অজীর্ণ রোগ নিজে প্রাণঘাতক নয় কিন্তু এর ফলে অনেক প্রাণঘাতক রোগের সৃষ্টি হতে পারে ও বৈবহারিক জগতে এই ব্যাধি কষায় বৃত্তিকে বাড়িয়ে দেবার ফলে মানুষ অত্যন্ত খিটখিটে হয়ে পড়ে৷ অজীর্ণ রোগ থেকে পাকস্থলীর, অন্ত্রের ও মলনাড়ীর বিভিন্ন ধরণের ক্ষত, কোষ্ঠকাঠিন্য ও জটিল আমাশয় সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা পূর্ণ মাত্রায় থেকে যায়৷
চিকিৎসা ঃ
প্রাতে ঃ উৎক্ষেপ মুদ্রা, ময়ূরাসন, পদহস্তাসন, শয়ন বজ্রাসন, আগ্ণেয়ী প্রাণায়াম৷
সন্ধ্যায় ঃ (যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য) অগ্ণিসার, দীর্ঘপ্রণাম, যোগাসন বা যোগমুদ্রা, ভুজঙ্গাসন৷ (যাদের তরল ভেদ) অগ্ণিসার ও সর্বাঙ্গাসন, আগ্ণেয়ী মুদ্রা ও আগ্ণেয়ী প্রাণায়াম৷
পথ্য ঃ পুরোনো চালের ভাত, সবুজ তরকারির ঝোল, তরলভেদে দধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য চীনী সহ মহিষী দুগ্ধের ঘোল৷ মনে রাখতে হবে ঘোল জিনিসটা ডিসপেপ্সিয়া (অজীর্ণ) রোগীর পক্ষে বিশেষ হিতকারী৷
‘‘দিনান্তে চ পিবেৎ দুগ্ধং
নিশান্তে চ পিবেৎ পয়ঃ৷
ভোজনান্তে পিবেৎ তক্রং
কিং বৈদ্যস্য প্রয়োজনম্৷৷’’
বিধি–নিষেধ ঃ আহারে বৈষম্যের ফলে অজীর্ণ রোগের সৃষ্টি৷ অক্ষুধায়, অল্প ক্ষুধায় আহার করা, দিনের পর দিন গুরুপাক (rich) খাদ্যগ্রহণ, নেশার জিনিস ব্যবহার করা, সুস্বাদু খাদ্য বস্তু পেয়ে লোভের বশে মাত্রাধিক খাওয়া, আহারের পরে বিশ্রাম না নিয়েই কার্যালয়ের দিকে ছোটা, সম্পূর্ণ উদর পূর্ণ করে খাওয়া (শাস্ত্র মতে অর্ধাংশ খাদ্য, এক চতুর্থাংশ জল ও এক চতুর্থাংশ বায়ু, গমনাগমনের জন্যে খালি রাখা উচিত), শারীরিক পরিশ্রম না করা ও তৎসহ মানসিক পরিশ্রম বা কামুকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া–এগুলিও রোগের পক্ষে ক্ষতিকর৷ রোগ সম্পূর্ণ না সারা পর্যন্ত সকালে বিকালে জলখাবার না খাওয়াই ভাল৷ একান্তই যদি ক্ষুধা পায় তবে রসাল টক বা মিষ্টি ফল–বিশেষ করে, ঈষদম্ল ফল যেমন আঁব, আনারস, জাম, সর্বপ্রকার নেবু, (নেবু অম্ল রসযুক্ত হলেও শরীরে এর প্রভাব ক্ষারধর্মী) ও কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে পেঁপে উপকারী৷ মনে রাখা দরকার যে নেবু, দধি প্রভৃতি অম্ল রসযুক্ত খাদ্য সর্বদাই সামান্য জল ও লবণের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে৷ রোগীর পক্ষে ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যতিরেকে সর্বপ্রকার আমিষ খাদ্যই ক্ষতিকর৷ মাংস ও ডিম বিষবৎ৷ নেশার জিনিস কোষ্ঠকাঠিন্যকে বাড়িয়ে দেয়, তাই তাও বর্জনীয়৷ এই রোগে প্রত্যহ মুক্ত বায়ুতে ভ্রমণ ও সামান্য পরিশ্রম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়৷ দিবানিদ্রা, রাত্রি জাগরণ নিষিদ্ধ৷ রাত্রির আহার আট ঘটিকার পূর্বে প্রশস্ত ও আহারান্তে অল্প ক্ষণ ভ্রমণ করা বিশেষ হিতকর৷ ডাল নিজে ক্ষারধর্মী হলেও গুরুপাক, তাই অজীর্ণ রোগে বর্জনীয়৷
খাদ্যগ্রহণ ও মলত্যাগ দক্ষিণা নাড়ী প্রবাহকালে করাই বাঞ্ছনীয় ও আহারের পরেও কিছুক্ষণ দক্ষিণাকে প্রবাহিত রাখা উচিত কারণ ওই সময় পচন ক্রিয়ার সহায়ক গ্রন্থিগুলি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ রস নির্গত হতে থাকে৷ একাদশীতে উপবাস আর পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় নিশিপালন বিধেয়৷
কয়েকটি ব্যবস্থা ঃ
১) এক আনা পরিমাণ হিং ঘিয়ে ভেজে সম পরিমাণ সৈন্ধব লবণের সঙ্গে মিশিয়ে ভোজনের প্রারম্ভে ব্যবহার করা৷
২) সাজা পাণের সঙ্গে অথবা মৌরীর সঙ্গে খড়ি–নারকোল অথবা নারকোল–কুরো ব্যবহার করা৷
৩) নুনে জারিয়ে জামির (জামেরী) নেবু ব্যবহার করা৷
৪) প্রত্যহ রাত্রে আহারের পর এক আনা পরিমাণ (কিছুতেই তার বেশী নয়) ক্কথিকাভস্ম পাণ পাতায় মুড়ে খাওয়া৷
৫) সমান পরিমাণ হরীতকী (জলে ফেললে যে হরীতকী ভেসে ওঠে ঔষধার্থে তা বর্জনীয়) ও মৌরী–চূর্ণ দ্বিগুণ পরিমাণ কাশীর চীনীর সঙ্গে মিশিয়ে বেটে কিছু দিন ব্যবহার করা৷ (‘যৌগিক চিকিৎসা ও দ্রব্যগুণ’ থেকে)
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের যৌগিক চিকিৎসা ও দ্রব্যগুণ সংক্রান্ত উপদেশাবলী থেকে গৃহীত)