অগ্ণিযুগের কথা

লেখক
পথিক বর

১৯৩০ সাল, অগ্ণিযুগের বাংলা৷ আজকের মত রাজনীতি মানে বিনে পয়সার মূলধনে করে খাওয়ার উপায় নয়৷ আজ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্র-যুব-তরুণদের সঙ্গে সেদিনের স্বাধীনতার জন্যে উৎসর্গীকৃত রক্তের অক্ষরে শপথ নেওয়া বিপ্লবী তরুণবৃন্দের তুলনা চলে না৷ আজ রাজনীতি মানে স্বার্থের সংঘাত, সীমাহীন লোভ-লালসা চরিতার্থ করার মঞ্চ৷ আর সেদিন দেশমাতৃকার চরণে---‘আগে কে বা প্রাণ করিবেক দান তারই লাগি কাড়াকাড়ি৷’

বাংলায় ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচার তখন সব রকম বর্বরতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে৷ চুপচাপ বসে নেই বাংলার বিপ্লবী তরুণবৃন্দ৷ তথাকথিত অহিংসার নামাবলী গায়ে জড়িয়ে পড়ে পড়ে মার খেতে রাজী নয় তারা৷ আঘাতের বদলে আঘাত, মারের বদলে মার---সাম্রাজ্যবাদী শাসককে তার ভাষাতেই জবাব দিতে হবে৷

সুযোগ এল ২৯শে আগষ্ট৷ ক’দিন আগেই কলকাতার ডালহৌসী স্কোয়ারে পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টকে লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়েছিল দুই বিপ্লবী তরুণ৷ অল্পের জন্যে প্রাণে বেঁচে যায় ট্রেগার্ট৷ কিন্তু জীবন দিতে হয়েছিল বিপ্লবী অনুজা সেনকে৷ এবার আর লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে চলবে না৷ ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতাল প্রাঙ্গনের এক দেবদারু গাছের নীচে অপেক্ষা করছেন মেডিক্যাল স্কুলের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র৷ এই হাসপাতালেই ভর্তি আছেন অসুস্থ পুলিশ অফিসার মিঃ বার্ট৷ তাকে দেখতে এসেছেন বাংলার ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ মিঃ জে. এফ. লোম্যান৷ তারই সঙ্গে এসেছেন ঢাকার পুলিশ সুপারিটেণ্ডেণ্ট মিঃ হডসন৷ এই পথ দিয়েই তাঁরা ফিরবেন৷ ইনি  সেই লোম্যান, যিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন বিপ্লবী শহীদ দেবপ্রসাদ গুপ্তর হাত থেকে৷ মৃত্যুর পূর্বে দেবপ্রসাদ বলে গিয়েছিলেন---‘আমার হাতটা অকেজো না হলে লোম্যানকে আমি গুলি করতাম৷’

সেদিন বেঁচে ফিরলেও আজ আর রেহাই নেই লোম্যানের৷ সঙ্গে হডসন, তাঁকেও ফিরে যেতে হবে না৷ এমন সময় সিঁড়ি দিয়ে নাবতে দেখা গেল দুজনকে৷ প্রস্তুত হলেন দেবদারু গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ ছাত্র৷ গুলির আবাজে কেঁপে উঠল হাসপাতাল প্রাঙ্গন৷ লুটিয়ে পড়লেন দুই পুলিশ অফিসারই৷ পঙ্গু দেহ নিয়ে হডসন প্রাণ ফিরে পেলেও লোম্যানকে আর উঠে দাঁড়াতে হয়নি৷ কিন্তু চারিদিকে এত পুলিশ, প্রহরী, গোয়েন্দা সবার চোখে ধূলো দিয়ে উধাও সেই তরুণ৷

এই তরুণই ছিলেন পরবর্তীকালে ঐতিহাসিক অলিন্দ যুদ্ধের মহানায়ক বিপ্লবী বিনয় বোস৷