আনন্দমার্গ–আনন্দময় এক নোতুন পৃথিবীর পথ

লেখক
পথিক বর

এটা আমরা প্রায় সবাই অনুভব করছি যে, আজ দেশের কি সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, কি শিক্ষা–সংস্কৃতির জগতে, কি ধর্মমতের ক্ষেত্রে–সর্বক্ষেত্রেই একটা চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে৷ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমাজের এক শ্রেণী চরম বিলাসিতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, জনসাধারণের সম্পদ লুটে পুটে খাচ্ছে৷ বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সমস্ত জিনিসের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষের ওষ্ঠাগত প্রাণ৷ কী করে যে দিন গুজরান হবে তাই তারা বুঝে উঠতে পারছে না৷ ফলে সবার মনে চরম দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে৷

সম্প্রতি একের পর এক–প্রথমে পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি, তারপর ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, রান্নার গ্যাসের ভরতুকি হ্রাস করে পরিবার পিছু বছরে মাত্র ছটি সিলিণ্ডার ভরতুকি প্রাপ্ত মূল্যে সরবরাহ করার ঘোষণা, চাষীদের চাষের সারের দাম বৃদ্ধি, বিদেশী ধনকুবের পুঁজিপতিদের এদেশে খুচরো ব্যবসা করতে ছাড়পত্র দেওয়া যার ফলে কয়েক কোটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ব্যবসা উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা–এসব কিছুই দেশবাসীর কাছে বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

অপরদিকে দেখতে পাচ্ছি দেশের সেবা করবে–এই বিশ্বাস করে যে জনপ্রতিনিধির হাতে জনসাধারণ দেশের পরিচালনার ভার তুলে দিয়েছে, তাদের বেশির ভাগই  জনসেবার পরিবর্তে অবৈধভাবে, নানান ধরনের দুর্নীতির পথ অবলম্বন করে’ গরীব জনসাধারণের টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে৷ দেশ জুড়ে দুর্নীতি ও লুঠের রাজ্যপাট চলছে৷ কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারী, টু–জি স্পেক্ট্রাম কেলেঙ্কারী, কয়লা ব্লক কেলেঙ্কারী, এসব থেকে শুরু করে সোনিয়ার জামাতার তিন বছর আগে ৫০ লক্ষ টাকা লগ্ণী করে বর্তমানে ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি করা, প্রতিবন্ধীদের সাহায্যের নামে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর স্ত্রীর কোটি কোটি টাকা তছরুপ–এইসব দুর্নীতির কথা পত্র–পত্রিকায় প্রকাশ পাচ্ছে৷ এমনিভাবে প্রকাশ না পাওয়া কত ধরণের ও কত কোটি টাকার যে দুর্নীতি এদেশে চলছে তার ইয়ত্তা নেই৷ মোট কথা জনসাধারণের টাকা নিত্য লুঠ হচ্ছে৷ এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকার দেশকে বিদেশের কাছে বেচে দিচ্ছে৷

কিন্তু এই সব বিপুল সমস্যার সমাধান কোন্ পথে? এই রাস্তা কিন্তু কোনো নেতা বা নেত্রীর জানা নেই৷ তাহলে এর থেকে নিস্তারের পথ কী? সমস্যা নিয়ে অগ্ণিগর্ভ বত্তৃণতা দেওয়া এক কথা, আর সমাধানের পথ দেখানো আর এক কথা৷ এই দ্বিতীয় কাজটা কোনো নেতাই করতে পারছে না, এই পথ কারুর জানা নেই৷

