অনেকেই বলেন চান বাঙালীস্তানের আন্দোলনকে যা কখনই মেনে নেওয়া যায় না৷ এমন কথা যারা বলেন তাদের জানা উচিত বাঙালীস্তান কেন কি অন্য রাজ্যের দাবীর সাথে এর মিল রয়েছে কিনা? আমরা জানি যে আজকের যে ক্ষুদ্র বঙ্গ রয়েছে তা স্বাধীনতার পূর্বে এক বিশাল ছিল, ছিল বনজ-জলজ-খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণভূমি৷ কিন্তু এই বাঙালী জাতি ইংরেজদের প্রতি বিদ্রোহ করায় ও বাংলায় অনেক সম্পদ থাকায় সর্বপ্রথম ওরা বাঙলাকেই পঙ্গু করার চেষ্টা করল আর তাই এই বিশাল বাঙলার বিভিন্ন অংশকে বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে জুড়ে দিল৷ ফলস্বরূপ বাঙলার জনসংখ্যা অনুযায়ী আজ রয়েছে ছোট একটি রাজ্য ও বাঙালীরা হয়ে গেছে যাযাবর জাতি যে জাতি প্রত্যেকটি রাজ্যেই দেখা যাচ্ছে৷ সেই যে বৃহৎ বাঙলা ভাঙা হয়েছিল তা আজও অব্যাহত আছে৷ আজও বাঙলাকে ভাঙার চক্রান্ত চলছে কখনো বা গোর্র্খল্যাণ্ডের নামে আবার কখনো টিপরাল্যাণ্ডের নামে তাই আজ চাই অখণ্ড বাঙলা৷ আমরা জানি আমাদের এই মাতৃভাষাকে বিভিন্নসময় হেনস্থা করা হয়েছে, হিন্দী ও অন্যান্য ভাষার জন্যে আমাদের এই মাতৃভাষাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা হয়েছে, হিন্দী ও অন্যন্ন ভাষার জন্যে বাঙালীর আজ নিজ ভাষা ভুলতে বসেছে, শিক্ষাক্ষেত্রেও বাংলা ভাষাকে দূরে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ এই বাঙালী জাতির বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ করা হয়েছে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে কখনো বা বাঙাল খেদাও আন্দোলনের নামে আবার কখনও বিদেশী খেদাও আন্দোলনের নামে অথচ অন্যান্যদের কখনই বিদেশী বলা হচ্ছে না৷ তাই আমরা চাই আমাদের পরিচিতি৷ আজ যেহেতু রাজ্যভাগ এক ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে তাই অনেকেই আমরা বাঙালী সমাজের বাঙালীস্তানের আন্দোলনকেও একই চোখে দেখছেন কিন্তু তা কখনই এক নয়৷ কামতাপুর, গোর্র্খল্যাণ্ড, নাগালিম, টিপরাল্যাণ্ড ইত্যাদি আর অনেক রাজ্য তৈরির আন্দোলনের সাথে বাঙালীস্তানের আন্দোলনে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে৷ কেননা বাঙালীস্তান আন্দোলন হল প্রাউট ভিত্তিক আন্দোলন যেখানে সামাজিক উন্নতি সাধনের চেষ্টা অর্থাৎ সবার কল্যাণের চিন্তাভাবনার করা হয়েছে ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে৷ বাঙালীস্তান আন্দোলনের লক্ষ্য হল, প্রাউটের আদর্শের অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা অর্জন ও এইভাবে আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্বৈকতাবাদের প্রতিষ্ঠা৷ অপরদিকে ঐসব রাজ্যের আন্দোলনে কখনই এমন চিন্তা ধারায় করা হয় নি ও করতে ওরা চায়ও না৷ প্রাউটে বলা হয়েছে কোন অঞ্চলে যদি কোন সামগ্রী উৎপাদিত হয় তবে সর্বপ্রথম সেই অঞ্চলেই ব্যবহার করতে হবে এরপর অবশিষ্ট যা থাকবে তা-ই বাইরে যাবে এবং সেই অঞ্চলের জনগণদের সেই অঞ্চলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে ও প্রাউট তা করবে অপরদিকে ঐসব রাজ্যে (যা আজও নতুন রাজ্যের দাবী উঠছে) এতে স্থানীয় জনসাধারণের সর্বপ্রকার উন্নতি সাধনের চিন্তা ভাবনা কখনই করা হচ্ছে না ফলস্বরূপ সেই রাজ্যগুলির জনসাধরণ বহির্রাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছে৷ আমাদের প্রশ্ণ হল এখন যে রাজ্য রয়েছে সেই রাজ্যকেই উন্নতি করতে পারছে না আর নতুন রাজ্য পাওয়ার পর এরা কেমন ধরণের উন্নতি করবে৷ আজ বহুল প্রচলিত বহিরাগত শব্দটি প্রায় শুনে থাকি যার অর্থ খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাত রঞ্জন সরকার৷ প্রাউটে বহিরাগত তাদেরই বলা হয়েছে যারা একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাস করে সেখানে আয় করে অন্য অঞ্চলে অর্থ পাটায়৷ অর্থাৎ সেই্ অঞ্চলের উন্নতির স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করে অর্থের বহিঃস্রোত ঘটিয়ে বাঙালীস্থানের আন্দোলন সামাজিক তথা অর্থনৈতিক উন্নতি করার আন্দোলন তাই তা কখনই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নয়৷
- Log in to post comments