সম্প্রতি আমেরিকর এক শহরে বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন রাজ্য সরকারের আর্থিক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমিত মিত্র৷ সেখানে এক প্রবাসী বাঙালী শিল্পপতি শ্রীমিত্রের কাছে অভিযোগ করেন--- বাঙলায় শিল্পস্থাপন করতে গেলে কেন্দ্রের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না৷ তাঁর আরও অভিযোগ নির্দিষ্ট কিছু রাজ্যে শিল্প গড়তে বিশেষ আগ্রহ কেন্দ্রীয় সরকারের৷ ভারত সরকারের বাঙালী বিদ্বেষী আচরন পশ্চিমবঙ্গবাসীর গা-সওয়া হয়ে গেছে৷ কিন্তু যখন সুদূর আমেরিকা থেকে প্রবাসী বাঙালীর কাছ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বাঙালী বিদ্বেষী আচরণের অভিযোগ শুণতে হয় তবে তার ফল একদিন মারাত্মক হতে পারে! পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে এ-এক বিপজ্জনক বার্ত
বঙলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ স্বাধীনতার পর মুহুর্ত থেকেই৷ শুধুই বঞ্চনাই নয়, বাঙলার উন্নত শিল্প সাহিত্য সংসৃকতিকে ধ্বংস করতে বহিরাগত নিম্নরুচির হীন সিনেমা, নাচ, গান, বাঙলায় অনুপ্রবেশ করেছে৷ এর পিছনেও শিল্পের স্বাধীনতার নামে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচ্ছন্ন মদত আছে৷ তাদের উদ্দেশ্যও অনেকটা সাধিত হয়েছে৷
বাঙালী সত্যিই আজ ভারতে বিপন্ন জনগোষ্ঠী, যদিও কৌশলে এর জন্য বাঙালীকেই দায়ী করা হয়, তবু এর পিছনে আছে সুগভীর ষড়যন্ত্র৷ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার নামাবলি গায়ে দেশীয় সাম্রাজ্যবাদী শোষণের যুগ শুরু হয়৷ তখনও ক্ষুদ্র খণ্ডিত পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষের অন্যান্ন রাজ্যের থেকে অনেকটাই অগ্রসরমান ছিল৷ পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে তখনও বেশ কয়েকজন বাঙালী শিল্পপতি ছিল৷ কিন্তু একদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনাও দেশীয় সাম্রাজ্যবাদী শোষকের ষড়যন্ত্রে অর্থনীতি, শিল্প সাহিত্য সংসৃকতি সর্বক্ষেত্রে বাঙালী উৎখাত শুরু হয়৷ সেই বঞ্চনাও আজ চরম সীমায় পৌঁচেছে৷ এই পরিস্থিতিতে সুদূর আমেরিকা প্রবাসী বাঙালী শিল্পপতির কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাঙলার প্রতি বঞ্চনায় নূতন মাত্রা যোগ করবে৷
স্বাধীনতায় পরমূহূর্ত থেকেই কেন্দ্রের বঞ্চনার শুরু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন, শিল্প বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রে৷ এন.আর.সি, সিএএ-এর মতো বিপজনক আইনও মূলত বাঙালী অধূ্যষিত অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ৷ এই পরিস্থিতিতে সূদূর আমেরিকা প্রবাসী এক বাঙালী শিল্পপতির কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাঙালী বিদ্বেষের অভিযোগ বাঙালী জনমানসে ক্ষোভের সৃষ্টি করবে৷ দীর্ঘ ৪৫ বছর পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতা কেন্দ্রীয় শাসকদলের নাগালের বাইরে৷ এর একটা অন্যতম কারণ যে দলই কেন্দ্রে শাসন ক্ষমতায় আসে বাঙালী বিদ্বেষী নীতি কেউ বদলায় না৷
কেন্দ্রীয় শাসকদলের এই মানসিকতা পরিবর্তন না হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নড়বড়ে হয়ে যাবে৷ এমনিতে কেন্দ্রের বর্তমান শাসক দলের এক রাষ্ট্রের দোহাই দিয়ে কখনও একভাষা, এক শিক্ষানীতি ইত্যাদি নানা ধরনের মন্তব্য ভারতের বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ক্ষোভের সৃষ্টি করে৷ তার ওপর সুদূর আমেরিকা থেকেও যদি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বাঙালী বিদ্বেষের অভিযোগ আসে তবে তা ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ক্ষেত্রে এক বিপদজনক বার্ত৷ তই অবিলম্বে কেন্দ্রীয় শাসক দলের মানসিকতা পরিবর্তন করে প্রতিটি রাজ্যের প্রতি সমমনভাবাপন্ন হওয়া উচিত৷
- Log in to post comments