যদি এ দেশে কাজ বেশী আর কথা কম হতো তা হলে মনে হয় হতভাগ্য দেশটি অনেক দূর এগিয়ে যেত৷ তা কিন্তু হয়নি৷ আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাননীয় জহরলাল নেহেরু আমেরিকা গিয়ে টেনেসি নদীর বাঁধ দেখে ভাবলেন এদেশেও এই ধরণের বাঁধ করলে বহুমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে অনেক কাজ হবে৷ তাই ডি. ভি. সি. (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশান) ও এই ধরণের অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়৷ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা খরচ করে অনেক কিছু করা হয় কিন্তু এদেশের মাটি ও বর্ষার পাগলামী ইত্যাদির কথা স্মরণ রেখে যে যে কাজ করা দরকার ছিল তা না হওয়াতে অনেক ভালো চেষ্টাও শেষে উন্নতির দিকে না গিয়ে অনেক নতুন নতুন সমস্যায় দেশকে নাস্তানাবুদ করে চলেছে৷ বিশেষ করে পশ্চিম বাংলার নিম্নাঞ্চল দিয়ে সারা পূর্ব ভারতের নদনদীগুলির জল বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে৷ এদিকে নদনদী–নালা, খাল–বিলগুলি মজে যাওয়াতে জল ধারণের ক্ষমতা নদীগুলি হারিয়ে বসেছে৷ তা ছাড়া বাঁধগুলিতে যে জল ধরার কথা সেগুলিতে যখন প্রবল বর্ষায় জল পড়ে তখন বাঁধ রক্ষার জন্যে ঠিক বর্ষার সময়ে জল ছাড়া হয় হাজার হাজার কিউসেক ফলে সেই মজে যাওয়া নদনদীগুলির নিম্নাঞ্চল জলমগ্ণ হয় ও বন্যায় হতভাগ্য চাষীদের কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়৷ চাষী যে তিমিরে সেই তিমিরে পড়ে জীবন ভোর মার খেয়েই চলে৷
দক্ষিণবঙ্গের হাওড়া, হুগলী, প্রভৃতি জেলাগুলি ডিভিসির অপরিণত পরিকল্পনা ও সময় মত ড্রেজিং না হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গকে ভাসিয়ে দেয়৷
এছাড়া উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি নদীগুলোতে হড়কা বান আসে বর্ষায় কিছু এলাকা ডুবে যায়৷ তাতে ক্ষতি হয় প্রচণ্ড৷
এছাড়া বঙ্গোপসাগরের জল বর্ষার সময় ভরা– কোটালে প্রচণ্ডভাবে জল বাড়ে৷ সেই সময় দক্ষিণ বাংলার নদনদী যেগুলি সাগরে পড়েছে তাতে জলের চাপ প্রচণ্ডভাবে বেড়ে যায় ফলে নদীবাহিত বানের জল নদীগুলির দুর্বল কাঁচা বাঁধকে ফাটিয়ে দিয়ে অনেক ক্ষতি করে থাকে৷ তাতেও গরিব মানুষদের ঘরবাড়ি চাষের জমি ডুবে যায় ও আর্থিক ক্ষতি হয় প্রচণ্ড৷
এবারেও উত্তর বাংলার অনেক এলাকা বন্যায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ দক্ষিণ বাংলার নিম্নাঞ্চচলের মানুষের কথাতো বলার নেই৷
সবচেয়ে সমস্যার কথা হলো নদনদীগুলির জলধারণের ক্ষমতা একেবারে কমে গেছে৷ প্রতিটি নদনদী যেমন অজয়, দামোদর, গঙ্গা (ভাগীরথী) দারকেশ্বর, দক্ষিণের আর উত্তরের জলঢ়াকা, তোর্ষা, কালচিনি পাহাড়ি নদীগুলির গভীরতা বলতে কিছু নেই৷ তাই এগুলির সংস্কার জরুরী৷ তাছাড়া বহু খালবিল মজে গেছে৷ দামোদরের নামই তো কানা দামোদর হয়েছে, তাই চাষের জমি বাড়িঘর রক্ষা, নদী তীর বাঁধা ও গভীরতা রক্ষায় পলি তুলে দু’পাশে ফেলে নদনদীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে পশ্চিম বাংলা বাঁচবে৷ তাই এ ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করতে হবে৷ বাংলার কম বেশী বন্যা হবেই তাই জনগণ ও সরকারকে সচেতন থাকতে হবে যাতে বন্যায় মানুষের মূল্যবান প্রাণ যেন না যায় আর সাবধানতার অভাবে তারা বাস্তুচ্যুত না হয়৷ বন্যাপ্রবণ এলাকার পঞ্চায়েত, পৌরসভাগুলিকে অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে বর্ষার সময়৷ স্বেচ্ছাসেবক সংঘটনগুলিকে প্রয়োজনে আহ্বান করতে হবে ও তাদের সুযোগ দিতে হবে দুর্গত মানুষদের সেবা দিতে৷ সংঘবদ্ধভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করেই এ রাজ্যের মানুষকে বাঁচতে হবে৷
পরমাত্মার অমৃতের টিকা পরেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করেই বাঁচবে৷ তবে বর্তমানে সরকার ও জনগণকে যৌথভাবে উন্নয়ণমূলক কাজ করে যেতে হবে দলমত নির্বিশেষে৷ মানবিক মূল্যবোধের যেন অভাব না হয়৷
- Log in to post comments