অনাহত চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রন্থি উপগ্রন্থির উপর মাইক্রোবাইটামের প্রভাব

লেখক
শ্রী সমরেন্দ্রনাথ ভৌমিক

মানবদেহের সব কটি চক্রে ও উহার সহিত সংশ্লিষ্ট গ্রন্থি সমূহের সঙ্গে মাইক্রোবাইটা দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক স্তরে কাজ করে৷ এই সম্পর্কে মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বহু তত্ত্ব দিয়েছেন, বলাবাহুল্য ‘মাইক্রোবাইটাম তত্ত্ব’ সমূহের উদ্ভব বিশ্বে এই প্রথম৷

মহাপ্রাজ্ঞ দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বে বলেছেন---

‘‘পৃথিবী দ্রুতগতিতে স্থূল জাগতিকতা থেকে বৌদ্ধিকতার দিকে এগিয়ে চলেছে৷ এমন দিন শীঘ্র আসবে যখন এই বৌদ্ধিক উৎকর্ষ আধ্যাত্মিকতায় রূপান্তরিত হবে৷ আমরা এখন যেমন বৌদ্ধিক বিকাশের মধ্য দিয়ে চলেছি, তেমনি নিকট ভবিষ্যতে এই পৃথিবীতে আধ্যাত্মিক যুগও আসবে৷ একটা সময় আসবে যখন এই আধ্যাত্মিকতা প্রধান মানুষেরা স্বমহিমায় বিরাজ করবে৷’’

শ্রী পি.আর.সরকারের অভিমতানুসারে, জৈবিক অস্তিত্ব তিন রকমের৷ প্রথম হ’ল শরীর সর্বস্ব জীবজন্তু, দ্বিতীয় হ’ল  মন-প্রধান অস্তিত্ব ও তৃতীয় হল আধ্যাত্মিক প্রধান মানবীয় অস্তিত্ব৷ এখন, এই তিন প্রকারের অস্তিত্বের মধ্যে  আত্মিক অগ্রগতির  জন্য সর্বাগ্রে চাই আত্মিক অনুশীলন, আর এই অনুশীলনের জন্যেই মানব দেহের চক্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা৷ তাই এই মানবদেহের চক্রের শোধন ও চক্র নিয়ন্ত্রণ হ’ল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷

মানব মনের যে কার্যকলাপ তার সঙ্গে জড়িত আছে বৃত্তিসমূহ৷ মানুষের মনে প্রতিনিয়ত অসংখ্য চিন্তার উদয় হচ্ছে৷ আবার তা ঐ মনেই বিলয় হ’চ্ছে৷ বহু জন্ম জন্মান্তরের জন্মগত সংস্কার সমূহ আমাদের দেহস্থিত ৫০টি বৃত্তি ও চক্রগুলির সহিত সম্বন্ধিত৷ এখন, সাধনার দ্বারা সাধক যদি পরমপুরুষকে সন্তুষ্ট করতে পারে তবে পরমপুরুষ (সদ্‌গুরু) কৃপা করে সাধককে মাইক্রোবাইটাম দিয়ে সাহায্য ক’রে থাকেন৷ এর ফলে এই মাইক্রোবাইটামরা চক্রগুলিকে উজ্জীবিত করে ও চক্রে স্পন্দনের সৃষ্টি হয়৷ আর এই স্পন্দন চক্র সংশ্লিষ্ট গ্রন্থি উপগ্রন্থি তথা সমগ্র মানব শরীরে গ্রন্থিরস ক্ষরণ Hormone) করে৷ এখন এই গ্রন্থিরস ক্ষরণের মধ্যে দিয়ে শুভ অথবা অশুভ বৃত্তিগুলির কার্য্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে৷

