ইতোপূর্বে, ইতোমধ্যে : ইতিপূর্বে, ইতিমধ্যে–‘ইতিপূবে’, ‘ইতিমধ্যে’ দুটো শব্দই অশুদ্ধ৷ কারণ, শুদ্ধ শব্দগুলি হচ্ছে ‘ইতঃপূর্বে’, ‘ইতঃমধ্যে’৷ তবে ইচ্ছে গেলে বিসর্গের ব্যবহার না করেও ‘ও’–কার দিয়ে কাজ চালাতে পারি৷ লিখতে পারি ‘ইতোপূর্বে’, ‘ইতোমধ্যে’৷
ওই : ‘ও–ই’ শব্দটি বাংলা ‘ও’ শব্দটি থেকে এসেছে৷ তাই তার বানান ‘ও–ই’ হতেই হবে–‘অ–ই’ অথবা ‘ঐ’ দিয়ে লিখলে চলবে না৷
উচিত: বচ + ণচ + ক্ত = উচিত৷ মনে রাখা দরকার, ‘ক্ত’ প্রত্যয়ান্ত শব্দে খণ্ড ‘ত’ (ৎ) বা হসন্তযুক্ত ব্যঞ্জন হয় না৷ তাই ‘উচিত’ বানান পুরো ‘ত’ দিয়ে লিখতে হবে, খণ্ড ‘ত’ (ৎ) দিলে চলবে না৷
করদাতৃগণ, নেতৃগণ, ভ্রাতৃগণ, বত্তৃণগণ, ভ্রাতৃবর্গ যৌগিক পদে অনেক সময় দেখা যায় লোকে বলবার সময় বা লেখবার সময় পূর্ব পদস্থিত ‘তৃচ’ প্রত্যয়ান্ত শব্দটিতে মূল শব্দরূপ না রেখে প্রথমার একবচন ব্যবহার করে থাকেন৷ যেমন, ‘কর্ত্তৃগণ’ না লিখে লেখেন ‘কর্ত্তাগণ’৷ মনে রাখতে হবে মূল শব্দটি ‘কর্ত্তৃ’ যার প্রথমার একবচনে ‘কর্ত্তা’৷ তাই নিয়মানুসারে যৌগিক পদে মূল শব্দটি ব্যবহার করা হয়৷ অর্থাৎ ‘কর্ত্তাগণ’ না লিখে লিখতে হবে ‘কর্ত্তৃগণ’৷ অনুরূপভাবে ‘করদাতাগণ’, ‘নেতাগণ’, ‘ভ্রাতাগণ’ ‘বক্তাগণ’, ‘ত্রাতাবর্গ’, শব্দগুলির শুদ্ধরূপ হ’ল ‘কর্ত্তৃগণ, ‘করদাতৃগণ’, ‘নেতৃগণ’, ‘ভ্রাতৃগণ’, ‘বত্তৃণগণ’, ‘ত্রাতৃবর্গ’৷
ঠিক একই নিয়মে ‘পিতাসদৃশ’ না লিখে লেখা উচিত ‘পিতৃসদৃশ’৷
গঙ্গোত্তরী: গঙ্গার যেখানে উত্তরণ ঘটছে সেই স্থানের নাম ‘গঙ্গোত্তরী’৷ অনুরূপভাবে যমুনা যেখানে তার পার্বত্য স্তর ত্যাগ করে সমতল স্তরে নাবছে তার নাম যমুনোত্তরী৷ ‘গঙ্গোত্রী’ ও ‘যমুনোত্রী’ শব্দ দুটি অশুদ্ধ৷
ঠিক: ঠক একটি বিশেষণ৷ সাধারণ নিয়মে বিশেষণের আগে ‘স’–এর সংযুক্তি হয় না৷ যেমন ‘সচকিত’ ভূল তেমনি ‘সঠিক’–ও ভুল৷ ‘ঠিক’ বলাই ঠিক৷
কাঁটাল: সংস্কৃত ‘কণ্ঢকীফলম্’ থেকে এসেছে ‘কাঁটাল’৷ ‘কণ্ঢক’ বা ‘কাঁটা’ শব্দে ‘ট’অক্ষরটি রয়েছে৷ তাই বানান লিখতে হবে ‘কাঁটাল’–কাঁঠাল’ নয়৷ একে অসমীয়াতে বলে কাঁটাল’, বিহার ও উত্তর ভারতে ‘কটহল’৷ পাকা কাঁটালকে সংসৃক্তে বলা হয় ‘পনস’৷ দ্রড়িয়া, মাঠী ও মধ্যপ্রদেশের দক্ষিণাংশে ‘পনস’ শব্দটি বেশ প্রচলিত৷ কাঁচা কাঁটালকে বাংলায় ‘এঁচোড়’ বা ‘ইঁচড়’ বলে৷ এটি দেশজ বাংলা শব্দ৷ কম বয়সের ছেলে বেশী পাকা হলে আমরা বলি ‘ইঁচড়ে পাকা’৷
ছাত্রা : ছদ্’ ধাতুর অর্থ আচ্ছাদন দেওয়া৷ যে বস্তু আচ্ছাদন দেয় তা–ই ‘ছত্র’৷ গুরুর ছত্রছায়ায় যে আশ্রিত তাকে ছত্র অণ করে ‘ছাত্র’ বলা হয়৷ ‘ছাত্র’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গে দু’টি রূপ রয়েছে–‘ছাত্রী’ ও ‘ছাত্রা’৷ ‘ছাত্রী’ মানে ‘ছাত্রের পত্নী’৷ তিনি নিজে পড়ুয়া হতেও পারেন, নাও হতে পারেন৷ ‘ছাত্রা’ মানে যিনি নিজে পড়ুয়া কিন্তু তিনি কারও স্ত্রী হতেও পারেন, নাও পারেন৷
সুত্র–‘প্রভাতরঞ্জন সরকারের ব্যকরণ বিজ্ঞান’