শিল্পীর মর্যাদা

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বিখ্যাত ছবি---‘শেষ বোঝা’ মরুভূমির ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শুয়ে পড়েছে একটি উট৷ তার আর চলার ক্ষমতা নেই৷ অবসাদ আর গ্লাণিতে নিস্তেজ  হয়ে পড়েছে৷ পেছনে দিনাবসানের ইঙ্গিতে লালরঙে আভাসিত হয়েছে অস্তমিত জীবন৷ অর্থাৎ উটটির আয়ু ফুরিয়ে এসেছে৷ অপূর্ব ছবি৷

ছবিটি বিদেশে প্রচুর সমাদর পেলো৷ ফ্রান্সের বিখ্যাত ল্যুভার মিউজিয়াম ছবিটি কিনতে চাইলেন৷ কিন্তু ছবিটির দাম অত্যন্ত কম ধার্য হওয়ায় অবনীন্দ্রনাথ ছবিটি দিতে রাজী হলেন না৷

খবরটা শুণে একজন বিদেশী বন্ধু অবনীন্দ্রনাথকে বোঝালেন, বিশ্ববিখ্যাত মিউজিয়ামে তোমার ছবি ঠাঁই পাবে৷ একি কম গর্বের কথা৷ দিয়ে দাও ছবিখানা৷

দিল্লী-দরবারের সময় যখন সম্রাট পঞ্চম জর্জ ভারতবর্ষে আসেন তখন সম্রাজ্ঞী কুইন মেরী অবনীন্দ্রনাথের একটি ছবি দেখে মুগ্দ হন৷ সেটি অবনীন্দ্রনাথের অন্যতম বিখ্যাত ছবি--- ‘অশোক-মহিষী’৷ অবনীন্দ্রনাথ লেডি হার্ডিজের মারফৎ সেই ছবিটি কুইন মেরীকে উপহার হিসাবে পাঠিয়ে দেন৷ লণ্ডনের  রাজপ্রাসাদ বার্কিংহাম প্যালেসে ছবিটি সমাদরে রাখা হয়৷

ঘটনাটি উল্লেখ করে অবনীন্দ্রনাথ বন্ধুকে বললেন, ল্যুভার মিউজিয়াম যদি বিনামূল্যে ছবিখানা চাইতেন তবে আমি দিয়ে দিতাম৷ ওরা ভারতীয় ছবি বলেই অতো কম দর দিয়েছে৷ দরাদরি যখন করবো তখন শিল্পীর আত্মমর্যাদা অক্ষুণ্ণ্ রেখেই করবো৷