মনিপুর চক্রের ওপরে পজিটিভ মাইক্রোবাইটাম এর প্রভাব প্রধান আর নেগেটিভ মাইক্রোবাইটার প্রভাব অপ্রধান৷  নেগেটিভ মাইক্রোবাইটামরা মনিপুরচক্রে ভালভাবে কাজ করতে পারে না৷

মনিপুর চক্রের নীচে অবস্থিত স্বাধিষ্ঠান ও মুলাধার চক্র তামসিক হওয়ায় এই দুটি চক্রে নেগেটিভ মাইক্রোবাইটামের প্রভাব প্রধান, আর পজিটিভ মাইক্রোবাইটামের প্রভাব খুবই কম, নামমাত্র প্রভাব আছে৷ কিন্তু মনিপুর চক্রের উপরে রয়েছে অনাহত ও বিশুদ্ধ চক্র৷ এরা সাত্ত্বিকগুন সম্পন্ন হওয়ায় পজিটিভ মাইক্রোবাইটা এখানে প্রত্যক্ষভাবে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে৷

যেহেতু অনাহত চক্রে পজিটিভ মাইক্রোবাইটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেহেতু এই চক্রে যদি পজিটিভ মাইক্রোবাইটাকে যথাযথভাবে কাজ করতে দেওয়া হয় তবে মানুষের আধ্যাত্মিক গতি দ্রুত থেকে দ্রুততর হ’তে থাকবে৷ ফলে এই ধরণের মানুষ মানব কল্যাণ ও সেবার কাজে স্থির নিশ্চিত হ’য়ে যায়৷ মানব সভ্যতা ও মানব সমাজের পক্ষে  এই ধরণের মানুষ হ’য়ে ওঠে এক  সম্পদ৷ কিন্তু  যদি এই পজিটিভ মাইক্রোবাইটামকে এই চক্রে যথাযথ কাজ করতে দেওয়া না হয়, তবে সেক্ষেত্রে ফল হবে অত্যন্ত খারাপ৷ এক্ষেত্রে, নেগেটিভ মাইক্রোবাইটার প্রভাব ক্রমশ বাড়তেই থাকবে৷ এর ফলস্বরূপ মানুষ মানব সমাজের সর্বাত্মক ধবংসের  পথ ডেকে আনবে৷

অনাহত চক্রে রয়েছে ১২টি বৃত্তি ঃ

এরা হ’ল---আশা, চিন্তা, চেষ্টা, মমতা, দম্ভ, বিবেক, বিকলতা, অহংকার, লোলতা, কপটতা, বিতর্ক ও  অনুতাপ৷

অনাহত চক্রটি সৌরমণ্ডলের অন্তর্গত৷ এই চক্রটি আমাদের শ্বাসযন্ত্রের সহিত সম্বন্ধিত৷ অনাহত চক্রের যে সৌরমণ্ডল তা অনাহত চক্রকে তথা সমগ্র মানব শরীরকে প্রভাবিত করে, আর এই প্রভাব থেকে কেহই আমরা মুক্ত নহে৷ আমাদের এই সৌরজগতের যত গ্রহ তারা-ধুমকেতু প্রভৃতি জ্যোতিষ্করা রয়েছে, এদের প্রতিফলিত অথবা  প্রভাবিত করে৷ এই অনাহত চক্রের সঙ্গে যে প্রতিফলক Plate) সংযুক্ত আছে তা চক্রে স্থূল অংশের চেয়ে আয়তনে বড়৷ এই বৃহত্তর অংশই হ’ল সৌর মণ্ডল৷ প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত রশ্মি হ’ল একটি ‘তন্মাত্র’ (‘রূপ’ তন্মাত্র)৷ সুতরাং পজিটিভ কিংবা নেগেটিভ মাইক্রোবাইটাম এই তন্মাত্রের মধ্য দিয়ে বাহিত হয়৷ এইভাবে মাইক্রোবাইটাম বাহিত হ’য়ে এই চক্রের  ১২টি বৃত্তিকে ও সংশ্লিষ্ট গ্রন্থি উপগ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে৷ এখন, অনাহত চক্রকে উজ্জীবিত করতে হ’লে সবার আগে এই চক্রের সঙ্গে সংযুক্ত ‘বিজ্ঞানময় কোষ’-কে সাধনার দ্বারা অর্থাৎ ‘ধারনা’-র দ্বারা পরিশোধন করতে হবে৷ তবেই পরিশোধিত কোষের উদ্দীপনা অনাহত চক্রকে উদ্দীপ্ত করতে পারবে৷ সুতরাং কোষের পরিশোধন ব্যতিরেকে চক্র উদ্দীপ্ত হ’তে পারে না৷

