আকাশ তরঙ্গ - ঐতিহাসিক নিলাম

লেখক
বরুন দত্ত

1944 সালের 26 শে জানুয়ারী,রেঙ্গুনের মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং প্রাঙ্গনে নেতাজীর সম্মানে আয়োজিত হয়েছিল এক বিশেষ সভা।   বর্মায় এটি প্রথম জনসভা, গন্যমান্য ব্যক্তি থেকে সাধারণ মানুষের মিলনে সভা তখন জনসমুদ্র । নেতাজী নামের এমন জাদু সভার প্রথমে বর্মার অধিবাসীদের তরফ থেকে নেতাজীকে একটি মালা পরানো হয় /তারপর নেতাজী প্রায় দু ঘণ্টা বলে গেলেন.....কখন যে এতটা সময় কেটে গেছে কেউ টের পায়নি--শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ ।

এবার নেতাজী মালাখানি নিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে বল্লেন --এই মালাখানি সমস্ত বর্মাবাসী মানুষের শুভেচ্ছার প্রতীক । এই হিসাবে এটি অমূল্য । কালে এটি শুকিয়ে হয়ে যাবে মূল্যহীন । তাই এই মুহূর্তে এর যথার্থ মূল্যয়নের জন্যে আমি এটি নিলাম করতে চাই । যে অর্থ পাওয়া যাবে তা দিয়ে রেঙ্গুনে খোলা হবে আজাদ হিন্দ সংগ্রহশালা । সর্বপ্রথম আকুল কণ্ঠে চিত্কার করল এক শিখ যুবক হরগোবিন্দ সিং -- 'নেতাজী,ঐ মালা আমি কিনতে চাই,এক লাখ ডলার মূল্য দেব' স্হানীয় বিখ্যাত ব্যবসায়ী ব্রিজলাল হরগোবিন্দ কে পিছনে ফেলে বলেন --'আমি চাই ঐ মালা,দাম দু লাখ ডলার'আর একজন হেঁকে ওঠেন --আড়াই লাখ । ব্রিজলাল গলা চরান --তিন লাখ ডলার--- ,;তিন লাখ দশ হাজার.....মালার মূল্য ক্রমশই উর্ধমুখি ,হরগোবিন্দ  নাছোরবান্দা চিত্কার করেন --চার লাখ । সভার জনতা হরগোবিন্দকে সমর্থন করে...ব্রিজলাল এসেছেন ব্যবসায়ী ওঅহংকারী মনে, তিনি এটাকে পরাজয় মনে করে বলেন--'তবে পাঁচলাখ এক হাজার.... হরগোবিন্দ বুঝলেন তাঁর আশা পূর্ণ হবার নয়, প্রায় সর্বস্ব পণ করেও পারলেন না ঐ পরম সম্পদের মালিক হতে... নিলাম চলতে থাকে দুই ধনকুবেরের মধ্যে, শেষে দাম উঠলো সাত লক্ষ ডলার....দিয়েছেন ব্রিজলাল... ব্রিজলাল এগিয়ে চলেছেন সম্পদটি নিতে , নেতাজী আসছেন সমর্পন করতে...ঠিক সেই মুহূর্তে আর্তকন্ঠে চিত্কার করে উঠলেন হরগোবিন্দ----- 'নে---তা---জী' ...... জনতা বললে -নেতাজীকে ডেকে কি হবে..? ক্ষমতা থাকে তো দাম বারাও... হরগোবিন্দ বল্লে -তোমার সঙ্গে আমার কথা নেই ,যা বলার নেতাজীকে বলব...নেতাজী বললেন--বলো ,কি বলতে চাও । হরগোবিন্দর চোখেতখন জল আর আগুন--- 'ভিক্খা করার ভঙ্গীতে বললেন ====="নেতাজী,সিঙ্গাপুরে আমার ক'খানা বাড়ী আছে, গ্যারাজে আটখানা ট্রাক আছে , তিনচার লক্ষ ডলার আছে , আরও হয়ত কিছু আছে--জানিনা সব যোগ করলে সাত লক্ষ ডলার ছাড়িয়ে যাবে কিনা !!!তবে এই নিলামে আমার শেষ ডাক--যেখানে আমার যা কিছু আছে,শেষ কপর্দক পর্যন্ত--সব আমি আজাদ হিন্দ ফান্ডে লিখে দিচ্ছি,---বিনিময়ে ঐ মালাখানি আমার চাই"" হরগোবিন্দর দুচেখে বর্ষার ধারা....দেহ কাঁপছে....

নেতাজীর চোখে আনন্দ...মঞ্চ থেকে নেমে এলেন,বুকে জড়িয়ে ধরলেন হরগোবিন্দকে....মালাখানি পরিয়ে দিতে গেলে হরগোবিন্দ বললেন=="আপনার গলায় মালা কি আমি গলায় পরতে পারি নেতাজী....আমার মাথায় রাখুন""!!!

ব্রিজলাল ছাড়তে চান না তার অধিকার...তাকে নেতাজী শান্ত করেন ,বলেন---বহ তো নঙ্গা ফকির বন চুকা ,ওর সঙ্গে তোমার আর লড়াই চলে না ভাই ,টাকা দিয়ে ভিখিরিকে ডিঙোনো যায় না "" এবার হরগোবিন্দ একটি আর্জি পেশ করল --নেতাজী ,আর একটি ভিক্খা,  --বলো হরগোবিন্দ--আশ্বাস দিলেন নেতাজী.... হরগোবিন্দ বললেন--'এখন গাছতলা ছাড়া আমার তো আর দাঁড়াবার স্হান রইল না , দিনে দু মুঠো গম ও তো চাই জীবন ধারনের জন্য,তাই আপনি আমাকে আশ্রয় দিন ,আজাদ হিন্দ ফৌজে ভর্তি করে নিন দয়া করে" অভিভূত নেতাজী বুকে টেনে নিলেন এই  সর্বস্ব ত্যাগী যুবককে ।