মানুষ যে সকল সহজলভ্য খাদ্য খেয়ে থাকে তার অন্যতম হচ্ছে শাক৷ শব্দটাই বলে দিচ্ছে শাক মানে তাই–ই যা শক্তি জোগায়৷ তোমরা জান অধিকাংশ শাকেই যথেষ্ট পরিমাণ লোহা থাকে যা রক্ত ৰৃদ্ধির সহায়ক৷ কেবল শাক খেয়েও বেঁচে থাকা যায়৷ তবে শাকের পুষ্টি মূল্য আয়তনের তুলনায় কম৷ বাংলায় ‘শাক’ শব্দটি অত্যন্ত সীমিত অর্থে চলে৷ আমরা শাক বলতে ৰুঝি পালং শাক, নটে শাক, শুশুনি শাক প্রভৃতিকে৷ কিন্তু আসলে ন্তুন্দ্বব্জন্দ্ব্ত্রপ্ত বা মূল ভোজ্যের পাশে যা কিছু পার্শ্বভোজ্য (রন্ধনের পদ বা রেস্তোরাঁর মেনু) আছে সবাই শাক পর্যায়ভুক্ত৷ অর্থাৎ শাক মানে যে কেবল ‘সাগ’ ঙ্মহিন্দিতেৰ তাই নয়, সব রকমের শাক–সব্জীও শাক৷ অর্থাৎ যে বস্তু মোটামুটি বিচারে ন্দ্বন্ধন্দ্বব্ধ্ত্রত্ব্প্ত্ পর্যায়ভুক্ত সংস্কৃতে তারা শাক তো বটেই, অধিকন্তু ইংরেজিতে যা ন্দ্রব্জব্ভন্ব্ধ বা ফল পর্যায়ভুক্ত, সংস্কৃতে তাও শাকের পরিভূর অন্তর্গত৷ যা মাটির নিচে রয়েছে বা যা কন্দ বর্গভুক্ত, শাক বলতে তাকেও ৰোঝায়৷
শাকের মোটামুটি কয়েকটি শ্রেণী বিভাজন হচ্ছে ঃ–
কন্দ শাক
যে সকল কন্দ মানুষের ভোজ্য তারা সবাই কন্দ শাকের অন্তর্ভুক্ত৷ যেমন–আলু, কচু, মানকচু, খামালু, এ্যারোরুট, শটি, মূলো, গাজর, আদা, হলুদ, আমাদা, ওল, পানিফল–এরা সবাই কন্দ শাক৷ বিভিন্ন প্রকারের কন্দ শাকের বিভিন্ন প্রকারের গুণ রয়েছে৷ তবে এদের প্রায় সকলেরই রস লিবারের পক্ষে ভালো৷ সবাই না হোক এরা অনেকেই অর্শ রোগে উপকারী৷ কোষ্ঠকাঠিন্য ন্তুপ্সুব্দব্ধন্হ্ম্ত্রব্ধ্ প্রায় সবাই দূর করে ও মলের পরিমাণ ৰাড়িয়ে দেয়৷
এদের মধ্যে আবার কারও কারও পত্র শাকের গুণ আছে, কারও বা দোষ আছে৷ যেমন আলু একটি পুষ্টিকর খাদ্য৷ তবে অধিক মাত্রায় খেলে লিবারের পক্ষে ক্ষতিকর, মধুমেহ রোগে অপকারী৷ আলু গাছের পাতা পাকস্থলীকে দুর্বল করে দেয়৷ কচু শাকে মলৰৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোন গুণ নেই বললেই চলে৷ তবে প্রথম পাতে খেলে কিছুটা ক্ষুধা ৰৃদ্ধি করে৷ আদার পাতা উষ্ণ–বীর্ষ অর্থাৎ রক্তকে কিছুটা গরম করে দেয়৷ পেট ভালো কিন্তু দুর্বল রোগীর পক্ষে আদার পাতার রস কিছুটা উপকারী৷ মূলোর শাক লিবারের পক্ষে বেশ ভালো, ক্ষুধারও উদ্রেক করে৷ মূলোর চেয়েও মূলো শাকের গুণ বেশি৷ ওল গাছের পাতারও ঔষধীয় গুণ আছে৷
পত্রশাক ঃ