এই চক্রে রয়েছে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক ও গুরুত্বপূর্ণ মানবীয় গুণসম্পন্ন বৃত্তি৷ যেমন---পজিটিভ মাইক্রোবাইটামের অনুপ্রেরণায় ‘আশা’ চিন্তা, চেষ্টা, মমতা অনুতাপ প্রভৃতি বৃত্তিগুলি শুভ কাজে প্রেরণা দেয়৷ এইভাবে বৃত্তিগুলি শুভ কাজে প্রেরণা দেয়৷ এই ভাবে বৃত্তিগুলিকে যদি ঠিক পথে পরিচালিত করা যায় অর্থাৎ মানুষ তার মনোবৃত্তিতে পজিটিভ ভাবনা ‘বেশী’ মাত্রায় আনতে পারে তবে অনাহত চক্রস্থিত শুভ বৃত্তি বা প্রবৃত্তিগুলির শক্তি বেশী ক’রে সংহত হয়৷ ‘ৰাৰা’ এটাকে বলেছেন---‘‘সাত্ত্বিকভাবযুক্ত মনোভূমির প্রবৃদ্ধিকরন’’ Psycho-Panoromic minimities) কিন্তু যদি ঋণাত্মক মাইক্রোবাইটা দ্বারা গ্রস্ত  হয়ে কেউ তামসিক দিকে চলে তা হলে সেক্ষেত্রে এটা তৈরী করবে ‘‘তমোগুণযুক্ত মানস ভৌতিক ও স্বীকরণ’’ Psycho-Panoromic minimities)৷

শ্রী সরকার তাঁর মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বে বলেছেন--- ‘‘আলোক তরঙ্গে মাধ্যমেই যে মাইক্রোবাইটা বাহিত হয় তা নয়, ভাবগ্রহমের মাধ্যমে  মাইক্রোবাইটা বাহিত হয়৷’’ সুতরাং মানুষ যত বেশী সদ্‌ ভাবনা, সদ্‌পুস্তক নিয়ে চিন্তা ভাবনা, আধ্যাত্মিক ভাবনা বেশী করবে, ততই মানুষের ভাবনার idea) মধ্যে পজিটিভ মাইক্রোবাইটাম আসতে থাকবে৷ এর ফলে  আধ্যাত্মিকভাবের প্রাধান্য যুক্ত সাধকদের মধ্যে অনাহত চক্রস্থিত শুভ প্রবৃত্তিগুলির শক্তি বেশী করে সংহত হবে৷

অপরপক্ষে আধ্যাত্মিক সাধনা যদি না থাকে তবে ‘লোভ’-বৃত্তিগুলিকে বাড়িয়ে দেবে৷ পজিটিভ মাইক্রোবাইটার প্রভাব বেশী হলে ‘অনুতাপের মানসিকতা তৈরী হয়, ‘বিবেক’ অর্থাৎ বিচার করার শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়৷ এমনি করে অনাহত চক্রের ১২টি বৃত্তির উপর মাইক্রোবাইটাম শুভ প্রভাব বিস্তার করে মানুষকে দেবত্বে উন্নীত করে অথবা এর অশুভ প্রভাব মানুষকে নরকে নামিয়ে দিতে পারে৷