ধরুন আপনাকে কেউ জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কোথাকার মানুষ? এ রাজ্যের মানুষ হলে আপনি তাঁকে আপনার জেলা বা আরও নির্দিষ্ট করে জানতে চাইলে আপনি যে শহর বা গ্রামে বাস করেন সেই জায়গার নাম বলবেন৷ রাজ্যের বাইরে আপনার পরিচিতি কেউ জানতে চাইলে আপনি নিশ্চয়ই তাঁকে প্রথমে নিজ রাজ্যের কথা বলবেন৷ আবার বিদেশে গেলে আপনার প্রথম পরিচিতি আপনি যে দেশ থেকে গেছেন সেই দেশের অধিবাসী হিসেবে৷ আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে তখন আপনার রাজ্যের বা জেলার নাম আসবে৷
কিন্তু মেদিনীপুর শহরের কলেজ-কলেজিয়েট মাঠের এক রাজনৈতিক দলের সভায় সম্প্রতি এক নেতা (বাঙালী) হঠাৎ বলে বসলেন-আমি আগে ভারতীয়,পরে বাঙালী৷ যে মাটিতে ওনার জন্ম, সেই মাটি অর্থাৎ বাঙলার নাম নিতে উনি সংকোচ বোধ করলেন৷ বাঙালী হিসেবে যাঁরা গর্ববোধ করেন, তাঁদের সেদিন ঐ নেতার কথাটা খুবই বিসদৃশ লেগেছিল৷ মনে হয় উনি ভিন প্রদেশের এক দুজন নেতাকে সন্তুষ্ট করতে এধরনের কথা বলেছিলেন! অথচ তাঁর উল্টোটাই বলা উচিত ছিল৷
তাহলে ঐ নেতার কী ‘‘বাঙালী’’ হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে সেদিন আত্মসম্মানে লাগছিল? বাঙলার কোনও নেতা বা নেত্রীর যদি নিজের জাতিসত্তার, মাতৃভাষার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ হয়, সেই নেতা বা নেত্রীর রাজনৈতিক কার্যকলাপ করার প্রয়োজন নেই এই বাঙলাতে৷ বাঙলার মনীষীগণ যেখানে নিজেদের ‘বাঙালী’ বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন, সেখানে নিজেকে বিরাট ভেবে নেওয়া এক দলবদল নেতা নিজেকে বাঙালী ভাবেন পরে, আগে নাকি তিনি ভারতীয়! ধিক্কার জানাই তাঁর বক্তব্যকে৷
যিনি গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে নিজেকে বাঙালী ভাবতে বা বলতে পারেন না, তিনি বাঙলার মানুষের জন্য কী কাজ করবেন? আগে নিজেকে বাঙালী হিসেবে ভাবুন, বাংলা ও বাঙালীর জন্য গর্ববোধ করুন তারপর এ রাজ্যের রাজনৈতিক ময়দানে নামবেন৷
- Log in to post comments