পরিচয় ও প্রজাতি ঃ তোমরা অনেকেই হয়ত জান যে শশা সৃষ্ট জগতের একটি প্রাচীন অবদান৷ মানুষের উদ্ভূতির অনেক আগেই শশা এসেছে এই জগতে৷ বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন আবহাওয়ায় এই ফলটিকে জন্মাতে দেখা যায়৷ সর্বত্রই এটি বেশ জনপ্রিয়৷ ইংরেজী ন্তুব্ভন্তুব্ভপ্পত্ব্ন্দ্ব্ শব্দটি আপাতদৃষ্টিতে এ্যাংলো–স্যাক্সন মূলের বলে মনে হলেও এটি একটি ৰ্রাইটন শব্দ৷ ইংরেজীর সহযোগী ভাষাগুলি কেউ কেউ এটি ব্যবহার করলেও এর উদ্ভূতি ব্রিটানিতে [Brittany-France]৷
শশা মুখ্যতঃ দুই প্রজাতির–(১) বর্ষাতী বা মাচার শশা যার সংস্কৃত ‘শশক ফলং’ (শশকঞ্ছশশঞ্ছশশ্)৷ ফলটি শশক অর্থাৎ খরগোসের অতি প্রিয় বলেই এই রকম নাম রাখা হয়েছিল৷ দ্বিতীয় প্রজাতিটি হচ্ছে শীত–গ্রীষ্মের শশা বা মেঠো শশা বা ক্ষীরিকা বা ক্ষীরা (ক্ষীরিকাঞ্ছক্ষীরিআঞ্ছক্/ক্ষীরি/ক্ষীরেই)৷
বর্ষা, শীত, গ্রীষ্ম বাদেও শশার বার মেসে উপপ্রজাতিও রয়েছে৷ বর্ষাকালীন শশা রঙে কিছুটা সবুজ হয় ও আকারে কিছুটা ছোট ও বেশ সরস হয়৷ দেশভেদে, ঋতুভেদে শশার আকারে, আকৃতিতে ও বর্ণে যথেষ্ট তারতম্য দেখা যায়৷
কিডনী ও লিবারের রোগে ঃ বর্ষাতী ও শীতের শশা–এই উভয় শশারই ঔষধীয় ও স্বাস্থ্যগত মূল্য আছে৷ কিডনী ও লিবারের ওপরে এর শুভ প্রভাবই রয়েছে৷ তবে অতি মাত্রায় খেলে সব কিছুই খারাপ৷ বর্ষাতী শশা সরস, মিষ্ট রস–যুক্ত, কষা ভাব অল্প–তাই মুড়ি ও চিড়ে ভাজার সঙ্গে অত্যন্ত মুখরোচক৷ জলখাবার হিসেবে চিঁড়ে ভাজার সঙ্গে খেলে স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ভাল৷ মুড়ির সঙ্গে খেলে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর নয়৷ বর্ষাতী শশার সঙ্গে মুড়ির কোন দোষ নেই, অথচ স্বাদেও ভাল৷
শশা ও মুড়ি–চিঁড়ের জলখাবার সকালের দিকেই ভাল৷ গ্রীষ্মকালীন শশা ও ভূঁইশশা কাঁচা অবস্থায় অর্থাৎ জলখাবারে এর গুণ বর্ষাতী শশার চেয়ে কিছু কম৷ তবে রাঁধা তরকারী হিসেবে শীতের ভূঁইশশার গুণ বর্ষাতী শশার থেকে বেশী৷
মূত্র রোগে বা মূত্রস্তম্ভ রোগে ঃ বারমেসে শশার মূল (শেকড়) ভোরে অল্প মাত্রায় (চিৰিয়ে) খেলে লিবারের রোগে, মূত্ররোগে বা মূত্রস্তম্ভ রোগে ভাল ফল দেয়৷
রক্তক্ষরণ (অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক) রোগে ঃ কিছু কিছু লোক আছে যাদের অল্প আঘাতেই শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হয়৷ এ সব মানুষ যদি কাঁচা অবস্থায় বা রাঁধা তরকারীতে ভূঁইশশা (শীতের শশা) ব্যবহার করে তাহলে ওই রক্তক্ষরণ (হ্যামারেজ) সংক্রান্ত প্রবণতা কমে যায়৷ এই শশার কাঁচায় যতটা গুণ, রাঁধা অবস্থায় তার থেকে বেশী গুণ৷
শশা খাবার সময় ঃ সূর্যোদয়ের সময় শশায় যত গুণ থাকে, বেলা ৰাড়বার সঙ্গে সঙ্গে এই গুণ কমতে থাকে৷ সূর্যাস্তের পর এর অধিকাংশ গুণ অন্তর্হিত হয়ে যায়৷ এ গুণ (বৈশিষ্ট্য) কেবল মিষ্ট শশা, তেঁতো শশার ক্ষেত্রেই নয়, কাঁচা–পাকা বা রাঁধা অথবা না–রাঁধা সবেতেই সমভাবে থাকে৷ তাই শশা সকালের দিকে খাওয়াই বাঞ্ছনীয়৷ আমাদের অঙ্গ দেশে (পূর্ণিয়া, ভাগলপুর ইত্যাদি বিহারের অঞ্চল) বলা হয়–
‘‘বিহান ক্ষীরা হীরা
দোপহর মঁ ক্ষীরা ক্ষীরা
সন্ধ্যা মঁ ক্ষীরা পীড়া৷৷’’
অন্যান্য ব্যবহার ঃ (১) জ্যোতিষিক মতে, যাদের মঙ্গলে গ্রহবৈগুণ্য আছে, তাদের অল্প কারণে শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হয়৷ এদের যদি মঙ্গল–সঞ্জাত রক্তক্ষয়ী দুর্ঘটনার (accident) সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তারা মঙ্গলবার ভোরে স্নান করে, অভুক্ত অবস্থায়, দক্ষিণ হস্তে লাল সূতোয়, নিজের কনিষ্ঠাঙ্গুলীর সমপরিমাণ ক্ষীরীকা–মূল ধারণ করে, তবে মঙ্গল–সংক্রান্ত উৎপাত কমে যাবার সম্ভাবনা থাকে (নারীরা ধারণ করবেন বাম হস্তে)৷ এক্ষেত্রেৰ বারমেসে শশার মূল ধারণ করতে হবে৷ (২) শশার পাকা ৰীজ খোলা ছাড়িয়ে বাদামের (pea nuts) বিকল্প রূপে ব্যবহার করা যায় ও এর তেল রন্ধন কার্যেও (edible oil) ব্যবহার করা যায়৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে গৃহীত)