বিশল্যকরণী  গণর্থনীতি  প্রাউটের  বাস্তবায়ন জরুরী

লেখক
প্রভাত খাঁ

বর্ত্তমানে সারা পৃথিবীর জীবজন্তু গাছপালার সঙ্গে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ সবাই অত্যন্ত চরম সংকটের মধ্যে বাস করছে৷  প্রত্যেকটি সৃষ্ট সম্পদই দিশেহারা ও কেমন করে নিজ নিজ অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখবে তারই জন্যে৷ তার উপর প্রায় দু’বছর হলো সংক্রামক ব্যাধী করোনা নানারূপে আবির্ভূত হয়ে মানুষের সমাজগুলিকে আক্রমণ করে ধবংস করে চলেছে৷ এদিকে কয়েকটি শক্তিশালী রাষ্ট্র তাঁদের আগ্রাসী নীতিকে ফলপ্রসু করতে নোতুন নোতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত৷ সীমান্ত সীমান্তে সংঘর্ষ হয়েই চলছে৷ এই যুগকে যারা অত্যাধুনিক সভ্যযুগ বলে অহংকার করে তারাও আজ যেন আত্মবিশ্বাস হারিয়ে বসেছে! এরই মধ্যে কিন্তু মহামানবের সাগর তীরে সেই বিশ্বকবি যিনি বিশ্বৈকতাবোধের উদ্‌গাতা তিনি বলে গেলেন (যেথায় আর্য হেথায় অনার্য অর্থাৎ এই ভারতবর্ষে সারা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মানুষ যেমন শক, হুন, পাঠান, মোগল, আর্য, অনার্য, দ্রাবীড় চীন সবাই হেথায় এসে একই দেহেলীন হয়ে গেছে৷ ভারতবর্ষ সকলকেই বিশ্বভ্রাতৃত্বের কোমল স্পর্শে শুধু আশ্রয় দেয়নি তাদের আশ্রয় ও খাদ্য দান করে চিরকালের মতো আপন করে নিয়েছে৷ তাই এই মহান দেশ ভারতবর্ষ হলো মহামানবের সাগরতীর মহামিলনের তীর্থক্ষেত্র৷ কিন্তু বর্তমানে  যে মহাশক্তি  সেই অধ্যাত্ম দর্শন ভারতবর্ষের সেটি যেন আজ আর খণ্ডিত ভারতে নেই৷ সেই মহাশক্তিটি হলো অধ্যাত্মবাদে উদ্বুদ্ধ প্রাচীন ভারতবর্ষের মহান ঋষি মুনিগণের প্রদত্ত অধ্যাত্মবাদ  হতে এই দেশ যেন সরে গেছে! সেই যে মুনিগণের মহান বাণী’’ ‘‘শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ’’৷ এদেশ আজও কুসংস্কার, জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা উচ্চ নীচ ভেদাভেদে টুকরো টুকরো  হয়ে কিছু রাজনৈতিক দলীয় নেতৃত্বের জঘন্য ষড়যন্ত্রের কবলে ধবংস হতে চলেছে৷ যারা একদিন এদেশে  আশ্রয় নিয়েছিল ক্ষুন্নিবৃত্তির, জন্য তারাই সেই ইংরেজ বণিকদল চরম বিশ্বাসঘাতকদের  যেমন মীরজাফর, জগৎশেঠ, উমিচাঁদদের  দেশদ্রোহীতার কারণেই ইংরেজ রাজশক্তির শোষণের যাঁতা কলের পড়ে যায় দেশে৷ এই মহামানবের সাগরতীর সৃষ্টি হয়৷ শোষিত নির্যাতীত কোটি কোটি অন্নহীন ক্ষুধার্ত্ত নরনারীর দেশ! তারাই সেই ইংরেজ শাসনগণ যখন বিদায় নেয় সেই বিদেশী বণিক দেশটাকে তুলে দেয় এমন একদল রাজনৈতিক দলের হাতে যারা সেই মহান ভারতবর্ষের কথা অস্বীকার করে হিন্দু, মুসলমান দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সেই ক্ষমতালিপ্সু নেতাদের  হাতে  শাসনভার তুলে দেয়৷ যারা  হয়তো কিছু ভালো করতে চেয়ে ছিল কিন্তু পারেনি৷ তার মূল কারণ প্রকৃত দেশ সেবকগণ সুযোগ  পান  ভারতবর্ষের  জনগণের  পূর্ণ স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর সেবা দিতে যিনি চেয়েছিলেন তাঁকেই  নানা ষড়যন্ত্রের ফাঁদে ফেলে দেশ থেকে উচ্ছেদ করে৷ আজও  সেইসব দলছুট জাতীয় দল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা দলগুলো কিছু ধনীদেরই সেবাদাস হয়ে দেশটিকে ধবংসের পথেই নিয়ে চলেছে৷ এটা আজ বুঝে এমন কোন দেশ নেতা নেই যিনি বা যাঁরা একে রক্ষায় এগিয়ে আসেন৷  তবে হ্যাঁ! বিশ্বস্রষ্টা কিন্তু অপেক্ষা করেননি এই মহান ভারতবর্ষকে তথা বিশ্বকে সর্বনাশা ধবংসের হাত থেকে রক্ষা করতে৷ তাই সেই বিংশো শতাব্দীতেই তৃতীয় দশকে আবির্ভূত হন এক মহামানব যিনি মহাসম্ভূতি শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ওরফে মহান দার্শনিক শ্রদ্ধেয় প্রভাতরঞ্জন সরকার যিনি বিশ্বের সর্বরোগহর এক বিশল্যকরণী দান করেন যার নাম আনন্দমার্গ দর্শন৷ এই দর্শন হলো ৩৬০০ ডিগ্রি৷ সেখানে  কোন অপূর্ণতা নেই তা পারেন৷ সারা বিশ্বের সকল সমস্যা দূরীকরণে, সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে তিনি প্রাউট দর্শন দেন যাকে বলা হয় প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব৷ তাঁর লক্ষ্য হলো এখন এক মানব সমাজ গড়তে  হবে যেখানে কোন জাত পাতের ভেদাভেদ থাকবে না৷ প্রত্যেকটি মানুষ হলো সেই বিশ্বস্রষ্টার প্রিয় সন্তান৷ মানুষকে  অধ্যাত্ম সাধনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে কারণ মানুষ কোন ইকনমিক জীব নয় মানুষ হলো আধ্যাত্মিক প্রাণী৷ মানুষকে সমানভাবেই দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটিয়ে একজন সার্থক মানুষ হতে হবে৷ কুসংস্কার মুক্ত হলেই তবে সেই মানুষ মানবিক মূল্যবোধকে মান্যতা দেবে নচেৎ নয়৷ তাই তিনি শ্লোগান দেন বিশ্বের নীতিবাদীরা এক হও তবে বিশ্ব শোষণমুক্ত হবে৷  এই ভারত যেখানে সৎনীতিবাদী মানুষদের বাসভূমি ছিল৷ আজ সেখানে প্রাদুর্ভাব ঘটেছে স্বার্র্থদ্বেষী ধনী গোষ্ঠীর৷ গণতন্ত্রে কোনদিনই ধনীদের শাসন কল্যাণকর নয় আজ কিন্তু  দেখা যাচ্ছে ধনীরাই দেশকে পরোক্ষ প্রত্যক্ষভাবে শাসন করে  জনগণকে  ভয়ংকর  শোষণই করে চলেছে ফলে চারিদিকে চরম অবক্ষয়৷ ধনী ও কমিউনিষ্টদের শাসনে  মানুষ ভাতে ও আঁতে মরছে৷ নৈতিক মান শূন্য হচ্ছে তাই দেশ পদে পদে   ধবংসের দিকে চলে যাচ্ছে৷ তাই আজ দরকার দেশের  সামাজিক ও আর্থিক উন্নতিকরণে প্রাউটের গণর্থনীতিকে উৎসাহ দেওয়া ও তাকে আহ্বান করা৷ আর্থিক উন্নতি ঘটাতেতো  প্রত্যেক কর্মক্ষম তরুণ তরুণীকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা৷

