অম্লরোগ (এ্যাসিডিটি)

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

লক্ষণ ঃ শারীরিক দুর্বলতা, অম্ল বা জল ঢ়েকুর ওঠা, মাথা ঘোরা, পেট জ্বালা, বুক জ্বালা ইত্যাদি৷

কারণ ঃ প্রাণবায়ু রূপে গৃহীত অক্সিজেন প্সপ্রম্ভন্ধন্দ্বুগ্গ উদরে গিয়ে অম্লযান বায়ুতে পরিণত ন্তুত্রব্জত্ব্প্সু–স্তুন্প্ পরিণত হয়৷ এই অম্লবায়ুর প্রেরণাতে অভ্যন্তরস্থ পাচক পিত্তরসস্রাবী গ্রন্থিসমূহ উজ্জীবিত হয়৷ দিনের পর দিন ধরে আহারে অনিয়ম ও অত্যাচার চলতে থাকলে ক্ষুধা বা অল্প ক্ষুধায় জোর করে আহার করলে বা লোভের বশে গুরুপাক খাদ্য গ্রহণ করা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেলে পাচক রসের পক্ষে গৃহীত খাদ্যকে যথাযথভাবে জীর্ণ করা সম্ভব হয় না৷ এক দিকে যেমন অজীর্ণ বা অর্ধজীর্ণ খাদ্য বিষবাষ্পে পরিণত হয় অন্য দিকে ঠিক তেমনি ক্ষরিত পাচক রসও ক্রমশঃ দূষিত অম্লে পরিণত হতে থাকে৷ পাচক রস জিনিসটা নিজে অম্লাত্মক কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় খাদ্যকে জীর্ণ কতে গিয়ে সে নিজেও জীর্ণ হয়ে যায়৷ কিন্তু উপরিলিখিত অনিয়মের ফলে তার পক্ষে খাদ্য জীর্ণ করা সম্ভব না হলে নিজেও অজীর্ণ থেকে যায়৷ দূষিত খাদ্যসৃষ্ট বিষবাষ্প ও তৎসহ এই অজীর্ণ পাচক রসের বিকৃতির ফলে সৃষ্ট দূষিত অম্লরসই অম্লরোগের (এসিডিটির) কারণ৷ এই অম্লাত্মক দূষিত বায়ু ও রস উদরে জ্বালা সৃষ্টি করে, বুকে উঠলে বুক জ্বালা করে, গলায় উঠলে গলা জ্বালা করে ও তার ঊর্ধ্বে উঠলে মাথা ঘোরে৷

এই অম্লদোষের অত্যাধিক্যের ফলে রক্ত অম্লপ্রধান হতে থাকে ও তাকে পরিশোধনের কার্যে অত্যধিক্যের ফলে রক্ত অম্লপ্রধান হতে থাকে ও তাকে পরিশোধনের কার্যে অত্যধিক ব্যস্ত থাকার ফলে রক্তশোধন যন্ত্রগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে ও রোগী দুর্বলতা অনুভব করে৷

রক্তের এই অম্লাধিক্য যখন দেহের স্থানে স্থানে (বিশেষ করে গাঁটে) স্ফীতি ও তজ্জনিত যন্ত্রণা সৃষ্টি করে তাকেই বলা হয় বাতরোগ৷

রক্তের অত্যাধিক অম্লদোষ দেখা দিলে তাকে পরিশোধনের জন্যে দেহযন্ত্রের পক্ষ থেকে যখন তীব্রভাবে চেষ্টা চালানো হয় সে অবস্থাকে অম্লশূল বলা হয়৷

চিকিৎসা ঃ (আসন ও মুদ্রা)

প্রাতে ঃ উৎক্ষেপ মুদ্রা, ময়ূরাসন, পদহস্তাসন, উড্ডয়ন, অগ্ণিসার, আগ্ণেয়ী মুদ্রা বা আগ্ণেয়ী প্রণায়াম৷

সন্ধ্যায় ঃ অগ্ণিসার, পশ্চিমোত্তানাসন, সর্বাঙ্গাসন, আগ্ণেয়ী মুদ্রা বা আগ্ণেয়ী প্রাণায়াম৷

পথ্য ঃ অম্লরোগে পুরাতন চালের ভাত, শাক–সব্জীর ঝোল (ভাজা, পোড়া বা অধিক পরিমাণ শাক–সব্জী নয়), রসাল টক বা মিষ্টি ফল বা ঘোল বিশেষ উপকারী৷ অম্লরোগীর পক্ষে দধি বিশেষ হিতকারী নয়৷

