স্বামীজীর ভাবশিষ্য নেতাজীর দর্শন চিন্তা

লেখক
সুধাংশু গঙ্গোপাধ্যায়

পূর্ব প্রকাশিতের পর

১৯/২০ বছর বয়সেই নেতাজী শঙ্করাচার্যের অদ্বৈত মায়াবাদে ভীষণ ভাবে বিশ্বাসী হয়ে পড়লেন৷ তাঁর যুক্তিবাদী ভাবুক মনটি মায়াবাদের দৃঢ়ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে Ignatius Loyola–র কিছু কিছু বক্তব্যে আকর্ষণ বোধ করতে থাকে৷ এই নবতর আকর্ষণের মূলে ছিলো এক Jesuit father–এ সঙ্গে তার ঘনিষ্টতা৷ পাদ্রী ভদ্রলোক ছিলেন মস্ত পণ্ডিত৷ কিন্তু তা সত্বেও অসাধারণ তীক্ষ্ণধী যুবক সুভাষের সঙ্গে তর্ক জালে জড়াতে জড়াতে একদিন তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন্ - ‘‘I admit that Shankara's position is logically the soundest – but to those who cannot live up to it, we offer the next best.’’

কিন্তু সেই সুভাষই ক্রমশঃ একদিন ‘‘who can not live up  to it’’ – এর দলে এসে দাঁড়ালেন৷ শঙ্করের যেই ‘পরম সত্য’কে প্রথমে ভাবাবেগের আতিশয্যে তিনি মানব–মনের দ্বারা আস্বাদন–যোগ্য বলে মনে করেছিলেন  ক্রমশঃ তাকেই তাঁর কাছে অসম্ভব বলে মনে হতে লাগলো৷ যে সিদ্ধান্তের বাস্তব রূপায়ণ সম্ভব নয় – তাকে ত্যাগ করতে তিনি দ্বিধা  করলেন না৷ বিশ্বের সৃষ্টি প্রবাহকে আর অলীক ভাবা সম্ভব হলো না তাঁর পক্ষে৷ তাঁর মনে হলো, জগতের সব সত্যই আপেক্ষিক – পরম সত্য বলে কিছু নেই৷

কিন্তু সমস্যার সেখানেই সমাধান হয়ে গেলো না৷ অধ্যাত্মবাদী দর্শনগুলো ভিন্ন  ভিন্ন ভাষায় পরম চৈতন্য সত্তার অনির্বচনীয়তা ব্যাখ্যা করেছে আর সৃষ্ট জগতের মূল্যায়ণ করেছে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ৷ অপরদিকে জড়বাদী দর্শনের চোখে বস্তুজগতই একমাত্র সত্য – চৈতন্য সত্তা অলীক কল্পনা প্রসূত৷

সুভাষ কিন্তু কাউকেই পুরোপুরি মানতে পারছেন না৷ তিনি অজ্ঞাবাদী হয়ে উঠলেন ৷

শঙ্করের নির্গুণ ব্রহ্ম সম্পর্কে তিনি বললেন – ‘‘  What I cannot live upto – what is not workable. I feel inclined to discard.’’

আবার চৈতন্য সত্তাকেও অস্বীকার করতে পারলেন না৷ বললেন – ‘‘ Why do I believe in spirit? Because it is a Progmatic necessity. My nature demands it. I see purpose and design in nature, I discern an 'increasing purpose' in my own life. I feel that I am not a mere conglomeration of atoms. I perceivce too, that reality is not a fortuitous combination of molecules.’’

