বর্তমান বিজেপি শাসনে ভারতবাসী

লেখক
হরিগোপাল দেবনাথ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

এবারে আমি, বর্তমানের বিজেপি জমানায় আর বিশেষ করে মোদী-শাহের জুটির শাসনামলে ভারতবাসী কতটুকু ‘‘ভাল আছেন’’ সেই প্রসঙ্গের কিঞ্চিৎ বিশ্লেষণে৷ মোদিজীর  প্রথমবারের লোকসভা নির্বাচনে ২০১৪ সালে ভারতবাসীকে যে-সব প্রতিশ্রুতির পাঁচালী শুণিয়েছিলেন, সেই পাঁচালী দিনরাত আদ্যোপান্ত যাঁরাই পাঠক্রিয়া অবিরাম গতিতে চালাতেন তাঁরা কতটুকু প্রতিশ্রুতিরক্ষার মূল্য লাভ করেছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস এতদিনে তারা কিছু না কিছু নিজেদের আত্মবিশ্বাস আর সৎপথে শ্রদ্ধাপ্রদর্শনের মূল্যায়ণও কিছু না কিছু করতে পেরেছিলেন বলেই দ্বিতীয়বার লোকসভা নির্বাচনে পুনরায় মোদীজীর উপরই  আস্থা স্থাপন করতে আদৌ কুন্ঠিত ছিলেন না৷ তাইতো দ্বিতীয়বারের নির্বাচনেও কেন্দ্রে উজির এ আজম্‌ (প্রেমিয়ার)-এর মসনদ মোদিজীকেই অর্পণ করেছিলেন৷ তাই, প্রথমবারে যা’ যা’ করতে পারেন নি দ্বিতীয়বারে পূরণ  করতে স্বয়ং দিল্লীস্বরই হাত বাড়ালেন৷ তাই, এখন দেখার বিষয় ‘‘দিল্লীরশরো জগদীশ্বরো বা’’ কতটুকু কী কী করে চলেছেন!

ইতিহাসপাঠ থেকে জানা যায়, গত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাজারে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মজুতদারগণ ও মুনাফাখোরগণ খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির আকাল সৃষ্টি করে ও দ্রব্যাদির মূল্য দ্বিগুণ থেকে চৌগুণ বাড়িয়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গিয়েছিলন অনেকে৷ শুণেছি আবার যুদ্ধের বাজারেই জোয়ারের জলের মতই কাঁচা পয়সার প্লাবন দেখে রাতারাতি অনেক ব্যাঙেরাও নাকি হাতী সাজতে গিয়ে বেঘোরে পড়ে রীতিমত নাস্তানাবুদও হয়েছিলেন৷ বর্তমান বাঙলাদেশের ও পূর্বতন পূর্ব বাঙলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের  মুক্তিসংগ্রাম তো নিজেরাই আমরা চোখে দেখেছি কী প্রকারে আমাদের জানা-চেনা পুঁটি-খলসেরা বড় বড় রুই-কাৎলা-মৃগেল বা অতিভাগ্যের জোরে রাঘব বোয়ালও বনে গিয়েছিলেন৷ তো আমাদের ওই জুটির সময়ে সারা পৃথিবীর সঙ্গে সমান্তরাল দৌড় বজায় রাখতে গিয়ে লক-ডাউন পরিস্থিতিতে ভারতবাসীদের সামাজিক অর্থনৈতিক জীবনে যখন সর্বনাশ এসে হাজির হয়েছিল সেই সুযোগেই ভারতীয় ধনকুবেরদেরও কপাল খুলে গিয়ে ইডেন-গার্ডেনের মতই চওড়া হয়ে গেছে

অতি সম্প্রতি মোদীজীর ‘ডিজিটাল’ ও ‘ক্যাশ লেস ইন্ডিয়ার’ এক ডিজিটাল মাধ্যমে দেখা গেল, লক্ষ লক্ষ কোটি’ টাকার বিজনেশ-মুনাফা হবার সুবাদেই তাদের নাকি মহোৎসব পালনের পৌষমাস চলে এসেছে৷ অর্থাৎ কারোর পৌষমাস তো কারোর সর্বনাশ!

