রোগের লক্ষণ ও কারণ ঃ
তোমরা জান অর্শ রোগটি হয়ে থাকে মুখ্যতঃ লিবারের ত্রুটিতে৷ আসলে এটা কোন উদর–ব্যাধি বা মল–নাড়ীর ব্যাধি নয়৷ রোগের লক্ষণ প্রথমে কোষ্ঠকাঠিন্য (ইংরেজীতে constipation, ফার্সীতে কৰ্জীয়ৎ) নিয়ে প্রকাশ পায়৷ সেই অবস্থায় অতিরিক্ত কোঁথ দিতে গিয়ে মলদ্বারের বাইরের দিকে বা ভেতরের দিকে কিছুটা ফুলে যায়৷ এই ফুলে যাওয়া অংশ যখন আকারে আরো একটু ৰড় হয় তখন তাকে বলা হয় ‘ৰলি’৷ যারা অতিরিক্ত মাংস বা তামসিক ভোজ্য খায় তাদের মল ‘নেড্য’ (ন ঈড্য) নামে পরিচিত হয়৷ এই ‘নেড্য’ থেকে বাংলায় ‘ন্যাড়’ শব্দটি এসেছে৷ যাদের মল সাধারণতঃ নেড্য–পর্যায়ভুক্ত তারা কখনো অতিরিক্ত গুরুভোজ্য খাদ্য গ্রহণ করলে সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে আক্রান্ত হয়৷ অন্যদের তুলনায় তাদের অর্শ, ভগন্দর রোগের প্রকোপ হয় বেশী৷
যে সকল রোগে হঠাৎ জ্বর বেড়ে যায়, সেই সকল রোগে জ্বর হঠাৎ থেমে গেলে বা ঔষধের সাহায্যে (জ্বর কমাতে) চাপ দিলে কোষ্ঠকাঠিন্য তো দেখা দেয়ই, পরিণামস্বরূপ অর্শ রোগও দেখা দিতে পারে, যদি রোগীর বয়স চব্বিশের বেশী হয়৷ একথা রোগিনীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য৷ বিশেষ করে ওই রোগিনী যদি বন্ধ্যা নারী হন৷
প্ত দুই ধরনের অর্শ ঃ
অর্শ মুখ্যতঃ দুই ধরনের–মলদ্বারের বাইরের অর্শের ৰলিকে বলা হয় বহির্ৰলি৷ ভেতরের ৰলিকে বলা হয় অন্তর্ৰলি৷ বলা বাহুল্যমাত্র, মল ত্যাগের সময় ওই ৰলি দিয়ে রক্তপাত হয়৷ বহির্ৰলির চেয়ে অন্তর্ৰলি অধিকতর যন্ত্রণাদায়ক৷ যকৃতের ত্রুটিতে (lever) যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের ৰাড়াৰাড়ি হয় তখন কখনও কখনও যকৃত বা লিবার থেকে কোঁথের চাপেই অন্তর্ৰলি বা বহির্ৰলি ফেটে যে রক্ত বের হয় তা রক্তার্শ৷
তাই রক্তগত বিচারে অর্শ দু’রকমের–রক্তার্শ ও শুষ্কার্শ৷ রক্তার্শ হলে প্রভূত রক্তপাত (Bleeding or haemorrhage) হয়৷ শুষ্কার্শে কিন্তু রক্তপাত হয় না বললেই চলে, কিন্তু অত্যধিক যন্ত্রণা হয়৷ মানুষ শুয়ে–বসে কোন অবস্থাতেই স্বস্তি পায় না৷ অর্শের ইংরেজী নাম Piles৷ আম বা Mucous–এ সঙ্গে অর্শের দূর সম্পর্ক থাকলেও নিকট সম্পর্ক নেই৷ আমাশয় মুখ্যতঃ যকৃতের রোগ অর্শ গৌণতঃ অন্তর্ৰলি বা বহির্ৰলির রোগ যা সৃষ্ট হয় কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্যে বা দীর্ঘকালীন জ্বর ভোগের পর৷
প্ত ঔষধ ও পথ্য প্ত
প্ত ওল ও নুনে শাক ঃ
অর্শ সম্বন্ধে মৌলিক জ্ঞান থাকলেই বুঝতে পারবে কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় এমন খাদ্যই অর্শের পক্ষে ভাল৷ কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় এরকম খাদ্য খেলে লিবারের কাজ কিছুটা সহজ ও সুগম হয়৷ কোষ্ঠ পরিষ্কার থাকে৷ তাই অর্শের ভাল ঔষধ হ’ল ওল৷ এতে কোষ্ঠ পরিষ্কার হয়, সুতরাং রক্তক্ষরণ বা চুলকানি হবার সম্ভাবনা কমে যায়৷ কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় বলে উদরে আম সৃষ্টির প্রবণতা থাকে না৷ তাই আমাশয় ও অর্শ দু’য়ের পক্ষেই ওল ভাল৷ ঝোল পেটকে ঠাণ্ডা রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেয় না৷ তাই সাধারণ ঝোল বা যাকে ঝালের ঝোল বলে তা অর্শ ও আমাশয় দু’য়ের পক্ষে ভাল৷ তবে তাতে কাঁচকলা ব্যবহার কোরো না৷ কাঁচকলা কোষ্ঠকাঠিন্য আনে৷ তাই তা উদরাময় রোগের বা অর্শের ঔষধ নয়৷ পটোলের ঝোল এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল ও নির্দোষ খাদ্য৷ হ্যাঁ, ওলে অর্শ সারায় বলে সংস্কৃতে ওলের একটি নাম অর্শঘ্ণী৷ ভাদ্র মাসে সূর্যাস্তের পর ওল না খাওয়াই ভাল৷ অন্য ঋতুতে দিনে রাত্রে সবসময়ই ওল খাওয়া চলতে পারে৷ ঔষধীয় গুণ লাল ওলে বেশী৷ মুখরোচক শাদা ওল বেশী৷
