গোলাম মোস্তফা বাংলার শিক্ষক হলেও কঠিন পাকিস্তানপন্থী ছিলেন এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার পক্ষে ছিলেন। মৌলানা আকরাম খান বাংলাকে পৌত্তলিকদের ভাষা মনে করতেন। লীগ সরকারের চাপে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীক থেকে "শ্রী" শব্দটি বাদ গিয়েছিল, ওটা নাকি পৌত্তলিকতার প্রতীক। মজার কথা, এই আকরাম খান ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
একটা তেঁতো সত্যি বলি ভাষা আন্দোলন মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার থেকে হয়নি! হয়েছে স্রেফ পাকিস্তানের সরকারি চাকরি না পাওয়ার ভয় থেকে। উর্দু সরকারি ভাষা হলে পাকিস্তানের বাংলাভাষীরা সরকারি চাকরিতে পিছিয়ে পড়তো পশ্চিম পাকিস্তানি কিংবা বিহারীদের থেকে‚ তাই বাংলা চাই বাংলা চাই বলে অমন হল্লা জুড়ে দিয়েছিলো। যেটাকেই পরে রোম্যান্টিসিজমের পালিশ দিয়ে‚ গুচ্ছ গুচ্ছ কবিতা গল্প নাটকের ভেতর দিয়ে ফিল্টার করে সার্ভ করা হয়েছিল ইতিহাসের পাতায় মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন বলে।
প্রথমে ফিরিঙ্গি আমাদের বাপের দেশ দখল করে নিয়েছে। এই অভিমানে ইংলিশ শিখলোনা! ফলে ব্রিটিশ আমলে সরকারি ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়লো হিন্দুদের থেকে। যখন হুঁশ ফিরলো তখন তো আর প্রতিযোগিতা করে হিন্দুদের সমান হওয়ার সুযোগ নেই! সুতরাং বাই উঠলো ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ চাই! তাও দেওয়া হল (বেঙ্গল প্যাক্ট‚ সাম্প্রতিক বাঁটোয়ারা etc)! কিন্তু এত সংরক্ষণ দিয়েও যখন সমান হওয়া গেলোনা‚ হিন্দুরা যথারীতি এগিয়েই থাকলো তখন বায়নাক্কা উঠলো দেশভাগের। আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলো নিয়ে আলাদা দেশ চাই। (লাহোর প্রস্তাব‚ ৪০)
বহু খুন - জখম - দাঙ্গা - গনহত্যা - গনধর্ষনের দ্বারা অবশেষে দেশ ভাগ হল। এখন পাকিস্তানে হিন্দুরাই সংখ্যালঘু। বেশিরভাগ প্রাণ নিয়ে ইন্ডিয়ায় পালাল‚ বাকিদের বেশিরভাগকে মেরে কেটে ফেলা হল আর বাকিদের স্রেফ গায়ের জোরে দাবিয়ে দেওয়া হল। ফলে সরকারি চাকরিতে হিন্দুদের প্রাধান্য স্বাভাবিকভাবেই কমে গেল। কিন্তু এর মাঝে সব হিসাব গুবলেট করে দিলো পাকিস্তানের শাসকরা! এতদিন পর্যন্ত নজরুল থেকে শুরু করে জসীমুদ্দীন হয়ে প্রত্যেকে‚ each and everyone‚ বাংলা ভাষার ভেতর আরবি ফারসি ঢুকিয়ে ভাষার আক্ষরিক অর্থেই শ্রাদ্ধ করে রেখেছিলো! রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত একবার ভয়ানক খচে গিয়েছিল রক্তের যায়গায় খুন ব্যবহার করতে দেখে! কবির নামোল্লেখ না করেই এইসব ধ্যাস্টামির প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ! কই তখনতো কারও একবারও প্রান কাঁদেনি ওরে মাতৃভাষারে‚ ওরে মাতৃদুগ্ধরে বলে!
আর যেই দেখলো উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা বানিয়ে সব চাকরি বিহারী বা পাঞ্জাবিরা নিয়ে নিচ্ছে‚ এত কষ্ট করে ক্যালকাটা বা নোয়াখালী করেও কোনো লাভ হোলোনা‚ লাভের দই খেয়ে যাচ্ছে বিহারী বা পাঞ্জাবি নেপোয়‚ তখন এসে হৈহল্লা শুরু হলো মাতৃভাষা মাতৃভাষা বলে। উপচে উপচে পড়তে লাগলো বাঙ্গালা প্রেম! মিটিং মিছিল ডেপুটেশন আরও কতকিছু! আর যাদের মাতৃভাষার প্রতি উথলে ওঠা ভালোবাসা তারা নিজেদের ছেলে মেয়েদের নাম বিদেশি ভাষায় রাখে ক্যামনে ভাই? হ্যাঁ?
- Log in to post comments