বাংলা বানান প্রসঙ্গে

লেখক
জ্ঞানভিক্ষু

প্রাউট–প্রবক্তা মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার ভাষাতত্ত্ব ও ব্যাকরণ বিজ্ঞানের ওপরও বহু অমূল্য পুস্তক রচনা করেছেন, যা কলকাতা, ঢাকা, কল্যাণী প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা অধ্যাপক সহ বিশিষ্ট ভাষাতাত্ত্বিক ও জ্ঞানী গুণীজনের দ্বারা বহুল প্রশংসিত৷ তাঁর রচিত ‘প্রভাতরঞ্জনের ব্যাকরণ বিজ্ঞানে’ তিনি বহু প্রচলিত বাংলা বানানের ভুলত্রুটি বা অর্থবিচ্যুতি দেখিয়ে সে সবের সংস্কার সাধনেও সচেষ্ট হয়েছেন৷ এ ধরনের কিছু বাংলা বানান সম্পর্কে তাঁর অভিমত তাঁর ভাষাতেই প্রকাশ করা হচ্ছে ঃ

ইয়ূথ/ইয়ূনিয়ন/ইয়ূনিটি......

বৈদেশিক শব্দের উচ্চারণে যদি আদিতে পরপর দুটি স্বর থাকে ও তাদের দ্বিতীয় স্বরটি যদি ‘উ’ ধ্বনি যুক্ত হয় তবে তা দীর্ঘ হবে৷

যেমন – ইয়ূথ, ইয়ূনিবার্সিটি, ইয়ূনিয়ন, ইয়ূরো–এস্থেটিক্স (লাতিন), ইয়ূফ্রেটিস্ (গ্রীক), ইয়ূচি (মঙ্গোল), ইয়ূংচুয়াং (চীনা), ইয়ূনূস (আরবী), ইয়ূস্যুয় (আরবী, হিব্রুতে জোসেক)৷

সোচ্চার নয়, সরব

আজকাল বহু শিক্ষিত মানুষও ‘সরব’ (vocal) বোঝাতে গিয়ে ‘সোচ্চার’ কথাটা প্রায়শঃ লিখে থাকেন বা বলে থাকেন৷ শব্দটা আগাপাস্তলা ভুল৷ উচ্চারূণ>উচ্চার৷ ‘উচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা’৷ ‘ঔচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা সম্বন্ধীয়’৷ উচ্চারেণ সহ ইত্যর্থে ‘সোচ্চার’ (তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস) যার মানে হচ্ছে যিনি মলত্যাগ করেছেন কিন্তু এখনও জলশৌচ করেননি৷ মলত্যাগকালে কোঁথ দেওয়াকেও ‘উচ্চার’ বলা হয়৷ অতএব ‘সোচ্চার’ শব্দের আরেকটি মানে হ’ল যে মলত্যাগ করবার জন্যে কোঁথ দিচ্ছে৷ কেবল সংস্কৃত বা বাংলা ব্যাকরণেই নয়, বাংলা ভাষায় অন্য ভাষার যে সব শব্দ আছে সেগুলো একটু মানে বুঝে ব্যবহার করলে ভাল হয়৷

এবং নয়, ও বা আর

সংযোজক ‘ও’–এর পরিবর্ত্তে অনেকে প্রায়শঃ ‘এবং’ শব্দটির ব্যবহার করে থাকেন৷ কিন্তু ‘এবং’ মানে ‘ও’ নয়৷ ‘এবং’ বাংলা শব্দও নয় এটি একটি সংস্কৃত শব্দ, যার মানে ‘এইভাবে’, ‘এইরকমে’৷ যেমন, ‘এবং কুরু’ মানে এইভাবে করো৷ সুতরাং ‘ও’–র পরিবর্ত্তে ‘এবং’ প্রয়োগ করলে চলবে না৷ পরিবর্ত্তে ‘ও’ বা ‘আর’ লিখলেই ভাল হয়৷

প্রেত অর্থে ভুত, ভূত নয়

‘ভুত’ (ghost) সংক্রান্ত অর্থে ‘ভৌতিক’ শব্দ ব্যবহার না হওয়াই বাঞ্ছনীয়৷ বাংলায় যাকে ভুত বলি তার সংস্কৃত হচ্ছে ‘প্রেত’৷ প্রেত থেকে ‘প্রৈতিক’ শব্দ আসতে পারে যদিও তার ব্যবহার খুবই সীমিত৷ ghost অর্থে ‘ভুত’ শব্দটা যদি রাখতেই হয় তাহলে তার বিশেষণ হোক ‘ভুতুড়ে’–ভৌতিক নয়৷ সংস্কৃত ‘ভূত’ শব্দের ‘ঠক্’ বা ‘ষ্ণিক্’ প্রতয়্যান্ত বিশেষণ ভৌতিক’ (Physical) ৷

জেনে রাখা ভালো

    •     শাকের মধ্যে পোকা থাকলে কিছুটা জলে দু’চার ফোঁটা ভিনিগার দিয়ে তাতে কিছুক্ষণ শাক ডুবিয়ে রাখলে শাক পোকামুক্ত হবে৷
    •     আটার টিনে কয়েকটা তেজপাতা রাখলে আটা ভালো থাকে৷
    •     চাল–ডালের কৌটোয় শুকনো লঙ্কা, শুকনো নিমপাতা রাখলে পোকা সহজে ধরবে না৷
    •     ডাল চাটুতে একটু ভেজে নিয়ে কৌটোয় রাখুন, বেশী দিন রাখলেও পোকা ধরবে না৷ ডালকে কৌটোয় রাখার আগে তাতে অল্প তেল মাখিয়ে নিলেও পোকা ধরবে না৷