যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় ভারতের গণতন্ত্র সত্যই বড়োই সংকটের সম্মুখীন

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতের বহুদলীয় গণতন্ত্র আমাদের দীর্ঘ ৭০ বছরে একটা শিক্ষা দিয়ে চলেছে  তা হলো দেশ ও জাতির কথায় গুলি মেরে কি করে ছলে বলে আর কৌশলে দলকে ও দলের মহান নেতা-নেত্রীদের গদীতে বসানো যায় আর সেই সুযোগে  নিজেদের  আখের কামিয়ে জনগণের শ্মশান যাত্রার পথকে সুগম করা যায়৷

মনে পড়ে তখন আমরা সব নিতান্তই শিশু৷ জন্মভূমিকে টুকরো টুকরো করে মেকী স্বাধীনতা দেশে এলো কিছু মেকী রাজনৈতিক নেতাদের আকাঙ্খা পূরণের জন্য! তার জন্য দেশবরেণ্য নেতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ যেন বিফলে গেল! হতভাগ্য দেশের  গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্তের পরিবারের বিশেষ করে অহিন্দুদের (মুসলমানদের) সাম্প্রদায়িক হিংসাশ্রয়ী  দাঙ্গায় হাজার হাজার নরনারী ও শিশু অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে,উদ্বাস্তু হয়ে পথের ভিখারী হয়ে জন্মভূমি ছেড়ে হিন্দুস্থান (ভারতে) আসতে হয়েছে৷ যার রেশ আজও কাটেনি৷ আজ জম্মু-কাশ্মীরে পাকিস্থানী হামলা চলেছে৷ এদিকে পূর্ব বাংলার অজস্র হিন্দু ও অমুসলমান বিতাড়িত হয়ে এদেশে নিঃস্ব হয়ে আশ্রয়  নিয়েছে৷ তাদের অনেকে আজও অসম নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও বিহার, উড়িষ্যায় দিনযাপনের গ্লাণি বহন করে চলছে৷

অখন্ড  বাংলাকে সেই ইংরেজ আমল থেকে টুকরো টুকরো করে বিহার, উড়িষ্যা ও অসমে ঢোকানো হয়েছে৷ শেষে যে টুকরোটা পশ্চিম বাংলা নামে খ্যাত সেটার ওপর অকথ্য অত্যাচার ঝুলুম চলছে আজও৷ সে রাজনৈতিক দল আগে৷ দু’চারটে ছিল সেইগুলির নেতা ও নেত্রীরা নানা কারণে  বহু নামে ও বহু দলে বিভক্ত হয়ে কয়েকশো   দল ও উপদল গড়েছে৷ এর মধ্যে কিছু দল প্রথম থেকে পরিবার কেন্দ্রিক হয়ে আছে সেই অতীতের রাজা-মহরাজাদের বংশানুক্রমের মতই৷ বর্ত্তমানে আঞ্চলিক দলগুলিই প্রবল, জাতীয় দল টিম টিম করছে নাম মাত্র দু’চারটে৷

বর্ত্তমানে জাতীয় বলতে বোঝায় কংগ্রেস যেটি ইন্দিরা সৃষ্ট, বিজেপি, আর কিছু দল নিজেদের  জাতীয় দল বলে প্রচার করে , যেমন ক্ষয়িষ্ণু কমিউনিষ্ট (মা) দল কিছু কিছু আঞ্চলিক দ সর্বভারতীয় হিসাবে চিহ্ণিত হওয়ার চেষ্টা করছে  কিন্তু হতে পারেনি৷ তাই স্বাভাবিক কারণে আঞ্চলিক   দলগুলির কিছু নেতা ও নেত্রী সহমতের ভিত্তিতে মিলিত হয়ে এ্যালায়েন্স বা ফ্রন্ট গড়ে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে অস্তিত্ব রক্ষায় সচেষ্ট৷

