আগামী ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা হবে রাশিয়ায়৷ ২০১০ সালে স্পেন, পর্তুগালকে হারিয়ে ২২০১৮-র বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পায় রাশিয়া৷ আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম দেশে ২০১৮ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে৷ রাশিয়ার প্রেসিডেণ্ট ভ্লাদিমি পুতিন জানিয়েছেন রেকর্ড পরিমাণ অর্থ খরচ করে বিশ্বকাপ ফুটবলকে বেশ জাঁকজমকভাবে আয়োজন করবে রাশিয়া৷ মস্কোর ১৩টি শহরের মোট ১৬টি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলি অনুষ্ঠিত হবে৷ অত্যাধুনিক স্টেডিয়ামগুলোতে যেমন খেলা সরাসরি দেখবেন দর্শকরা তেমনি সারা বিশ্বের প্রতিটি কোনে কোনে সম্প্রচার করা হবে বিশ্বকাপ৷
২০১৪-র চ্যাম্পিয়ন জার্মানি তো ২০১৮তেও শক্তিশালী দাবীদার হবেই৷ তাছাড়া ইতালি, আর্জেণ্টিনা, পর্তুগাল, ব্রাজিল এমনকি এশিয়া-আফ্রিকার কয়েকটি দলও বেশ ভালভাবে প্রস্তুতি পর্ব সেরে নিচ্ছে এই মহারণে অংশ নেবার পূর্বে৷ নতুন বছরের শুরু হতেই ফুটবল বিশ্বকাপের দামামা বেজে উঠবে৷ চেষ্টা চলছে ৪০টি দল নিয়ে প্রতিযোগিতা করার৷ ফিফা অবশ্য ৩২টি দল নিয়েই ফাইনাল পর্বের বিশ্বকাপ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে চায় রাশিয়াকে৷ অনেক দূরে থাকলেও কলকাতাতেও এর আঁচ লাগবে৷ মোট কথা এই ইণ্টারনেট যুগে বিশ্বের কোণে কোণে বিশ্বকাপ ফুটবল মহারণ এক আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়াবে৷
ফুটবল বিশ্বকাপ হয়ে থাকে প্রতি চার বছর অন্তর৷ তাকে এখন বলা হয় ফিফা ওয়াল্ড কাপ৷ ফিফার সাংঘটনিক প্রতিনিধি বিজয়ী দলকে ফিফা ওয়াল্ড কাপ প্রদান করেন৷ নিয়ম হচ্ছে বিজয়ী দলটি পরবর্তী বিশ্বকাপের পূর্ব পর্যন্ত সেই কাপটি নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারেন৷ বিশ্বকাপ শুরু হবার কিছুদিন আগে সেই কাপ সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি দেশ পরিভ্রমণ করে৷ নির্দিষ্ট সময়ে আয়োজক দেশের কাছে ফিফা ওয়াল্ড কাপ পৌঁছে যায় প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে তুলে দেওয়ার জন্যে৷ আর ফিফার পক্ষ থেকে পূর্ববর্তী বিজয়ী দলের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় একটি স্মারক ওয়াল্ড কাপ৷ বিশ্বকাপ ফাইনালে যে দল জয়লাভ করে সেই দলের ১৫ জন ফুটবলারকে দেওয়া হয় সোণার মেডেল, আর বিজিত দলের ১৫ জনকে দেওয়া হয় রূপোর মেডেল৷ তৃতীয় স্থানাধিকারী দলের ১৫ জন খেলোয়াড় পায় ব্রোঞ্জের মেডেল৷ চতুর্থ স্থানাধিকারী দলও পুরস্কার পায়৷ এছাড়া ফাইনালে যে সকল রেফারিরা খেলা পরিচালনা করেন তাদের জন্যেও থাকে পুরস্কার৷ যাঁরা বিশ্বকাপ ফুটবল খেলান অর্থাৎ রেফারী, সহকারী রেফারীরা পোষাক ও খেলা পরিচালনার জন্যে যাবতীয় সরঞ্জাম ফিফার পক্ষ থেকে পান৷ তাঁদের অবশ্যই সেই সব সরঞ্জাম খেলা পরিচালনার সময় ব্যবহার করতে হয়৷
গত বিশ্বকাপে চূড়ান্ত পর্বের খেলায় ৩২টি দল অংশ নিয়েছিল৷ তাদের আটটি ভাগে ভাগ করে প্রতিযোগিতা হয়েছিল৷ এবারেও সম্ভবতঃ ৩২টি দলকে নিয়েই ফাইনাল পর্ব অনুষ্ঠিত হবে৷ গ্রুপ পর্বে ভাগ করে লিগ পদ্ধতিতে গ্রুপের খেলাগুলি হবে৷ সেখান থেকে গ্রুপের শীর্ষস্থানে থাকা দলগুলিকে নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বের মাধ্যমে নক আউট পর্যায়ে ম্যাচগুলি হবে৷ অর্থাৎ জয়ী দলগুলি যাবে শেষ আটে ও তারপর শেষ চারে৷ এভাবেই মুখোমুখি হবে সেমিফাইনালিস্ট দুটি দল৷ সেমিফাইনালের দুটি জয়ী দল ফাইনাল খেলবে৷ গ্রুপের অনেক খেলাই একই দিনে একই সময়ে বিভিন্ন মাঠে অনুষ্ঠিত হবে৷ মোট কথা যাতে কোন দলই বিশেষ সুবিধা আদায় করতে না পারে তার জন্যে সবরকম ব্যবস্থা নিয়ে থাকে ফিফা৷
মূল পর্বে ভারত না খেলতে পারলেও কয়েকজন রেফারী বিশ্বকাপ খেলানোর জন্য আমন্ত্রণ পাবেন৷ যদিও তাঁদের রেফারী হওয়ার যোগ্যতামান পেরোতে হবে৷ তবে আমরা নিশ্চিত কয়েকজন রেফারী বিশ্বকাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেনই৷ এটাই বা কম কীসের৷ এছাড়া কিছু কিছু সরঞ্জাম ভারত থেকে রাশিয়ায় যাবে বিশ্বকাপে ব্যবহারের জন্যে৷ অর্থাৎ ভারতের কিছু কোম্পানী বিশ্বকাপে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে রাশিয়াতে কাজ করবে৷ আর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্যে কয়েকজন কোচ, খেলোয়াড়কে সরকারের পক্ষ থেকে রাশিয়াতে পাঠানো হবে৷ পরবর্তীকালে সেই অভিজ্ঞতা আমাদের ফুটবলের উন্নতিতে কাজে আসবে৷ আর ভারত থেকে যাবেন প্রচুর সাংবাদিক যাঁরা বিশ্বকাপ কভার করে বিভিন্ন মাধ্যমে বিশ্বকাপটা আমাদের চোখের সামনে এনে দেবেন৷ এতেই মাতোয়ারা হবে ফুটবল পাগল মানুষেরা৷ আমরা দেখব পাড়ায় পাড়ায় ব্রাজিল, আর্জেণ্টিনা, জার্মানির পতাকা৷ সেই সব দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হবে, মাতামাতি হবে৷ মনে হবে যেন বিশ্বকাপটা আমাদের দেশেই সংঘটিত হচ্ছে৷ আসলে হুজুগে বাঙালী ফুটবল নিয়ে মাতামাতি করবে না---এমনটা হতে পারে না৷ মোট কথা ভারত বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলুক বা না খেলুক---বিশ্বকাপ নিয়ে বাঙালীর মাতামাতি চলবেই৷
- Log in to post comments