আগামী নির্বাচনে সচেতন নাগরিকদের দায়িত্বশীলতা

লেখক
প্রভাত খাঁ

বামফ্রন্ট আমলে রাত্রে আমি থাকতাম নোতুন পৃথিবী পত্রিকা কার্যালয়ে৷ হঠাৎ স্থানীয় থানার একজন সাবইন্সপেক্টর  কয়েকজন পুলিশ নিয়ে রাত্রে অফিসে আসেন৷ তখন অনেক রাত আমি একটি বড়ো টেবিলে সবেমাত্র শুয়েছি৷ তখন ওনারা এসে  দরজা খুলতে বলেন৷ আমি খুলে দিই৷ তিনি কার্যালয় সার্চ করতে এসেছেন রাজ্য সরকারের নির্দেশে৷ তখন ছিল বামেদের রাজত্ব৷ আমি জিঙ্গাসা করি কি কারণে এসেছেন তদন্ত করতে৷ তখন তিনি বলেন সরকারের নির্দেশ তাই এসেছি৷ আর বলেন একটি কথা তা হলো আপনারা শাসনে এলে আপনাদের  আদেশে ও আমরা আসবো তদন্ত করতে৷ তিনি ভালো করে খুঁজে পেতে চলে গেলেন আমাদের ধন্যবাদ দিয়ে৷ সেটা ছিল বামেদের শাসন৷ আজ শাসনে এসেছেন তৃণমূল দল৷ এখন সকলেই দেখছেন এই শাসনে চরম দুর্নীতি চলছে৷ তাই দুর্নীতি নিয়ে সকল বিরোধী দলই এই দলকে পিছনে ফেলে দিতেই দুর্নীতিকেই হাতিয়ার করে এগুচ্ছে যাতে নির্বাচনে জনসমর্থন পেয়ে গদীতে আসতে পারে৷

জনগণের মনে কিন্তু একটাই প্রশ্ণ তা হলো পূর্বে যাঁরা শাসনে  ছিলেন তাঁদের সময়ে কি কোন দুর্নীতি হয়নি? তখন কিন্তু আজকের মতো কেন্দ্রের সিবিআই ও ইডির  তদন্ত হয়নি বর্তমানে যেভাবে হচ্ছে৷ মানুষ সিবিআই, ইডির নামই জানতো না৷  এদিকে অভিযুক্তরা যে দোষী তা প্রমাণ সাপেক্ষ তাই  তদন্ত চলছে মাসের পর মাস৷ আর অভিযুক্তরা জেলে আটক৷ চার্জসীটই জমা পড়ছে না৷  বিচারে দীর্ঘ সূত্রতার জন্য মহামান্য বিচারপতিগণও বিরক্ত তদন্তকারীদের  তদন্তে দীর্ঘ সময় লাগছে  বলে৷ এতে অভিযুক্তরা জামিন পাচ্ছেন না৷ দোষী বিচারে প্রমাণিত হলে তবেই তো  বোঝা যাবে দুর্নীতির সত্যতা৷ জনগণ সবই দেখছেন৷ বিরোধীদলের সরকারকে দেখা যাচ্ছে নানাভাবে এজেন্সি লাগিয়ে বাজার মাত করা হচ্ছে আর বিরোধীরা সেটাকে হাতিয়ার করে নির্বাচনে বাজিমাৎ করতে চাইছে৷ কিন্তু দুর্নীতির  ফলাফল-এর মধ্যে দেখা যাবে না কতটা বিচারে অভিযুক্তগণ অপরাধী৷ বিরোধীদলের কাজ কিন্তু গণতন্ত্রে সাধারণ মানুষের  পাশে থেকে সেবামূলক কিছু কিছু  কাজ করে যাওয়া৷ এদেশের বিরোধীগণ সেদিকে পা বাড়ান না৷  দুর্নীতি ও কুৎসাকে প্রচার করে  দলগুলি উদ্দেশ্য সিদ্ধি অর্থাৎ বোট পেয়ে গদী লাভে স্বপ্ণে বিভোর৷ তাই বলা হয় কেন্দ্র সরকার কি ডবল ইঞ্জিন সরকার এর শাসন ব্যবস্থা কী একেবারে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন? টাকা দিয়ে যারা চাকরী পেয়েছেন তাঁরা কি সুনাগরিক? তাঁরা টাকা দিয়ে কোন অপরাধ করেননি? এতে প্রকৃত উপযুক্ত ব্যষ্টিরা তো কোনদিনই চাকুরী পাবেন না৷ আর পেতে হলে সেই মামলা করে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে পেতে হবে সেটা মেধাবী গরিব রা পারবেন না৷ এতে শিক্ষারই কোন গুরুত্ব থাকবে না৷ এই কারণে  এদেশে শিক্ষার মান নীচে নেমে গেছে৷

গণতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা যা নাগরিকদের ধৈর্য্য ও সংযম শেখায়৷ বিচারকদের বিচারের জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করতেই রায় না বেরুন না পর্যন্ত৷ দেখা যাচ্ছে এদেশে সেটারই অভাব৷ সংবাদ পত্রের সংবাদে মানুষও বিরোধীদলের নেতারা অভিযুক্তদের প্রতি নিজেরাই এমন ব্যবস্থা করে যেটা অত্যন্ত লজ্জাজনক৷ তাদের দিকে জুতো পর্যন্ত ছোঁড়েন৷ যাঁরা তাঁদের  পাহারা দিয়ে নিয়ে যান তাঁরা ও তেমন তাঁদের নিরাপত্তার প্রতি সচেতন নন৷ অন্য স্বাধীন দেশে কিন্তু  সেটা হয় না৷ তাছাড়া বিচার হয় ঘরই তাড়াতাড়ি৷ এদেশ মামলা যে কতো দিন  চলবে তা কেউ জানেন না৷ সাধারণ মামলাও দেখা যায় ৮/১০ বছর  লেগে যায়৷ আর দেওয়ানী মামলা যে কতো বছর লাগে তার হিসাবই নেই৷ যাই হোক  গণতন্ত্রে কিছুকে খেলো করে দেখাটা উচিত নয়৷ তাই জনগণও সব জানেন ও বোঝেন তাই খবরের সংবাদে কিছু স্বার্থন্বেষী হইচই করে থাকেন বটে তাতে জনগণ তেমন কানই দেন না৷ কংগ্রেস আমলে কি যে হয়েছে অত্যাচার তা বয়ষ্কগণ জানেন৷ তাই সেইদল আজ টিম টিম্‌ করছে৷ বামদল,  তো দীর্ঘ শাসন  করে যেভাবে  কঙ্কালসার হয়েছে তা  তাঁরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন৷ জনগণ আজ চিন্তিত বিরোধীদলগুলির সংকট দেখে৷ তৃণমূল শাসনে দলের নেতানেত্রীদের জনসংযোগ করতে আদেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী আর ধৈর্য্য ধরে নাগরিকদের কথা শুণে অভাব অনটন দূর করার চেষ্টা করতে বলেছেন৷