আমরা সাধারণ ৰাংলায় যাকে শাক বলি আসলে তার নাম পত্র শাক৷ যেমন–পালং, নটে, পুদিনা, শুশুনি, বেথো ঙ্মড্রড়ন্দ্বুপ্সহ্মপ্স্ প্তত্ব্ব্ভপ্পৰ, পুনর্নবা, ৰ্রাহ্মী, থানকুনি, কলমি, মটর শাক, ছোলার শাক, গিমা শাক, হেলেঞ্চা, পুঁই, ৰাঁধা কপি, লেটুস প্রভৃতি৷ ঙ্মএদের মধ্যে প্রায় সবগুলি প্রসঙ্গ অনুযায়ী ঔষধীয় গুণ বর্ণনা পূর্বের বিভিন্ন অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেৰ
মটর শাক ঃ যত রকমের পত্রশাক আছে তার তালিকায় পালং ও বেথোর কাছাকাছি হচ্ছে মটর শাক (সংস্কৃতে ‘কলায় প্রপত্রম্’)৷ মিষ্টস্বাদী এই শাক কোষ্ঠকাঠিন্যের মহৌষধ৷ স্নায়ুতেও দৃঢ়তা আনে৷
ছোলার শাক ঃ ছোলার শাক (চণক পত্রম) ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ ও দন্তরোগ তথা অস্থিরোগেরও ঔষধ৷ যে সব শিশুর দাঁত উঠতে দেরী করে বা হাড় জিরজিরে চেহারার, ছোলা শাকের ঘন্ট তাদের পক্ষে অমৃততুল্য৷
পুঁই ঃ বৈদিক ভাষায় পুঁইয়ের জন্যে তিনটি শব্দ চলে–পোতকী, উপদকী ও অমৃতবল্লরী৷ লৌকিক সংস্কৃতে পুঁইকে পুতিকা, পোতকী, পোতিকী–তিন নামে অভিহিত করা হয়৷ পুঁইয়ের নাল নাল অংশ শরীরের পোষকতা করে ও আয়ু ৰাড়ায়৷ পুঁই শাক অত্যন্ত বলদায়ক৷ অত্যধিক শক্তির আধার বলেই একে অমৃতবল্লরী বলা হয়৷ পুঁই কারো পক্ষেই অতি মাত্রায় না খাওয়া ভাল৷ লাল পুঁই তামসিক গুণযুক্ত, তাই অভক্ষ্য৷
পুষ্প শাক
আমাদের পরিচিত পুষ্প শাকগুলির মধ্যে বিটামিন রয়েছে, কিছু পরিমাণে পুষ্পমধু রয়েছে, লিবারকে সুস্থ রাখার গুণ রয়েছে, অগ্ণ্যাশয়কেও সুস্থ রাখার গুণ রয়েছে৷ আমাদের দেশে জনপ্রিয় পুষ্প শাকগুলির অন্যতম হচ্ছে শোজনে ফুল, কুমড়োর ফুল, কলার ফুল বা মোচা, ডুমুর, ফুল কপি প্রভৃতি৷ (এদের কথাও বিভিন্ন প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে )
শস্য শাক
চাল, গম, যব, যবকা প্রভৃতি ন্তুন্দ্বব্জন্দ্ব্ত্রপ্ত বা মৌল খাদ্য এই শস্য শাকের অন্তর্ভুক্ত৷ কতকগুলি পাশ্চাত্য দেশে মুখ্য খাদ্য মাংস, শাক সে সকল দেশে গৌণ খাদ্য অধিকাংশ দেশে রুটিই মুখ্য খাদ্য, মাংস বা শাক গৌণ খাদ্য৷ অনেকে ৰলেন শস্য–খাদ্য পরিমিত পরিমাণে ভক্ষণ করলে ক্ষতি নেই কিন্তু মাত্রাধিক খেলে বহু ব্যাধি হয়৷ অর্থাৎ ভাত বেশী না খেয়ে ডাল বা ওই ধরনের খাবার (শাক–সব্জী) খাওয়া উচিত৷ তবে শরীরের রক্ষার জন্যে (সাধারণ) মানুষকে খাদ্য শস্য (শস্য শাক) যথেষ্ট পরিমাণ খেতেই হবে৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের
‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে গৃহীত৷)