নুনে শাক বা নোন্তা শাককে সংস্কৃতে বলে ‘লোনী’৷ লোনীর শাখা দু’টি–বড় ও ছোট–ৰৃহৎ লোনী (বৃহল্লোনী) ও ক্ষুদ্রলোনী৷ দু’য়ের গুণ প্রায় এক৷ অযত্নবর্ধিত নুনে শাকের ৰৃহৎ প্রজাতিকে বলে ৰৃহল্লোনী আর ক্ষুদ্র প্রজাতিকে বলে ক্ষুদ্রলোনী বিহারে বলে নোনিয়া বা নুনে শাক৷ বিহারের মেয়েরা তাঁদের জিতিয়া পরবে (জিতাষ্টমী), ছট ব্রতে উপবাস করে থাকেন৷ উপবাসের পর তাঁদের হয় কোষ্ঠকাঠিন্য, না হয় উদরাময় দেখা দেয়৷ বেশ কিছুদিন ধরে’ যাতে সেই ব্যাধিটি না হয় সে জন্যে তাঁরা উপবাসের পূর্বে ও পরে লোনী শাকের বড়া বিশেষ করে খেয়ে থাকেন৷
দুই ধরনের লোনীই অর্শের ভাল ঔষধ৷ নুনে শাকের ঝোলও ভাল৷ নুনে শাক নাড়ী পরিষ্কার করে, আম–কে তার আশয় থেকে সরিয়ে দেয়, যকৃতের কাজকর্মকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে৷ অর্শ ও আমাশয় দু’য়ের জন্যেই কার্যকরী একটা কথা মনে রেখো–‘‘ওল–ঘোল–ঝোল’’৷ দুধ অনেকের সহ্য হয় না৷ পেটে বায়ু জন্মায়৷ কিন্তু ঘোলে সে দোষ নেই৷ ঘোলেতে দুধের স্বাদ পাওয়া যায় না বটে তবে তাতে দুধের গুণ পাওয়া যায়৷ ঙ্মঘোল সব সময় লবণসহ খাওয়া উচিত৷ৰ
প্ত অর্শ ও ভগন্দর ঃ
ভগন্দরের ইংরেজী নাম Fistula–ভগন্দর ব্যাধিটির অনেক কারণ থাকলেও মুখ্য কারণ হচ্ছে অর্শের পুরাতন অবস্থা৷ পুরাতন অর্শই ভগন্দরের রূপ নেয় ও মল–নাড়ীর ভেতরের দিকে দারুণ যন্ত্রণাদায়ক প্রদাহের সৃষ্টি করে৷
প্ত অর্শ ও বায়ুরোগ ঃ
বায়ুরোগে অর্থাৎ রক্তচাপ ৰৃদ্ধিতে যাঁরা ভোগেন তাঁদের পক্ষে রক্তার্শ একদিক দিয়ে কিছুটা লাভদায়ক, কারণ রক্ত শরীরের নিম্নাংশ দিয়ে বহির্গত হয়ে গেলে রক্তচাপ ৰৃদ্ধি প্রশমিত হয়৷
প্ত বিধিনিষেধ ও বিরেচক প্ত
কোষ্ঠকাঠিন্যে বিরেচক (কোষ্ঠ পরিষ্কারক) ব্যবহার করা তখনই উচিত যখন তা অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছায়৷ অন্যথায় নিয়মিত বিরেচক ব্যবহার করলে শরীরের স্বাভাবিক মল নিঃসরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ শেষে এরকম অবস্থা আসে যখন বিরেচক ব্যবহার না করে মলত্যাগ করাই যায় না৷ তাই অবস্থার চাপে বিরেচক ব্যবহার করলেও মৃদু বিরেচকই ব্যবহার করা উচিত৷ মৃদু বিরেচক হিসেবে হর্তুকী সেদ্ধ জল, ত্রিফলা জল আর সমভাবে পুরণো গুড় (আখের) ও সোঁদাল ফলের ‘কাই’ ব্যবহার করা যেতে পারে৷ তোমরা সোঁদালগাছ নিশ্চয়ই দেখেছ, বসন্ত ঋতুতে সোনালী ফুলে ফুলে গাছ ভরে’ থাকে৷ তাই সংস্কৃতে এর নাম স্বর্ণাল৷ জাপানী চেরী ফুলের সঙ্গে এর কোথাও যেন একটু মিল আছে৷ তাই কেউ কেউ একে ndian Cherry বলে থাকেন৷ উর্দূতে বলা হয় ‘অমলতাস’৷ কথ্য বাংলায় কেউ কেউ একে ‘বাঁদর–লাঠি’ও বলে থাকেন৷ ফুল ঝরে যাবার পরে গাছটিতে বেশ লম্বা লম্বা কালো রঙের শুঁটি ঝুলতে থাকে৷ শুঁটির মধ্যেকার একটি বীজ থেকে আরেকটি বীজের মধ্যবর্ত্তী স্থানে ‘কাই’ থাকে৷ ‘‘বিরেচক হিসেবে সোঁদালের কচি পাতা ১০/১২ টি ঘিয়ে ভেজে অথবা বিছুটির কচি পাতা ১০/১২ টি ঘিয়ে ভেজে ভাতের সঙ্গে খেলে প্রথম অবস্থায় সুন্দর ফল পাওয়া যায়৷’’ ঙ্ম অর্শে রক্তক্ষরণ হলে জানুশিরাসন কার্যকরী৷