মিডিয়াযোগে বা ডিজিটাল মাধ্যমে আরও জানা যায় ভারতে গত ২০১৪ সালে যেক্ষেত্রে লিটার প্রতি পেট্রলের  দাম ছিল ৭১.৫১ টাকা সেক্ষেত্রে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ছিল ৮৫.৭৫ টা আর ডিজেলের যা ছিল ৫৭.২টাকা তা হয়েছিল ৭৫.৮৮টাকা মাত্র৷ গত ৬ বছরে মোদী সরকার একসাইজ ডিউটি বাড়িয়েছেন--- পেট্রোলে ২৩.৭৮ টাকা ও ডিজেলে ২৮.৭০ টাকা মাত্র৷ এভাবে অন্তঃশুল্ক বাড়িয়ে বাড়িয়ে গত ৬ বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের উপার্জনের বহর নাকী বেড়েছে মোট প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা৷ কিন্তু, প্রশ্ণ হল, যাঁরাই ‘‘মন কী বাত’’ রীতিমত শুণছেন তাঁরা কি ঘুণাক্ষরেও কিছু জানেন যে উক্ত ২০ লাখ কোটি টাকা কোথায় গেল? কাদের পেটে  বা পকেটে ঢুকল? বোধ হয় জানে না, কেননা জানবার নয় তাই৷ যেমন অতীতে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, বিদেশে গচ্ছিত ভারতীয়দের কালো টাকা উদ্ধার করে এনে ভারতবাসীকে মাথাপিছু ১৫ লাখ করে টাকা পাইয়ে দেবেন৷ তদুপরি কালো টাকা ধরতে ও সন্ত্রাসবাদী কর্তৃক টাকার লেন-দেন বন্ধ করতে মোদী সরকার দেশে নোটবন্দী করলেন৷ এর সুফল না কুফল কোন্‌টা পেলেন--- ভারতবাসী একটিবার ভাবুন৷ দেশের নাগরিকত্ব আইন তথা ‘এন.আর,সি’ ‘সি.এ.এ’ গ্যাঁড়াকলের  শিকার হলেন লক্ষ লক্ষ অসম রাজ্যবাসী বাঙালী৷ মোদিজীর প্রতিশ্রুতি হাওয়া হয়ে গেল৷ প্রতিবছরে  দুকোটি লোকের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি এখন বাতাসযোগে ভারতবাসীকে বিদ্রূপ-বাক্য শোণাচ্ছে মাত্র৷

এখন আবার, পশ্চিমবঙ্গকে মোদী-গভর্ণমেন্ট ‘টার্গেট’’ করেছেন--- ২০২৪-এ পশ্চিমবঙ্গের গেরুয়াকরণ চাই---রামের কেত্তন করাও চাই৷ তাই, মীরজাফরদের ধোঁকা দিয়ে বোকা বানাতে ‘সোনার বাঙলা’ গড়ার স্বপ্ণ দেখিয়াছেন৷ জানি না, বাঙালী হিসেবে ‘ভারতবাসী’ অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গবাসীর আবারও খলের ছলনায় মাকাল্‌-ফলকে আপেল ভেবে তাতে কামড় বসাবেন কিনা৷ আরেকটি কথা--- খুংবই উদ্বেগের কারণ তাই বলছি৷ আন্তর্জাতিক বাজারে  অপরিশোধিত জ্বালানীর বাজারদর নেমেছে৷ অথচ, ইদানীং রামের ভারতে পেট্রোলের লিটার-প্রতি ৯২.০০ টাকা, সীতার নেপালের ৫৩.০০টাকা আর রাবণের শ্রীলঙ্কায় ৪১.০০ টাকা৷ একেই কি বলে ‘‘মোদী-শাহজীকার’ ক্যারিশমা’৷ একটু ভেবে দেখবেন৷