ব্লকভিত্তিক ব্যাপক সমবায় আন্দোলনকে উৎসাহ দেওয়া৷ চরম বেকার সমস্যা বাড়ছে ধনী ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক কারসাজিতে৷ কর্মদ্যোগকে বাড়াতে দরকার জনসংখ্যা বহুল দেশে ব্যাপকভাবে যাতে সকলে কর্মক্ষম হয় তাই কাজের  সুযোগে বাড়ানো৷  নগর ও শহর ভিত্তিক কলকারখানাতে এটা  হয় না৷ ব্লকে ব্লকে  ছোট ছোট সমবায়ভিত্তিক কৃষি ও শিল্পে কর্ম  করার সুযোগ বৃদ্ধি করা৷ সেটা হচ্ছে না৷ একজনকে বিরাট অঙ্কের বেতন দিয়ে পোষার চেয়ে বহু কর্মপ্রার্থীকে কাজের সুযোগ  দিয়ে কাজ করানোটাই সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা৷ এটাকে মান্যতা ও স্বীকৃতি দিতেই হবে৷ নচেৎ কর সংগ্রহ করে সরকার চালাবার মানসিকটাই হলো ধনীদের সেবাদাস হয়ে মেকী গণতন্ত্রের জয় ঢাক পেটানো৷ সেদিন আজ আর নেই৷ তাই দেশের শাসকগণকে ধনীদের শোষণ করে জনগণকে সেবা দিতে তাদের সেবক হতে হবে ও নেতা অবশ্যই সংযত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে৷

 বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ যে ‘‘ঐ মহামানব আসে’’ আহ্বান দিয়ে ছিলেন তিনি সেই মহামানব এসেছিলেন ও লোক চক্ষুর আড়ালে থেকে কঠোর পরিশ্রমে তিনি বিশ্বসন্তান সবকিছু  দিয়েই  নীরবে চলে গেছেন৷ তাই তিনি  বলতেন, আমি রহস্য  আছি, আামি রহস্য ছিলাম ও  রহস্য থাকবো৷’’ তাই আজ চোখ খুলে তাঁকে বুঝতে হবে  ও বাঁচার পথ পাওয়া যাবে৷

প্রাউটের  মতে গণর্থনীতিকে মান্যতা দিতে হবে কিন্তু ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাতে সেটা হয় না৷ ধনতন্ত্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হলো শোষণের উপর  সমৃদ্ধি তাই ধণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাটাই হলো মারাত্মক৷ ভারত সরকার তাতেই আটকে আছে আর ধনীদের  পোষন করছে  ও জনগণকে নির্মমভাবে শোষণ করে চলেছে গত ৭৫বছর ধরে মেকী স্বাধীনতার নামে৷

এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো মিথ্যাচারী ও ধনীর সেবাদাস৷ তাই যাঁরা প্রাউটের তত্ত্বে বিশ্বাসী তাদের  অবশ্যই কালক্ষয় না করে পবিত্র কর্ত্তব্য হলো দেশের আর্থিক  ও সামাজিক উন্নয়ণে প্রাউটের বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বাস্তবায়িত করার কাজ আরম্ভ কর৷  শুধু তাত্ত্বিক আলোচনায় প্রাউট প্রতিষ্ঠিত হবে না৷ মহান দার্শনিকের পরামর্শই হলো প্রাউটকে ব্লকভিত্তিকপরিকল্প্ মাধ্যমে বেসরকারীভাবে এগিয়ে চলা৷ সেই পথ হয়তো সর্বদা মসৃন হবে তা কিন্তু নয়, কিন্তু জনগণকে  নিয়ে প্রাউটিষ্টদের তো সচেষ্ট হতে হবে এর বাস্তবায়নে৷ সেটাই সার্থকভাবে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমাজ সেবা দেওয়া৷

সময় অপেক্ষা করে না তাকে কাজে লাগানোটাই প্রকৃত দেশসেবকদের কাজ৷ দরিদ্র মানুষের মুখে দু’মুঠো খাদ্য তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করাটাই হলো প্রকৃত প্রাউটের --- সার্থক সেবক হওয়া৷

তত্ত্বে চিঁড়ে ভেজে না একথাটা সবাই জানে তাই আজ দরকার প্রাউটের বাস্তবায়ন কারণ ধনী গোষ্ঠী যারা ধনীদের সেবা দেয় তারা কিন্তু জনসেবক হিসাবে দেখা দেয় না শোষণ করাই তাদের নীতি৷