আমি নারী

লেখক
অদিতি দত্তবাগ

আমি নারী,সুন্দর এই পৃথিবীর সবচেয়ে

সুন্দর  সৃষ্টি আমি

কখনও আমি জন্ম নিয়েছি মেরী কুরীরূপে

দুরন্ত মারণ ব্যাধি নিত্তপ্লাজমের  প্রতিকারে

দিনের পর দিন করেছি কাজ

আবিস্কার করেছি পোলোনি ও রেডিয়ামের

ফল স্বরূপ নিজে করেছি মৃত্যুকে আলিঙ্গন৷

কখনও আমি জন্ম নিয়েছি

সেন্ট জোয়ান অফ ?

দেশমাতাকে বন্দীদশা থেকে

মুক্ত করতে দিয়েছি প্রাণ

কখনও আমি জন্ম নিয়েছি

ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল রূপে

যুদ্ধ বিধবস্ত সেনাদের

বাঁচাতে করেছি অকাতরে সেবা

কখনও আমি বিদূষী মৈত্রী ক্ষণা লীলাবতী

কখনও বা সতীসাবিত্রী সীতা অরুন্ধুতী

কখনও ঝাঁসী রাণী কখনও শিরোমণি

কখনও কল্পনা চাওলা হয়ে

পাখা মেলেছি মহাকাশে

সাগরিকা হয়ে চলেছি হিমালয় অভিলাষে

আমিই তো সেই সাক্ষী, সিন্ধু দীপা কর্মকার

অলিম্পিকে দেশের মুখোজ্জ্বল করেছি

আমিই তো সেই শান্তির দূত মালালা ইউ সুফ

আমিই তো সেই মাদার টেরেসা

ভগিনী নিবেদিতা

আমিই তো সেই কবি কল্পনার  বনলতা

আমিই তো সেই নেতাজীর 

বিবেকানন্দের  জন্মদাতা৷

আমি সেই নারী যাকে কন্যা

সন্তান জন্ম দেওয়ার

অপরাধে সূতিকাগৃহে লাথি খেতে হয়েছে

আমিই তো সেই নারী

পণের টাকা পরিশোধ

না করার জন্য সইতে

হয়েছে কত অত্যাচার,

আমিই সেই নারী

নিজে অভুক্ত থেকে অতিথির

 মুখে অন্ন তুলে দিই

অসুস্থ পরিবার জনের পাশে

বিনিদ্র রজনী কাটাই

আবার আমিই সেই নারী

যখন ছেলে আমায় বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসে

তখন বলি বাবা সাবধানে বাড়ি যাস

ছেলেমেয়েদের ভাল রাখিস

আমি সেই নারী যাকে

বাল্য বিবাহের নাম দিয়ে

হাত থেকে পুতুল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল,

শৈশবের খেলা ছেড়ে

পালন করতে হয়েছিল

একাদশীর নিরম্বু উপবাস

আমি সেই নারী,

যাকে সহমরণের নাম দিয়ে

মৃত স্বামীর সাথে একই

চিতায় তুলে দেওয়া হয়েছিল

আগুনের প্রকাণ্ড লেলিহান

শিখা আমায় দগ্দ করেছে

চিৎকার করে আর্তনাদ করেছি

বাঁচাও বাঁচাও বাঁচাও৷

কিন্তু কাঁসর ঘন্টার আওয়াজে

সে চিৎকার  কার ওর হৃদয় স্পর্শ করেনি

আমার পূর্ণতা ষোড়শীর দর্পণে৷

পূর্ণতা মোর শত মনীষীর জন্মদানে,

আমার পূর্ণতা নিশাবশানের হুংকারে

আমার পূর্ণতা দশভূজার রণ ঝংকারে৷৷