ধনতান্ত্রিক পথে এ সমস্যার কোনো সমাধান নেই৷ কারণ, এই সমস্ত সমস্যা ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থারই অবধারিত কুফল৷ তাই ধনতন্ত্রের পথে থেকে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না৷ এর বিকল্প বলে পরিচিত যে মার্ক্সবাদ, অনেকদিন আগেই তা মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে৷ রাশিয়া, পোল্যাণ্ড, যুগোশ্লাভিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, রোমানিয়া, পূর্ব জার্মানী প্রভৃতি পূর্ব ইয়ূরোপের যে সব দেশ মার্ক্সবাদকে গ্রহণ করেছিল, পরবর্তীকালে এর বীভৎস রূপ দেখে তারা মার্ক্স্বাদকে বর্জন করেছে, আর চীন প্রভৃতি যে সব দেশের সরকারের কপালে এখনও কম্যুনিষ্ট লেবেল আঁটা আছে, তারাও বাস্তবে কম্যুনিজমের পথ পুরোপুরি পরিত্যাগ করে ধনতন্ত্রের পথেই হাঁটছে ও ধনতন্ত্রের সমস্ত কুফলও যেমন, বেকার সমস্যা, চরম দারিদ্র্য, দুর্নীতি, শোষণ–এখন ওই সব দেশকেও গ্রাস করছে৷

তাহলে এর প্রকৃত বিকল্প কী?–শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার) তাঁর ‘প্রাউট’ দর্শনে প্রকৃত শোষণমুক্তির পথ দেখিয়েছেন৷ প্রাউটের মাধ্যমে কীভাবে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র তথা প্রগতিশীল সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করা যায় তার পথ দেখিয়েছেন৷ এখন দেশ–বিদেশের বুদ্ধিজীবী তথা চিন্তাশীল মানুষদের মধ্যে এই প্রাউটের নোতুন আদর্শ এক আলোড়ন সৃষ্টি করছে৷

সামাজিক ক্ষেত্রে আমরা দেখি, আজ সমাজের যত্র তত্র এমনকি শিক্ষাক্ষেত্রেও যেভাবে নারী নির্যাতন, ব্যাপকভাবে মেয়েদের শ্লীলতাহানি প্রভৃতি চলছে, তাতে ভোগবাদী সমাজের পচা–গলা ক্ষতগুলো আজ কারুর অজানা থাকছে না৷ এই সংকট থেকে পরিত্রাণের পথও শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী দেখাচ্ছেন, যে পথ যুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যাত্মবাদের পথ৷

শিক্ষার ক্ষেত্রেও আজকের নীতিবর্জিত শিক্ষার কুফল সবাই দেখতে পাচ্ছে, এক্ষেত্রেও শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নব্যমানবতাবাদী শিক্ষানীতি দিয়েছেন ও সেই শিক্ষাকে বাস্তবায়িত করতে সারা পৃথিবী জুড়ে এই নোতুন শিক্ষানীতিকে বাস্তবায়িত করার কর্মযজ্ঞও শুরু করে দিয়েছেন৷ সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও অমানিশার ঘন অন্ধকার সরিয়ে তাঁর রচিত ও সুরারোপিত পাঁচ সহস্রাধিক প্রভাত সঙ্গীত আলোকোজ্জ্বল নোতুন প্রভাতের সূচনা করেছে৷

এককথায়, শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী সমাজের সর্বক্ষেত্রে সর্বপ্রকার সমস্যারই সমাধানের জন্যে দিয়েছেন সর্বাত্মক দর্শন তথা সর্বাত্মক আদর্শ৷

শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী তাঁর ভৌতিক শরীর ত্যাগ করেছেন, কিন্তু তিনি তো তাঁর আদর্শের সঙ্গে মিলে মিশে এক হয়ে আছেন৷ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নিজেই সে কথা বলেছেন, ‘‘আমি এই ভৌতিক শরীর নই, এই ভৌতিক শরীর ‘আমি’ নয়, আমি আমার আদর্শের সঙ্গে মিলে মিশে এক হয়ে গেছি৷.......’’

তাই, আজ যাঁরা তাঁর অনুগামী বা যাঁরা তাঁকে তথা তাঁর আদর্শকে ভালবাসেন, আসুন আমরা সবাই আজ এ দৃঢ় সংকল্প  গ্রহণ করি, আমরা তাঁর মহান্ আদর্শকে বাস্তবায়িত করে নিপীড়িত মানবতার শোষণ–মুক্তি ঘটাবো ও প্রতিটি মানুষকে তার জীবনের সার্থকতা লাভের পথে এগিয়ে নিয়ে যাব৷ আসুন, আমরা এইভাবে আনন্দময় এক নোতুন পৃথিবী গড়ে তুলি৷