বিশুদ্ধ ও আজ্ঞাচক্রের উপর মহাবিশ্বের জ্যোতিষ্ক সমূহের প্রভাব

লেখক
সমরেন্দ্রনাথ ভৌমিক

এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মহাকাশের জ্যোতিষ্কদের উৎপত্তি সম্পর্কে বলেছেন --- নীহারিকা থেকে তারা জগৎ বা ছায়াপথ Nebula) তৈরী হয়েছে৷ আমরা যে তারা জগৎ বা ব্রহ্মাণ্ড Galaxy) এর মধ্যে বাস করি তা মোটামুটি  দশহাজার কোটি (১০,০০০কোটি) নক্ষত্র নিয়ে গঠিত হয়েছে৷ এই বিপুল সংখ্যক নক্ষত্র বা তারাদের মধ্যে সূর্য হল একটি তারা, আর এই তারাকে  কেন্দ্র করে পৃথিবী নামক গ্রহটি ঘুরে চলেছে৷ আমরা হলাম এই পৃথিবী গ্রহের বাসিন্দা৷ আমাদের ব্রহ্মাণ্ড (Galaxy)টির কেন্দ্র হ’তে ৩৩০০০ আলোকবর্ষ দূরে৷ আমরা হ’লাম ওর শহর তলীয় বাসিন্দা৷ মহাকাশের বুকে এরূপ অগণিত ব্রহ্মাণ্ড সমূহকে নিয়ে গঠিত হয়েছে মহাবিশ্ব Universe)৷ এখন, এই মহাবিশ্বের জ্যোতিষ্ক সমূহের সঙ্গে আমাদের এই মানব দেহের বিশুদ্ধচক্র ও আজ্ঞাচক্রের সহিত এক নিবিড় সম্পর্ক আছে৷ আমাদের এই সৌরজগৎ ও সৌরজগতের বাইরে কোটি কোটি আলোক-বর্ষ দূরে যে অগণিত নক্ষত্র, নীহারিকা, ছায়াপথ, ধূমকেতু প্রভৃতি জ্যোতিষ্ক সমূহ আছে, এরা প্রত্যক্ষভাবে আমাদের মানবদেহের বিশুদ্ধ চক্র ও আজ্ঞাচক্রকে, তথা সামগ্রিকভাবে  আমাদের শরীরকে প্রভাবিত চলেছে৷ এই সমস্ত জ্যোতিষ্ক সমূহের প্রতিফলিত ও প্রতিসৃত রশ্মির প্রভাব থেকে কোন মানুষই মুক্ত নহে৷

বিশুদ্ধ চক্রের উপর মহাবিশ্বের সমস্ত জ্যোতিষ্কদের প্রভাব সম্পর্কে শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বে বলেছেন---‘‘আমাদের এই মানব শরীরের বাম কানের নীচের হতে ডানকানের নীচের বিন্দু পর্যন্ত বিস্তৃত অংশটি হ’ল ‘নক্ষত্র মণ্ডল’ এবং এর নিয়ন্ত্রক বিন্দুটি controling point) হ’ল এর ঠিক মাঝখানে৷ প্রত্যেক চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন গ্রন্থি উপগ্রন্থি আর তাদের মাঝখানে বীজমন্ত্র সহ বৃত্তিগুলির অধিষ্ঠান৷ বিশুদ্ধচক্রে আছে মোট ১৬টি বৃত্তি৷ বিশুদ্ধচক্র ও তার অন্তর্ভুক্ত গ্রন্থি উপগ্রন্থি প্রভৃতিকে নিয়ে তৈরী হয়েছে নক্ষত্র মণ্ডল circle)৷