উত্তর ভারতের হিন্দি বলয় দক্ষিণে তেমন করে রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারছে না৷ হিন্দিবাদীদের হিন্দিভাষা নিয়ে যে গোঁড়ামী সেটাকে দক্ষিণ সহ্য করতে পারছে না  বলেই এরা একেবারে আঞ্চলিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে চলছে৷ দক্ষিণে ডিএমকে, এ আই ডিএমকেই প্রবল৷  পূর্বভারতেও-আঞ্চলিকতার প্রভাব আছে৷ ওডিশায় বিজু জনতা দল নেতৃত্ব দিচ্ছে৷ পশ্চিমবঙ্গে বামদল সরে গেছে এসেছে তূণমূল এটি আঞ্চলিক দল৷  অসমে জোড়াতালি দিয়ে চলা অসম গণ পরিষদ নেতৃত্ব দিতে পারেনি৷ বর্তমানে বিজেপি শাসন কব্জা করেছে৷ পাহাড়ে আঞ্চলিক দলই শক্তিশালী৷ ত্রিপুরায় সিপিএম শাসনে আছে৷ অরুণাচলে কংগ্রেস৷ পশ্চিমে কংগ্রেস ও বিজেপির শাসন কায়েম আছে অধিকাংশ রাজ্যে৷ বিহারে লালু ও নীতীশ কুমারের মিলিজুলি সরকার ৷ উত্তরপ্রদেশে ও উত্তরাখন্ডে  বর্ত্তমানে বিজেপি৷  কেন্দ্রে বিজেপি শাসনে প্রায় তিনবছরে এই সরকার তেমন কিছুই সেবা দিতে পারেনি৷ কিছু গাল ভরা শ্লোগান দিয়েছে শ্রীমোদি মাত্র৷ তিনি বিদেশ ভ্রমণে সদা ব্যস্ত৷ ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যে শাসন ব্যবস্থা চলছে সেটা মোটেই আশান্বিত নয়৷ কর্মসংস্থানের কোন দিশা নেই এই সরকারের নেই ডিমনিটাইজেশন করে দেশকে  পঙ্গু করে ছেড়েছে তার উপর এক কর ব্যবস্থা জিএসটি রাতের অন্ধকারে চালু করে৷ সেই আর্থিক সংস্কারের মতই জনগণকে লোভী ব্যবসাদারদের মুখে ছেড়ে দিয়েছে৷ বাজারে  যে যেমন পারছে জিনিসের দাম নিচ্ছে৷ করব্যবস্থায় অদ্যবধি  সঠিকভাবে কোন জিনিসের উপর দাম নির্দ্ধারিতই হয় নি৷ মোদ্দা কথা হল  বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এই ধরণের ব্যবস্থা যে অচল সেটা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শ্রীমোদী অতীত ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সেটাকে চালু করলেন কি করে? এটাই আজ সকলের মুখে৷

কেন্দ্রীয় সরকার চারিদিকে অস্থিরতাকে জাগিয়ে তুলছে৷ যেমন সরকারের ‘‘গোনীতি’’ একটি হাস্যকর সিদ্ধান্ত৷ এতে একটি বৃহৎ সম্প্রদায়  আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে খুবই অসুবিধায় পতিত হয়েছে৷ যেটাতে এরা হাত দিচ্ছে সেটাই নোতুন সমস্যাকেই ডেকে আনছে৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে কোনো রাজ্যে হিংসা, হত্যা, লুটতরাজ ,বন্ধ্ যদি এক নাগাড়ে চলে তা হলে রাজ্যকে সাহায্য করাটা জরুরী কর্ত্তব্য৷ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় কেন্দ্রীয় সরকার যেন ইচ্ছাকৃত ভাবেই দার্জিলিং এর হত্যাকান্ড-বন্ধ্ , অফিস, ঘরবাড়ি পোড়ানোকে বন্ধ করতে কোন নজরই দিচ্ছেন না৷ সেখানকার এম.পি  আলুওয়ালিয়া শান্তি স্থাপনের কোন ইঙ্গিতই দিচ্ছেন না৷  তিনি  বিদেশী নেপালীদের যারা গোর্খার  মুখোশ পরে ভারতের বুকে অসাংবিধানিক কাজ করছে তাদেরই নীরবে ইন্ধন জোগাচ্ছেন৷ এদিকে বিজেপি দল সারা রাজ্য এমন সব কান্ড করছেন যাতে মনে হয় এ রাজ্যের  দুঃখে ও বিপদে তাদের ঘুম চলে গেছে৷

