ভারতীয় মানুষ রাজনীতির এক বিষাক্ত বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে৷ দেশীয় পুঁজিপতিরা এই বৃত্তের কেন্দ্রে থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে৷ ১৯৩৮ সালে সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর লণ্ডনে ভারতীয় ছাত্রদের এক সমাবেশে ভাষণ প্রসঙ্গে বলেন---‘‘দেশীয় পুঁজিপতিদের সহযোগিতায় ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শক্তি অর্জন করছে৷ এদের বিরুদ্ধেও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে৷ শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, মানুষকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও দিতে হবে৷’’
কি মারাত্মক ভাষণ একবার চিন্তা করুন৷ একদিকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, আবার দেশীয় পুঁজিপতিদের ব্রিটিশ তোষণ চরিত্র, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দুর্গে দাঁড়িয়ে কথাগুলি বললেন সুভাষচন্দ্র বসু৷ তখনকার কংগ্রেস নেতাদের কাছে কথাগুলো আজব মনে হলেও দেশীয় পুঁজিপতিদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ এই সাংঘাতিক লোকটাকে আর বাড়তে দেওয়া উচিত হবে না৷ শুরু হলো এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র৷ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতার কলঙ্কিত ইতিহাস৷ সে ইতিহাস জনগণের আজও অজ্ঞাত৷ সেও আর এক কলঙ্কিত অধ্যায়৷ ২০১৪ সালের নির্বাচনে সে ইতিহাস প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেননি নরেন্দ্র মোদি৷ রাখা সম্ভবও নয়৷ কারণ সে কলঙ্কিত ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত অনেকেই (গান্ধী, প্যাটেল প্রভৃতি) পশ্চিম ভারতের৷ তা ছাড়া এই মূহূর্তে দেশী বিদেশী সমস্ত পুঁজিপতিদের সবথেকে ভালো বন্ধু নরেন্দ্র মোদি৷ যাই হোক, প্রসঙ্গে ফিরে আসি৷ সুভাষ চন্দ্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার হলো৷ কংগ্রেস, আর এস তো বটেই, এমনকি কমুনিষ্টরাও সেই সেই ষড়যন্ত্রে জড়িত৷ তার পরের ইতিহাস আজও অজ্ঞাত, শুধু আমরা জানি সুভাষ চন্দ্র আর কংগ্রেস থাকতে পারেন নি, দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন৷ তাঁর পরিণতি অজনা৷
আজ দেশীয় পুঁজিপতিরা রাজনৈতিক দলগুলোকে এক বিষাক্ত বৃত্তের পরিধিতে বেঁধে রেখেছে৷ বৃত্তের কেন্দ্রে বসে ওই পুঁজিপতি শোষকরা ডান বাম সব দলকেই নিয়ন্ত্রণ করছে৷ ওরাই দেশের আসল শাসক৷ তাইতো গরিব কৃষক ঋণ মুকুব চাইলে গুলি খায়, আর ওইসব পুঁজিপতিদের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মুকুব হয়ে যায়৷
আর জনগণ! তাদের জন্যে পাড়ায় পাড়ায় গন্ডি কেটে দেওয়া হয়েছে৷ অমুক পার্টি, তমুক পার্টি, চটুল রসের গান, সিনেমা, ক্যাবারে ক্রিকেট (আই.পি.এল), ক্যাবারে ফুটবল (আই.এস.এল), মাঝে মাঝে দেশপ্রেমের বাই৷ সোজা কথা এই বিষাক্ত বৃত্তের বাইরে এসে নোতুন কিছু ভাবার সুযোগ সময় নেই৷
তবু নোতুনের আহ্বান এসেছে৷ সব সময়ই সবদেশের কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ থাকে৷ তারা কোন াধা মানে না৷ কোন কিছুই তাদের েঁধে রাখতে পারে না৷ নোতুনের আহ্বানে তারা সব সময় ছুটে চলেছে৷ সুভাষ চন্দ্র স্বপ্ণ দেখেছিলেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথ দেখালেন পরম শ্রদ্ধেয় দার্শনিক ঋষি শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার৷ তাঁর দেওয়া সামাজিক-অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রাউট৷ ওই বিষাক্ত বৃত্তের কেন্দ্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রাউটের পথে আসবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা৷ মুক্তির অন্য কোন পথ নেই৷
- Log in to post comments