সৃষ্টিকে তিনি পাপ, অবিদ্যা, মায়া অথবা অজ্ঞতা প্রসূত বলে উড়িয়ে দিতে পারলেন না৷ বরং তার মধ্যে অনুভব করলেন – ‘‘ .... the eternal play of eternal forces – the Devine Play.... ’’

বিভিন্ন ভারতীয় দর্শন তা ছাড়া Spencer, Von Hartmann, Henry Bergson, Hegel প্রমুখ দার্শনিকদের মধ্যে তিনি খণ্ড খণ্ড ভাবে আংশিক সত্যের সন্ধান পেলেন৷ তারমধ্যে Hegel–কেই তাঁর কাছে অধিকতর সত্য বলে মনে হলো৷ তাই তিনি বললেন – ‘Hegel's theory is the nearest approximation of truth. It explains the facts more satisfactorily than any other theory. At the same time it cannot be regarded as the whole truth since all the facts as we know them, do not accord with it . Reality is, after all, too big for our frail understanding to fully comprehend.’’

জড় ও চৈতন্যের পারস্পরিক সম্পর্ক ও প্রগতির প্রকৃত মূল্যায়ণ নিয়ে নেতাজীর মনে যে দ্বন্দ্ব, তাকে কাটিয়ে ওঠার সংগ্রামেই যেন তাঁর দর্শন–চিন্তার সামগ্রিক আলেখ্য৷ তাঁর সমগ্র জীবনসত্তা যেন প্রতিনিয়ত আকুল আগ্রহ নিয়ে লাভ করতে চাইছে সেই চির অভিলষিত লক্ষ্যভূমি,  ‘‘which the individual can reach and where the subject and the object merge into oneness. ’’

চৈতন্য সত্তা ও বস্তু–সত্তার স্বরূপ ও বাহ্যরূপ নিয়ে নানা মুনির নানান্ মতের ভিড় ঠেলে এগোতে গিয়ে নেতাজীর মানসভূমিতে একটি আপ্তবাক্য জন্ম নিলো৷ তার নাম ভালবাসা৷ তিনি এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের জড়–চেতনের চলমান প্রবাহে ভালবাসার সর্বগ্রাসী ভূমিকাটি উপলব্ধি করে যেন মোহিত হয়ে গেলেন – চারিদিকে শুধু ভালবাসার খেলা৷ মানুষের চেতনা ও তার দেহ উভয় সত্তার যুগ্ম নির্যাস এই ভালবাসা৷ ব্যষ্টি জীবনের পরিপূর্ণতা–সামাজিক জীবনের সমৃদ্ধি–উন্নততর সমষ্টি জীবনকে বাস্তবায়িত করার জন্যে সংঘবদ্ধ সংগ্রাম–সবকিছুর মূলেই চাই এই ভালবাসার সাযুজ্য৷ ভালবাসার সংশ্লেষাত্মক–জীবনমুখিনতাই তার ধর্ম৷ অপরপক্ষে, ভালবাসার অভাব ডেকে আনে এক জীবন বিরোধী বৈশ্লেষিক পরিণতি৷

নেতাজী তাই দৃঢ় কণ্ঠে বললেন – ‘‘For me, the essential nature of reality  is Love. Love is the essence of the universe and is the essential principle in human life.’’

ভালবাসার ব্যাপারে তাঁর এই সিদ্ধান্ত যতই দৃঢ় হোক না কেন – নেতাজী কখনো একে ‘শেষ বাক্য’ বলে দাবি করেন নি৷ এখানেই তাঁর ব্যষ্টি চরিত্রের অপূর্ব স্বকীয়তা৷ হূদয়টি তাঁর ডোবা নয় – দিঘিও নয় – সে এক বহতা নদী৷ তাই তাঁর চিরগতিশীল ব্যষ্টিত্বের – কখনো কোনো গোঁড়ামির বাবুই পাখি বাসা বাঁধতে পারেনি৷ তিনি বলেছেন – ‘‘Reality , therefore, is spirit, the essence of which is love, gradually unfolding itself in an internal play of conflicting forces and their solutions. ’’ üË/ üË/ Õ±õ±õþ ÛßÂï±Ý õËùËåò Îû – ‘‘I admit that this conception also is imperfect –for I do not know today what reality is in itself and I cannot lay claim to knowing the absolute today – even if it be within the ultimate reach of human knowledge or experience. Nevertheless, with all its imperfection, for me, this theory represents the maximum truth and is the nearest approach to Absolute Truth’’