সামাজিক শিষ্টাচার

লেখক
দাদাঠাকুরের চিঠি

ছোট্ট বন্ধুরা, আমরা একা থাকতে পারি না৷ আমাদের বাবা মা, ভাই–বোনদের নিয়ে পরিবার আছে৷ আবার আত্মীয় স্বজন, পাড়া–প্রতিবেশীদের নিয়ে সমাজ আছে৷ এদের সবাইকে নিয়ে আমরা বাস করি৷ আমরা প্রয়োজনে অপরকে সাহায্য করি, আবার সাহায্য নিই৷ একে অপরের সাহায্য ছাড়া আমরা সমাজে বসবাস করতে পারি না৷ যেহেতু আমরা সমাজে বাস করি তাই আমাদের কিছু সামাজিক আচার–আচরণ মেনে চলা উচিত৷  এই সামাজিক আচার–আচরণগুলিকে সামাজিক শিষ্টাচার বলে৷ এসো আমরা এই সামাজিক শিষ্টাচারগুলি পালন করে আমাদের সমাজকে আরও সুন্দর করে গড়ে তুলি৷

১৷ তুমি যার কাছ থেকে কোন সাহায্য নেবে তাকে ধন্যবাদ জানাবে (বলবে, ধন্যবাদ)৷

২৷ কেউ নমস্কার করলে সঙ্গে সঙ্গে একইভাবে নমস্কার করে তার প্রতি উত্তর জানাবে৷

৩৷ কেউ কাউকে কিছু দিতে বা কারো থেকে কিছু নিতে চাইলে নিম্নবর্ণিত মুদ্রায় করবে৷ ডান হাত বাড়িয়ে বাঁ হাতের দ্বারা ডান হাতের কনুই স্পর্শ করে৷

৪৷ কোন সম্মানীয় ব্যষ্টি সামনে এলে সঙ্গে সঙ্গে  উঠে দাঁড়াবে৷

৫৷ হাই ওঠার সময় মুখ ঢেকে রাখবে ও সঙ্গে সঙ্গে হাতের মাধ্যমে শব্দ করবে৷

৬৷ কথার বলার সময় অনুপস্থিত ব্যষ্টি সম্পর্কে সম্মনজনক শব্দ ব্যবহার করবে৷

৭৷ হাঁচি পেলে তোমার মুখ রুমাল বা হাতের দ্বারা ঢেকে নেবে৷

৮৷ নাকের ময়লা (সর্দি) পরিষ্কার করার পরে হাত ধুয়ে নেবে৷ খাদ্য পরিবেশনের সময় হাঁচি পেলে বা সর্দি পরিষ্কার করলে সঙ্গে সঙ্গে হাত ধুয়ে নেবে৷

৯৷ মল ত্যাগের পর জলের দ্বারা শৌচ করে হাত সাবান দ্বারা পরিষ্কার করবে৷ প্রথমে ডান হাতে সাবান মেখে তারপর ডান হাতের দ্বারা বাঁ হাত পরিষ্কার করবে৷

১০৷ যখন কোন লোকের কাছে যাবে তখন তিনি যদি অন্য কারোর সঙ্গে কথা বলতে থাকেন, তাহলে তার কাছে যাবার আগে অনুমতি নেবে৷

১১৷ অপরের কোন জিনিস তার পূর্ব অনুমতি না নিয়ে নেবে না৷

১২৷ এমন কোন জিনিস ব্যবহার করবে না যা কার তা জান না৷

১৩৷ কথা চলার সময় কাউকে কর্কশভাবে বা খোঁচা মেরে কথা বলবে না৷ যা বলার তা পরোক্ষভাবে বলবে৷

১৪৷ যখন তখন মুখের মধ্যে আঙ্গুল দেবে না বা দাঁতে নখ কাটবে না৷   

১৫৷ খাবারের আগে হাত, পা, মুখ ধুয়ে নেবে৷

১৬৷ অন্যের দোষ ত্রুটির অযথা সমালোচনা করবে না৷

১৭৷ অপরের ব্যষ্টিগত চিঠিপত্র পড়বে না৷

১৮৷ কারো সঙ্গে কথা বলার সময় অপর পক্ষকে মতামত প্রকাশের সুযোগ দেবে৷

১৯৷ অন্যের কথা শোণবার সময় মাঝে মাঝে মৃদু শব্দ  করে সাড়া দিয়ে বুঝিয়ে দেবে যে তুমি মন দিয়েই তাঁর কথা শুনছ৷

২০৷ কারো সঙ্গে কথা বলবার সময় অন্য দিকে মুখ চোখ ফেরাবে না৷

২১৷ জমিদারী ঠাটে বসে অভব্যের মত পা নাচাবে না৷

২২৷ যাঁর সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে যাচ্ছ তিনি যদি সে সময় চিঠিপত্র লেখায় রত থাকেন, সেক্ষেত্রে সামনে পড়ে’ থাকা চিঠিপত্রের দিকে নজর দেবে না৷

২৩৷ কথাবার্ত্তা চলা কালে যদি অপর পক্ষের কথা বুঝতে না পার, তবে সবিনয়ে বলবে, ‘‘দয়া করে’ কথাটা আরেক বার বলবেন কি’’

২৪৷ যদি কেউ তোমার স্বাস্থ্য ও মঙ্গল সম্পর্কে খোঁজখবর নেন, তাঁকে অবশ্যই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাবে৷

২৫৷ রাত্রি ৯টার পর কারো বাড়ী যাবে না অথবা কাউকে বাড়ীতে ডেকে পাঠাবে না৷

২৬৷ যদি কাউকে নেতিবাচক কিছু জানাতেই হয়, ‘‘দয়া করে’, মাফ্ করবেন’’ শব্দগুলি বলে তারপর বাক্যালাপ শুরু করবে৷

২৭৷ আহার গ্রহণ করছেন এমন লোকের সামনে দাঁড়িয়ে কথাবার্ত্তা বলবে না৷

২৮৷ বাঁ হাত দিয়ে কাউকে আহারের খাদ্য বাড়িয়ে দেবে না৷

২৯৷ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্নান করবে না ও জল পান করবে না৷

৩০৷ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ ও মলত্যাগ করবে না৷

৩১৷ কাউকে গ্লাসে করে’ জল দেবার সময় গ্লাসের শুধু নীচের দিকটা হাত দিয়ে ধরতে হয়৷

৩২৷ কাউকে গ্লাসে করে জল পান করতে দেবার সময় প্রথমে হাতের আঙুল দিয়ে গ্লাসটা পরিষ্কার করবে, তারপর আঙুল না দিয়েই পরিষ্কার করবে ও তারপরে গ্লাসে জল ভরবে৷

৩৩৷ ভোজনের সময় যদি খুব বেশী ঘাম ঝরে, তাহলে রুমাল দিয়ে সেই ঘাম মুছে ফেলবে৷

(শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নির্দেশিত বিধি অনুসারে)