তাদের নেতারা বলেই  চলছেন যে শ্রীকেশরী তাঁদেরই সৈনিক৷ অর্র্থৎ তিনি মনে করলে রাজ্য সরকারকে এখনই ফেলে দেবেন৷ তাইতো তাঁরা রাজ্যপালের কাছে ধর্র্ণ দিচ্ছেন এরাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনজারি করার জন্য৷ বিদেশী নেপালীদের  উস্কিয়ে  বিজেপি দল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী যারা ভারত ভাগের চক্রান্তে লিপ্ত তাদেরই হাত শক্ত করছে তাদের মোটাবুদ্ধি ইচ্ছাকৃতভাবে বুঝেও বুঝছেনা৷ এটাকেই বলে নোংরা দলবাজী৷

 তারা সত্যই কি চায়? তারা কি চায় এখানে  চীন,পকিস্তান ও নেপাল এক হয়ে হিমালয়ের নিম্নাঞ্চলে বৃহৎ নেপালী গোর্খাল্যান্ড তৈরী করুক? গোর্খাদের রাজাকে তো নেপালে নেপালীরা উৎখ্যাত করে স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের এর জন্ম দিয়েছে৷ ওই সমস্ত নেতা ও নেত্রীরা কি জানেন না শোনেন নি ?  এতে কি শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতি হবে? মনে হয় অদূর ভবিষ্যতে ভারতেরই ভয়ঙ্কর  ক্ষতি  হবে , যদি গোর্খা নামধারী নেপালীদের আন্দোলনকে কঠোর  হস্তে অবিলম্বে না নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ বিজেপি সরকার দার্জিলিংয়ে শান্তি স্থাপনে কেন সি.আর .পি পাঠাচ্ছেন না?  এটা অবিজেপি রাজ্য সরকার বলেই কি এতোটা গরিমসী? এতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার চরম দলতন্ত্রের নোংরামীটাই প্রকাশিত কি হচ্ছে না ?

 (দেশের ঐক্যসংহতি রক্ষায় কেন্দ্রেরই দায়ই বেশী৷ স্বাধীন  ভারতের বুকে এক দল অনুপ্রবেশকারী যারা মিত্র রাষ্ট্রের বাসিন্দা তারা বুক চিতিয়ে হুংকার দিচ্ছে এই বলে যে তারা গোর্খাল্যান্ড ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা করতে  সম্মত নয়৷  এই উক্তিটাই তো বৃহৎ গণতান্ত্রিক  রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে চরম অপরাধ৷

পৃথিবীর কোন স্বাধীন দেশে এমন ভয়ঙ্কর  আওয়াজ কেউ কোন দিন শুণেছে?  এদেশের কিছু রাজনৈতিক দল দীর্ঘ  প্রায় ৪০ বছর ধরে এদের উষ্কানী দিয়ে দেশের ক্ষতি করে চলেছে যেটা সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী৷

 শাসক দলগুলিকে মেরুদন্ড সোজা করে দেশের কল্যাণের কথা ভেবেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে রক্ষা করতে হবে৷ আন্দোলনকারীদের  ভয়ঙ্কর অসভ্যতাকে রুখে  দিতেই হবে৷

আজ ভারতে বহু দলীয় গণতন্ত্রের এটাই  ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক দিক৷ সবার উপরে দেশের ঐক্য সংহতি, তারপর অন্য কথা৷

তেলেঙ্গানার মাননীয় বিধায়ক বিজেপির শ্রী রাজা সিং হঠাৎ বাংলাকে গুজরাত করার ডাক দিয়েছেন৷ বাঙালীরা জানে কখন কী করতে হয়৷ তাঁর স্মরণে রাখা দরকার ‘‘আজ বাংলা যা ভাবে কাল ভাবে ভারত৷’’ ভাইকে দিয়ে  ভাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করাটা তো ভাইয়ের কাজ নয় , ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে  সকল ভারতবাসীকে এটা স্মরণে রাখতে হবে ৷ তাই এম এল এ সাহেবের এ ধরণের উষ্কানী দেওয়াটা চরম অপরাধ ৷

Comments