অপরাজিতা বিল মনের রোগ নিরাময় করতে পারবে না

লেখক
তপোময় বিশ্বাস

‘অভয়া’-র খুন ও ধর্ষণের প্রকৃত বিচারের ব্যাপারে আমিও ব্যষ্টিগতভাবে খুবই উদ্বিগ্ণ৷ আমিও চাই প্রকৃত বিচার হোক, দোষীরা শাস্তি পাক৷ তথাপি এখনও পর্যন্ত যে তথ্য সামনে এসেছে তা হল অভয়া-র ধর্ষক হল সিভিক ভলেন্টিয়ার সাঞ্জায় রাই (সঞ্জয় রায় নয় মোটেই) কিছু চাটুকার মিডিয়া ‘‘সাঞ্জায় রাই’’কে সঞ্জয় রায় বানিয়ে বাঙালীদের মধ্যে গুলিয়ে দিতে চায় যে সাঞ্জায় গুটকাসেবক অবাঙালী নয়, সে বাঙালীই৷

ঠিক যেমন রবি ঠাকুর রচিত আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন’ কে এরাই অবাঙালীদের দিয়ে গাওয়ানো ‘জানাগাণামানা’ শুনিয়ে এইটা প্রমাণ করতে চায় গানটি বাংলা-র নয়, হিন্দী-রই৷ যাই হোক মূল বক্তব্যে ফিরে আসি৷ আর.জি.কর কাণ্ডের বিচারের দাবীতে আন্দোলনরত রবীন্দ্রভারতীর পড়ুয়াদের মধ্যে প্রবেশ করে শ্লীলতাহানি করে আর এক মদ্যপ সিভিক ভলেন্টিয়ার ‘গঙ্গাধর গোঁদ’৷ এরই মধ্যে হাওড়া জেলা হাসপাতালের সিটি স্ক্যান বিভাগে ১৩বছরের কিশোরীকে যৌন হেনস্থা ও ধর্ষণের চেষ্টা করে ‘আমন রাজ’ বলে এক অস্থায়ী কর্মী৷ এখানে ধর্ষক, শ্লীলতাহানিকারীর নাম গুলো দেখলেই বোঝা যাবে এরা কেউই স্থানীয় বাঙালী নয়, প্রত্যেকেই বহিরাগত অবাঙালী৷ খুব ঠাণ্ডা মাথায় গভীর ভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে বাঙলায় কাজের সন্ধানে এরা বাইরে থেকে আসছে, আর শাসকদল ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে তাদের পুষছে, আর এরাই এদের উন্মত্ত ভোগের সংস্কৃতি বাঙলায় প্রবেশ করিয়ে চারিদিকে জুয়ার ঠেক, মদের ঠেক, গাঁজা, হেরোইনের মতন মাদকের ঠেক খুলছে আর বাঙালী যুব সমাজকেও সেই ভোগবাদে উৎসাহিত করে জন্তুতে পর্যবসিত করার চেষ্টা করছে৷

এরাই নারীদের লোলুপ দৃষ্টিতে দেখানো শেখাচ্ছে৷ রামমোহন,বিবেকানন্দ দেখিয়েছিলেন, শিখিয়েছিলেন নারীকে মাতৃ জ্ঞানে পুজো করতে, তা জন্ম দিয়েছিলো শত সহস্র দেশপ্রেমিক৷ আজকের এই সাঞ্জায় রাই, গঙ্গাধর গোঁদ, আমন রাজ’দের মতন ধর্ষকদের, নররূপী জন্তুদের আনা সংস্কৃতির ধারা প্রবাহ বাঙালীর মধ্যেও প্রভাব ফেলছে৷ নারী ধর্ষণ বন্ধ করতে, নারী নিরপত্তা সুনিশ্চিত করতে ভোগবাদী সংস্কৃতির আনাগোনা ও ধারা প্রবাহ বিস্তার বন্ধ করতে হবে৷ তা করতে প্রথমেই সেই সমস্ত বহিরাগত যারা বাঙলাতে থেকে বাঙলার রুচি,সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পশু বৃত্তি উষ্কানীমূলক হিন্দী অসংস্কৃতির বেনোজল বাঙালীর মধ্যে প্রবেশ করাতে চাইবে তাদের বাঙলা থেকে তাড়াতে হবে৷

পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দ-বীর সুভাষের মতন মণীষীদের জীবনধারা, বাণী বাঙলার জনমানসে ফুটিয়ে তুলে ধরে বাঙালীর উন্নত সূক্ষ্ম চেতনার অধ্যাত্ম ভাবধারার প্রবেশ করাতে হবে৷ তবেই আবার সমগ্র বাঙলা জুড়ে নারীগণ ‘মাতৃরূপেন’ পূজিত হবেন ও ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির মতন জঘন্য অপরাধের নির্মুল করা যাবে৷ যতই মৃত্যুদণ্ডের ‘অপরাজিতা’ বিল পাশ হোক, মন থেকে এই ভোগের স্পৃহা দূর না করলে তা নির্মুল সম্ভব নয়, ভয় দেখিয়ে সাময়িক ঠেকিয়ে রাখা যায় ঠিকই, কিন্তু এই রোগ নির্মুল না হলে ১০০ শতাংশ নারী নিরাপত্তা বা ধর্ষণ আটকানো অবশ্যম্ভাবী৷