ত্রিপুরায় বিজেপি গত চার বছর আগে একটি স্লোগান,‘‘চলো পাল্টাই’’এর মাধ্যমে সরকারে এসেছিল৷ আজ আমরা ভুলেই গেছি তিন দশকের সিপিএম সরকারের হারমাদ বাহিনীর সন্ত্রাস তৎসহ দানবীয় শাসন ব্যবস্থার হাত থেকে মুক্তি পেতে পাশাপাশি ত্রিপুরার অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে ত্রিপুরাবাসী, চলো পাল্টাই, বলেছিলাম৷ আজ ত্রিপুরার মানুষের সেই আশা কী পূরন হয়েছে?
আবার কয়েক মাস পর আর একটি বিধানসভার নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক দল কোমর বেঁধে মাঠে ময়দানে নেবে পড়বে বা পড়ে বলছে--- আমরাই সাচ্চা দেশসেবক, আমরাই ত্রিপুরার উন্নয়ন করবো৷ কিন্তু উন্নয়নটা আসবে কোথা থেকে কিভাবে? নেতাদের কাছে শুধু বস্তাপচা রাজনৈতিক বুলিছাড়া আর কিছু নেই! যখন কোন অর্থনৈতিক সমাধান নেই, তখনই বাঙালী ও জনজাতির মধ্যে বিভাজন করো আর ত্রিপুরার সম্পদ লুটে পুটে খাও আর পার্টি বাঁচাও৷ জনজাতিদের ছোট দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রথমে কংগ্রেস, সিপি.এম এরপরে বিজেপির সরকার ত্রিপুরার মানুষ প্রত্যক্ষ করল, কিন্তু ভোটাধিকার ও রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ধোঁকাবাজি ছাড়া কি পেল? এটা সবারই জানা!
ভারতের সব রাজনৈতিক দলগুলির কাছে অর্থনৈতিক সমাধান, ‘ভাড়ে মা ভবানী’৷ বস্তাপচা পুঁজিবাদী অথবা আস্তাকুঁড়ে পড়ে থাকা মার্ক্সীয় তত্ত্ব ছাড়া কিছুই নেই৷ এদের আর একটি দিক আছে যার দ্বারা সমাজের মানুষকে কর্মহীন করার কৌশল যাহা শুধু পার্টির স্বার্থে৷ মানুষকে কর্মের অনুপ্রেরণা না দিয়ে বিকলাঙ্গ করার খয়রাতি (বিনে পয়সায় চাল গম ইত্যাদি) দিয়ে যাও, যাতে চিরকাল পার্টির গোলামী থেকে মুক্তি না পায়৷
ত্রিপুরার মানুষ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কিছু পাওয়ার রাজনীতিটা ভালোই বোঝে৷ কিন্তু সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি করার কোন প্রয়োজন বোধটুকুই নেই৷ সেটাই ত্রিপুরার দুর্ভাগ্য যেখানে অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী থেকে নুন আনতে পানতা ফুরায় সকল জনসাধারণই সামিল৷ ত্রিপুরায় বহু বছর ধরে আমরা বাঙালী দল মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের যুগান্তকারী সামাজিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দর্শন ‘প্রাউট’ বা প্রগতিশীল উপযোগ দর্শন কে অবলম্ব করে সার্বিক কল্যাণে আন্দোলন করে আসছে৷ ত্রিপুরার মানুষ আজ দরিদ্র হতে পারে ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্য ত্রিপুরা দরিদ্র নয়৷ এখানের মাটির উপরে ও নীচে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা৷ কিন্তু এই সম্পদের যথাযথ উপযোগ গ্রহণ করে ত্রিপুরাবাসীকে দারিদ্র্যের অপমান থেকে মুক্ত করার কোন প্রচেষ্টা আজ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে দেখা যায়নি৷ তাই আজ আমরা বাঙালীর আহ্বান প্রতিটি ত্রিপুরাবাসীর কাছে মহান ত্রিপুরার এই সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার করে সমৃদ্ধশালী মহান ত্রিপুরা গড়ার সঙ্কল্প নিন৷ আগামীতে শ্লোগান দিন--- রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ধোঁকাবাজি আর নয়, চাই অর্থনৈতিক গণতন্ত্র৷ ত্রিপুরার বাঙালী জনজাতির মধ্যেকার বিভেদকামী রাজনৈতিক ধোঁকাবাজি বন্ধ হোক, ঘরে ঘরে বেজে উঠুক ঐক্য বা মিলনের শঙ্খধবনি৷ ত্রিপুরাবাসী মানেই মহামিলনের তীর্থভূমি মহান ত্রিপুরার আমরা সবাই নাগরিক৷
প্রাউট চায় ঘরে ঘরে আর্থিক সাবলম্বন, তাকে গড়তে হলে চাই শিক্ষান্তে স্থানীয় যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান, স্থানীয় মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতির পূর্ণ মর্যাদা, অর্থ ও সম্পদের বহিঃস্রোত বন্ধ করা, কৃষিকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়া, প্রতি ইঞ্চি জমিতে জলসেচের ব্যবস্থা করা, কৃষি সহায়ক ও কৃসিভিত্তিক শিল্পের পরিকল্পনা সঙ্গে বাস্তবায়ন, শিল্পে, কৃষিতে, উৎপাদন, বন্টন ব্যবস্থায় সমবায়ের প্রতিষ্ঠা, ব্লক ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় বহিরাগতদের অধিকার লোপ ও স্থানীয় মানুষের অধিকার,সরকারীসহ বেসরকারী কাজে ও যোগাযোগে বাংলা ভাষার ব্যবহার, শিক্ষার পরিচালনা শিক্ষানীতি ও নির্ধারন রাজনীতিমুক্ত করে শিক্ষাবিদদের হাতে তুলে দেওয়া, বিচার ব্যবস্থা, মানবিক মূলবোধের মাধ্যম বিশ্বৈকতাবাদ ও নব্যমানবতাবাদের প্রতিষ্ঠা, প্রগতিশীল সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি৷
সামাজিক-অর্থনৈতিক-গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো তৈরী করতে মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের সামাজিক অর্থনৈতিক দর্শন, ‘প্রাউট’ই একমাত্র সকল সমস্যার সমাধানের মকরধবজ৷ ত্রিপুরার মানুষের প্রয়োজন রাজনৈতিক কচকচানি না করে প্রাউই দর্শনকে জানুন, পড়ুন, পড়ান ও ব্যবহার করার জন্যে সঙ্কল্প নিন৷
- Log in to post comments