বিধি নিষেধ ঃ অম্লরোগীর পক্ষে খোলা হাওয়ায় ভ্রমণ করা, ক্ষুধা রেখে খাওয়া, অল্প অল্প করে সারাদিনে অনেকটা জল পান করা বিশেষ প্রয়োজন৷ এই রোগে নারকোল ও তজ্জাত খাদ্য ও ঔষধ বিশেষ উপকারী৷রোগীর পক্ষে জল খাবার না খাওয়াই ভাল৷ ক্ষুধা সহ্য করা কষ্টকর হলে জলখাবার হিসাবে সামান্য পরিমাণ রসাল ফল ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এই রোগে অনেক সময় এমনও হয় যে পুরাতন অভ্যাসের ফলে, পাচক রসস্রাবী গ্রন্থিসমূহ খুব বেশী পরিমাণ রস নিঃসারিত করে দেয় ও তার ফলে রোগী সময়ে অসময়ে হঠাৎ খুব বেশী ক্ষুধা (যাকে বলে রাক্ষুসে ক্ষুধা) অনুভব করে৷ তাই আমরা দেখি যে অম্লরোগী প্রায়ই অম্লের জন্যে মনমরা হয়ে থাকে বা সকলকে তার রোগেরকথা বলে বেড়ায়, সেও আহারে বসে মাত্রাতিরিক্ত খেয়ে ফেলে৷ এগুলি আসলে রোগীর পুরাতন অভভ্যাসের মত নির্দিষ্ট সময়ে পাচক রস নিঃসরণের পরিণাম৷ এই রাক্ষুসে ক্ষুধা বা অশুভ ক্ষুধা থেকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন৷ রোগীর কিছুতেই বিধি নিষেধের বহির্ভূত হওয়া উচিত নয়৷ অতিরিক্ত পাচক রস নিঃসরণের ফলে যে রাক্ষুসে ক্ষুধার উদ্ভব হয়, বড় গ্লাসের এক গ্লাস জল পান করলে সে ক্ষুধা দূরীভূত হয়৷

অম্লরোগের রোগী যখন যন্ত্রণা অনুভব করে সে সময়ে তার পক্ষে ঈষদুষ্ণ জলে কমলার রস পান করা বিধেয়৷ যন্ত্রণা প্রশমিত হয়ে যাবার পর শীতল জলে নেবুর রস পান করা উচিত৷ অজীর্ণ রোগের ন্যায় এই রোগেও আহারকালে ও তৎপরে ঘণ্টাখানেক দক্ষিণা নাড়ী প্রবাহিত রাখা উচিত৷ অম্লশূলের উৎকট যন্ত্রণার সময় যন্ত্রণার সূত্রপাতকালীন নাসাটিপরিবর্তন করে দেওয়া উচিত৷ ক্ষুধার সময় খাদ্য গ্রহণ না করে ক্ষরিত পাচক পিত্তকে সঞ্চিত হবার সুযোগ দেওয়া কিছুতেই উচিত নয় কারণ সেক্ষেত্রে এই অজীর্ণ পাচক পিত্তই অম্লরোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে৷

কয়েকটি ব্যবস্থা ঃ

১) সাজা পাণের সঙ্গে খড়ি–নারকোল অথবা মৌরীর সঙ্গে নারকোল–কুরো ব্যবহার করা৷

২) শূলরোগী যন্ত্রণায় অত্যধিক কাতর হয়ে পড়লে সমান পরিমাণ খড়ি ন্তুড়্ত্রপ্তন্সগ্গ ও আতপচাল–গুঁড়োর এক সঙ্গে পিষে (আধ) তোলা পরিমাণ খেলে যন্ত্রণার আশু উপশম হয়৷

(৩) তেঁতুল ছাল পোড়ালে সেই ছাইয়ের যে শাদা অংশটা পাওয়া যায় তার এক আনা পরিমাণ নিয়ে শীতল জলের সঙ্গে পান করা৷

৪) মাটির ৰদ্ধ পাত্রে সমান ওজনের শ্বেত আকন্দের পাতা ও সৈন্ধব লবণ একত্রে ভষ্ম করে এক আনা পরিমাণ খাওয়া৷

৫)অজীর্ণ রোগের মত অম্লরোগেও একাদশী তিথিতে উপবাস ও অমাবস্যা আর পূর্ণিমায় নিশিপালন করা বাঞ্ছনীয়৷

(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘যৌগিক চিকিৎসা ও দ্রব্যগুণ’ থেকে সংগৃহীত)