ইংরেজ রাজত্বের যখন চরম শোষণে দিশেহারা দেশ তখন কিছু দেশ সেবক একত্রিত হয়ে ইংরেজ এর শোষণ বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ সারা দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের সেই দেশ সেবকগণ এক হয়ে আন্দোলন করেন৷ সেই আন্দোলন হয় কিছুটা সহিংস ও কিছুটা অহিংস৷ শেষ পরিণতি হলো নরমপন্থী অহিংস আন্দোলনের কিছু নেতা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্লান্ত ও ক্ষতিগ্রস্থ ইংরেজ সরকার সারা দেশকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভাগ করে চিরকালের মতো অখণ্ড ভারতবর্ষকে পঙ্গু করে নামকেওয়াস্তে গণতান্ত্রিক(?) স্বাধীনতা দিয়ে গেল৷ এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলো ও লক্ষ লক্ষ মানুষে এর প্রাণ গেল,লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে জন্মভূমি ত্যাগ করে ভারতে এলো৷ আজও সেই উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান খণ্ডিত পশ্চিম বাঙলায় হয়নি৷ সেই নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির খেয়োখেয়ী চলছে নাগরিক অধিকার নিয়ে আর জীবন যাপনের কঠিনতম সমস্যা নিয়েই৷ যাঁরা সেবা দিতে শাসনে এলেন তাঁদের অধিকাংশই ধনী দেশীয় রাজা মহারাজাদের বংশোধরগণই৷ তাঁরাই আজও শাসনে সেই দল ভাঙ্গা গড়ার খেলায় মেতে আছেন৷
হতভাগ্য দেশের জনগণ অবাক হয়ে দেখছেন৷ তাই গণতন্ত্রগুলো গেছে প্রচণ্ড ভাঙনের দশা৷ জনতা ভেঙ্গে বিজেপি, কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেস৷ পশ্চিমবঙ্গে দেখা গেছে--- এই রাজ্যের সচেতন জনগণ অনেকটা বাম ঘেঁষা৷ তাই দিল্লীর সঙ্গে এই রাজ্যের মানুষের দূরত্বটা বেশী৷ যদিও বাম আমলে ৩৪ বছর শাসনে কেন্দ্রে ইন্দিরা কংগ্রেসকে বাহির থেকে এরা সমর্থন করে গেছেন কংগ্রেস বিরোধীদের ঠেকাতে আর কেন্দ্রের কাছে সুযোগ নিতে৷ এটাকে জনগণের সরকার না বলে একধরণের নোংরা দলবাজির উদাহরণ--- জনগণ যাঁদের বোট দিলেন তাঁদের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করলো নিছক সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থেই৷ ঠিক দেখা গেল কংগ্রেস ভেঙ্গে তৃণমূল হলো সেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্যে শাসন কায়েম করলো৷ তারপর দেখা গেল আর আঁতাত হলো না৷ তৃণমূল একলা চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে রাজ্যে শাসন চালাতে লাগলো৷ এইদল বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করে৷ সেটাও ত্যাগ করে৷ আজ দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের ঘরে বাহিরে বিরোধিতা! এই সুযোগে বিরোধী দল টোপ দিচ্ছে তাঁদের জন্য দরজা খুলে রাখছে তৃণমূল ভাঙাতে৷ এই আদর্শহীনতা জনগণকে ভাবিয়ে তুলছে৷ গণতন্ত্রের প্রতি অনেক বিশ্বাসভঙ্গ হচ্ছে, তাই বোটারগণ বিরক্ত হয়ে অনেকে বোট দিচ্ছেন না৷ নেতাদের স্বজন পোষণ আর রাজনৈতিক খেয়োখেয়ী ও কোন্দল বিশেষ করে ভয়ঙ্কর করোনা আক্রমনকালে দেশের দলগুলো মানুষকে সেবা না দিয়ে গদী নিয়ে কামড়া-কামড়ি করছে৷ সেই চরম সংকটে কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিকগণ অনেকস্থানে দুর্গতদের পাশে দাড়িয়ে অকাতরে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন৷ এটা কিন্তু সেই দলহীন গণতন্ত্রেরই প্রকাশ৷ এই দলগুলো দলীয় স্বার্থে দেশের সমাজগুলিকে একেবারে ধবংস করে মারাত্মকভাবে আঞ্চলিক ঐক্য ও সংহতিকে নষ্ট করছে৷ তাই সমাজগুলিকে সেবা দিয়ে সৎনীতিবাদী সমাজসেবকগণকে কাজ করে যেতে হবে ও সমাজের মানুষকে বোঝাতে হবে তাঁরা রাজনৈতিক সচেতন হয়ে ঐসব দলের উদ্দেশ্য বুঝে দলগুলোর সর্বনাশা খেলা রুখে দিতে পারেন৷ আজ এরাই সমাজগুলিকে পঙ্গু করে দিয়েছেন শুধু গদীর স্বার্থে৷ সমাজ আন্দোলনটি জরুরী প্রয়োজন হয়ে পড়েছে৷ তাই প্রাউটিষ্টরা নোংরা দলবাজি না করে সমাজের সকল মানুষের সেবায় কাজ করে চলেছেন৷ সারা ভারতে প্রায় ৪৪টি সমাজ আছে যেমন বাঙালী সমাজ সেটি সকল বাংলাবাসী যাঁরা নিজেদের বাঙালী বলে বোঝেন তাঁদের লক্ষ হওয়া উচিত হিন্দু, মুসলমান ও অন্যান্য স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে প্রীতি ভালবাসা জাগাতে কাজ করে চলা৷