এখন, আমাদের সৌর জগতের বাইরে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে যে সমস্ত জ্যোতিষ্করা রয়েছে, তারা প্রত্যেকে প্রত্যক্ষভাবে মানব শরীরের বিশুদ্ধ চক্রকে তথা সমগ্র মানব শরীরকে প্রভাবিত করে৷ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যত জ্যোতিষ্ক আছে প্রত্যক্ষভাবে অথবা অপ্রত্যক্ষভাবে মানব শরীরের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে সম্পর্কিত৷ চেতন বা অচেতন সকল বস্তুর উপর এই প্রভাব রয়েছে, তবে সূর্য যেহেতু আমাদের খুব নিকটবর্তী, সেহেতু সূর্যের প্রভাব আমাদের দেহে বেশী মাত্রায় সংহত হয়৷ বিশুদ্ধ চক্র ও আজ্ঞাচক্রে  সর্বাধিক মোট ১৮টি আলোক রশ্মির প্রভাব পড়ে৷ এই ১৮টি আলোক রশ্মির মধ্যে সূর্য হ’তে আসে ৭টি (সাতটি) রংয়ের রশ্মি ‘বেনীআসহকলা’৷ ‘বেনীআসহকলা’-কে ইংরাজীতে বলে---VIBGYOR’ এখানে, ‘বে’---বেগুনী রং,‘নী’---নীল রং,‘আ’---আসমানী, ‘হ’---হলুদ, ‘ক’---কমলা, ‘লা’---‘লাল’৷ এছাড়া রয়েছে অতি বেগুনীর রশ্মি Ultra-violet ray) ও অবলোহিত রশ্মি infrared ray)৷ তা হলে (+২) বা ৯টি আলোক রশ্মি৷ এখন,এই ৯টি আলোকরশ্মি ‘আভ্যন্তরীন’ ও ‘বাহ্যিক’ দুইভাবেই কাজ করে৷ সুতরাং (+৯) বা ১৮টি রশ্মি কাজ করে৷ আবার, এই ১৮টি রশ্মির মধ্যে ২টি রশ্মি সরাসরি সূর্য্য দেহ হতে আসে না, আসে চন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে৷’’

শ্রী সরকার তাঁর মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বে এ সম্পর্কে আরও বলেছেন---সব সত্ত্বা বা গতিশীলতা বা ক্রিয়াশীলতার মূল ধবনিগত উৎসারন আছে, যাকে বীজমন্ত্র বলা হয়৷ সমস্ত গ্রহ নক্ষত্রের বীজমন্ত্র হচ্ছে---‘হ’, এই অনন্ত পরিব্যাপ্ত মহাশূন্যের বীজমন্ত্রও হচ্ছে---‘হ’৷ নাভি ও তার নীচের চক্রগুলিতে সব রকমের আলোক রশ্মির যে প্রভাব তার বীজমন্ত্র হচ্ছে---‘ক্ষ’৷ মাইক্রোবাইটাম এই তন্মাত্রগুলিকে তার মাধ্যমরূপে ব্যবহার করে৷ পজিটিভ ও নেগেটিভ মাইক্রোবাইটাম বিশুদ্ধ চক্রে ১৬টি ধবনিবীজের  মাধ্যমে বিশুদ্ধচক্র ও মানব শরীরকে প্রভাবিত করে৷ মানুষের দুই চোখের শেষপ্রান্ত বিন্দুর মধ্যবর্তী স্থানটি হ’ল আজ্ঞা চক্রের এলাকা৷ আজ্ঞাচক্রের সম্পূর্ণ স্থানটিকে বলা হয়--- ‘শশী মণ্ডল’৷ এই চক্রের দুটি বৃত্তি ও দুটি বীজ মন্ত্র আছে৷ এরা হ’ল---

 (১) পরা---‘হ’

(২) অপরা---‘ক্ষ’

 চন্দ্র থেকে যে আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হয় সেই রশ্মি সম্মিলিতভাবে মানব শরীরের নাভির উপরের অংশকে ও নাভির নীচের অংশকে প্রভাবিত করে৷’’ তা হ’লে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের সৌরজগৎ ও সৌরজগতের বাহিরের জ্যোতিষ্ক হতে আগতরশ্মি সমূহ সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে আমাদের শরীরকে কিভাবে প্রভাবিত করে চলেছে৷