃত অবস্থায় কাল কাটাচ্ছেন৷ আজ এমন দুর্দ্দশা দেশের যেখানে প্রায় শতকরা ৪০ শতাংশ লোক দু’বেলা খেতে পাওয়া তো দূরের কথা  আধপেটা খাবারও পায় না, পরনে পোষাক নেই, মাথা গোঁজার  ঘর নেই, শিক্ষা সেটাতো তথৈবচ! টিপসই আজও দেয় বহুলোক৷ শুধু মিথ্যা প্রচার সার!  আইনসভা  ও লোকসভার কাজের দিনগুলিতে হইচই করেই সময় ও অর্থ নষ্ট করে বসে৷ কিন্তু মাসে মাসে বিপুল অঙ্কের  সাম্মানিক অর্থ ভোগ করে অনেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে চলেছেন৷ যেখানে নাগরিকদের সবার জন্যে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার   কোন ব্যবস্থাই নেই৷ অধিকাংশ নাগরিক এমন আছেন দুবেলা দুমুটো খেতে পান না যাঁদের  পথেই   জন্ম আর পথেই মৃত্যু হয়৷

জনগণের কল্যাণে অনেক কিছু সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে, সেটা অধিকাংশ আইনের পাতায় আবদ্ধ৷  যেমনটি সংবিধানের  পাতায়  আবদ্ধ আছে সকল নাগরিকের জন্যে  সমান অধিকার৷  বর্তমানে  গণতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্র হয়ে গেছে শাসক গোষ্ঠীর স্বৈরাচারিতার হাতিয়ার৷ যার দ্বারা  তারা আজ চিল চিৎকার করে জনগণের উন্নতি হয়েছে  বলে প্রচার করে বেড়ায়৷ এ সবই প্রহশন৷ জনগণের  ক্রয়ক্ষমতা  না বাড়িয়ে, শিক্ষালাভ  থেকে বঞ্চিত করে, বেঁচে থাকার জন্য নূ্যনতম  প্রয়োজনটুকু পূরণ  না করে কিসের নাগরিক সেবা, কিসের গণতন্ত্র?

আর্থিক কেন্দ্রীকরণ নয়  আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণের  পথে  দেশকে নিয়ে যাওয়ার জন্য শাসককে সচেষ্ট হতে হবে৷ শুধু স্বার্থের জন্যে নোংরা দলবাজিতে নেতারা মেতে থাকে৷  জাতি,  ধর্ম, সংস্কৃতি ধবংস করেছে দলীয় স্বার্থে! তাই সমাজই যেখানে ক্ষত বিক্ষত সেখানে উন্নতিটা কি করে হবে? সরকারের তরফে  তো কিছু বলতে হয়, তাই আশ্বাসের এত বাগাড়ম্বর নেতাদের৷

আজ প্রয়োজন নিষ্ঠাবান সৎ সমাজসেবী, এককথায় নোতুন দর্শন আর নীতিবান মানুষ যাঁরা সত্যই দেশের কল্যাণ করবেন৷ আর তাঁদের হাতেই ভারতের আসল গণতন্ত্র সম্মানিত হবে৷ তাঁরাই হবেন বিশ্বজয়ী৷