প্রতিটি সমাজের গ্রামীন ব্লকগুলিতে সেই ব্লকের উৎপন্ন কৃষিজ দ্রব্যকে যদি কুটির শিল্পের মাধ্যমে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন করা হয় সমাবায়ের মাধ্যমে এবং যে উৎপন্ন বস্তুকে সমবায় পদ্ধতির মাধ্যমে বিক্রয় করা হয়, তাতে স্থানীয় বেকার সমস্যা দূর হয়৷ গ্রামে বসেই বেকার যুবক-যুবতীগণ স্বনির্ভর হতে পারেন৷ এইভাবে ভয়ঙ্কর কঠিন বেকার সমস্যা কিছুটা লাঘব হয়৷ শহরে ভাগ্যের অন্বেষণে তাঁরা যাবেন না৷ তাতে পরিবেশও দূষিত হবে না৷ ইংরেজ আসার আগে প্রতি গ্রাম ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ তারা গ্রামের কুঠির শিল্প ধবংস করে৷ এদেশের সস্তায় শ্রমিক ও কাঁচামাল পাওয়া যেত তাই তারা বড়ো বড়ো কলকারখানা সস্তায় শিল্পজাত বস্ত্র ও অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে লাভবান হন৷ হতভাগ্য দেশীয় শিল্পীরা বেকার হয়ে পড়েন আর গ্রাম শূন্য করে গ্রামের মানুষ শহরে শ্রমিক হিসাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহে আত্মনিয়োগ করেন৷ গ্রামগুলি শ্মশানে পরিণত হয়৷ আজকের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার গুলি আর্থিক উন্নয়নের দিকে বিকেন্দ্রীক পদ্ধতিতে সমবায়কে প্রাধান্য না দিয়ে সেই বিদেশী ইংরেজ শাসকের মতই ধনীদের দ্বারা সৃষ্ট কল-কারখানায় কর্ম সংস্থানের উন্নয়নের চিন্তা করেন ও সেই ধনীদের পশ্চাতে বৃথা ঘুরে বেড়ান৷ তাতে গরীবরা ধবংস হয়ে চলেছে৷ আর্থিক অনটন বেকারত্বের জ্বালায় তারা জ্বলছেন আর ধনীরাই ধনী হচ্ছেন৷ তাই আম্বানী গোষ্ঠী যাঁরা এশিয়ার মধ্যে সর্র্বপেক্ষা ধনী হিসাবে চিহ্ণিত হয়েছেন৷ করের চাপে কোটি কোটি মানুষ আরও গরীব হচ্ছেন৷ কর্ষকরাই কৃষিপ্রধান ভারতের ন্যায় দেশের অন্নদাতা ও সম্পদ সৃষ্টির উৎস তাঁদেরই সর্বনাশ করতে নোতুন কৃষি আইন হয়েছে বিরোধী শূন্য লোকসভায়! এই আইন হলো কালা আইন৷ একে খারিজ করাটাই ভারতের কল্যাণকর৷ যেখানে গণতন্ত্রের জনপ্রতিনিধিরা আলোচনার সুযোগ পেল না করনার দাপটে সেই আইন বৈধ কি করে হয়? এটা গণতন্ত্রের এক পরিহাস৷
‘যতো দিন যাচ্ছে সরকার বিশেষ করে কেন্দ্র সরকার যেন সংবিধানকেই দূরে ঠেলে দিয়ে এক স্বৈরাচারী শাসকের মত কাজ করছেন৷ বর্তমান সরকার ইন্দিরা গান্ধির চেয়েও ক্ষতিকারক বলেই জনগণের ধারণা৷ তাই সৎনীতিবাদী জনগণকে এ ব্যাপারে অবশ্যই সজাগ হতে হবে৷
ভারতের কল্যাণে আজ শ্লোগান উঠুক---
‘‘নীতিবাদীরা এক হও, জাগাও মানবতা নাশ দানবতা৷’’
মনে হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রটাই যেন কোটি কোটি জনগণকে শোষণ করার যাঁতাকল৷ কৃষি প্রধান ভারতে ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাষ্টের পর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোর যা করা উচিত ছিল তা হলো ভূমি সংস্কার, কৃষিজমি খণ্ডীকরণ রোধ, আর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির সরকারের পক্ষ হতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ আবাদ করা যাতে দেশের গরিব মানুষরা দু’বেলা খেতে পান৷ আর রেশনিং ব্যবস্থাকে উন্নত ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা৷ বেকার সমস্যা দুরীকরণ করা সেসব কিছুই হয়নি৷ শুধু হয়েছে ধনী ব্যবসাদারদের পোয়াবারো৷ সরকারে বসে কোষাগার শূন্য করা বিভিন্ন খাতে অর্থ অপচয় করা৷ তাই দেশের এই দুর্দশা চরম দুর্নীতির কারণে৷ এইগুলিই হলো সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে শাসকদলের উন্নয়নের নামে দেশ সেবা! সবকিছু বুঝেও যদি শিক্ষিত চিন্তাশীল দেশবাসী নীরব থাকেন তাহলে আগামী দিনগুলি হয়ে উঠবে ভয়ঙ্কর৷ নোংরা দলবাজিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে দেশবাসীকেই৷ এগিয়ে আসতে হবে সৎ নীতিবাদী তরুণ তরুণীদের৷
- Log in to post comments