এই বস্তুজগতের সমস্ত কিছুই দেশ-কাল-পাত্রে আধারিত । প্রতিটি সৃষ্ট সত্তার, বিশেষ করে মানুষের স্বভাবই হ’ল আশ্রয়ের অনুসন্ধান করা । এই ভাসমান অনুসত্তার জন্যে একটা স্থায়ী আশ্রয় একান্ত আবশ্যক ।
এখন, শ্রেষ্ঠ আশ্রয় কী? দেশ-কাল-পাত্রাধিগত প্রতিটি সত্তাই ক্ষণস্থায়ী । তাই এই বিশ্বের কোন কিছুই তোমার স্থায়ী আশ্রয় হতে পারে না । যদি তুমি স্থায়ী আশ্রয় পেতে চাও, তাহলে তোমাকে তিন আপেক্ষিক তত্ত্বের ওপর আধারিত এই প্রকাশমান জগতের অধিক্ষেত্রের বাইরে যেতে হবে । আর আপেক্ষিকতার ঊর্ধ্বে যে পরম তত্ত্ব—তিনি হলেন পরমপুরুষ । তাই পরম পুরুষই তোমার একমাত্র আশ্রয় । তোমার আর দ্বিতীয় কোন আশ্রয় হতে পারে না ।
এর আগে একদিন আমি বলেছিলুম, কেবল তিনিই মানুষের একমাত্র ইষ্ট (desideratum), অন্য কিছু ইষ্ট হতে পারে না । অর্থাৎ একাধিক ইষ্ট (desideratum)হয় না । কারন তিনি একক—অদ্বিতীয় । তিনিই একমাত্র পরম লক্ষ্য । তাই যারা বুদ্ধিমান তারা আধ্যাত্মিকতার পথই অনুসরণ করবে । প্রতিটি মানুষ পূর্ণতাপ্রাপ্তির প্রয়াসী । অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে চলাই মানব প্রগতি । মানব মনের স্বাভবিক বৈশিষ্ট্য হ’ল এই যে, সে যা চিন্তা করে তাই হয়ে যায় ।আর পরমপুরুষ যখন তোমার মনের বিষয় হয়ে যান তখন তুমি পরমপুরুষই হয়ে যাবে । তুমি তাঁর সঙ্গে মিলে মিশে এক হয়ে যাবে ।
আর, ধর্মমহাচক্রে একটা কথা আমি তোমাদের বলেছিলুম, পরমপুরুষ তোমার বিষয়, আর তুমি বিষয়ী এ ধরনের চিন্তা করা উচিত নয় । কারন তিনি সমস্ত বিষয়ভাবেরই প্রাণকেন্দ্র, তিনি তোমার বিষয় হতে পারেন না । তুমি তাঁর বিযয় । সাধনার সময় তুমি সব সময় ভাববে, তুমি যা কিছু করছো, তিনি সবই দেখছেন । অর্থাৎ, তুমি বিষয়, তিনি বিষয়ী । তুমি যা যা করছ, ভিনি দেখছেন,তুমি যা যা চিন্তা করছ, তাও তিনি জেনে যাচ্ছেন ।
চিন্তা করা মানে মনে মনে কথা বলা । তুমি যা কিছু চিন্তা করছ, মনে মনে যা কিছু বলছো, তৎক্ষণাৎ তা তিনি টেপ রেকর্ডিং করে নিচ্ছেন । তাই কিছুই গোপন থাকছে না । যখন ধ্যান করবে বা অন্য কোন সাধনা অনুশীলন করবে, একথা সবময় মনে রাখবে যে, তিনি তোমার বিষয়ী আর তুমি তাঁর বিষয় । এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোপন তত্ত্ব । তবে এখন আর গোপন থাকছে না, কারন তোমরা সবাই এটি জেনে গেলে।
(মুম্বাই, ৭ই জুন, ১৯৭১,সন্ধ্যাবেলা)