বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বনাশা বিষবাষ্প

লেখক
শ্রী প্রফুল্ল কুমার মাহাত

মানুষ হচ্ছে অমৃতের সন্তান অর্থাৎ ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি৷ তাই সৃষ্টিকর্তা তার মধ্যে সঞ্চারিত করে দিয়েছেন বোধ, বুদ্ধি, বিবেক, বোধি, ইত্যাদি অজস্র মানবিক গুণাবলী ও মূল্যবোধের অফুরন্ত সম্ভাবনার সম্ভার৷ তারই বলে মানুষ জাতি আজ মানুষ অভিধায় ভূষিত৷ এই প্রভূত সম্ভাবনার কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই স্বামী বিবেকানন্দ শিক্ষার সংজ্ঞায় বলেছেন– ‘‘ড্রস্তুব্ভন্তুত্রব্ধন্প্ ন্ব্দ ব্ধড়ন্দ্ব প্পন্দ্বুন্ন্দ্রন্দ্বব্দব্ প্সন্দ্র ব্ধড়ন্দ্ব হ্মন্দ্বব্জন্দ্রন্দ্বন্ত্ প্তব্জন্দ্ব্ত্রস্তুম্ভ নু ত্ত্ত্রু.’’ অর্থাৎ মানুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত সুপ্ত সকল সম্ভাবনাকে বিকশিত করার নামই হচ্ছে শিক্ষা৷ তারই মডেল স্বরূপ তিনি বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশনের ছত্রছায়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন৷ মডেল মানে তো দৃষ্টান্ত৷ সেই সব মডেল মিশনারী স্কুল, কলেজগুলি বা সরকারী, আধাসরকারী, বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিত্ স্বামী বিবেকানন্দের সেই মহান শিক্ষাদর্শন ‘‘উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরাণ্ নিবোধিত’’ কত খানি প্রতিফলিত হচ্ছে তা আজ একটা বিরাট প্রশ্ণ চিহ্ণের সৃষ্টি করেছে৷

যাই হোক্ বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সর্বনাশা বিষবাষ্প ও বিষফলের মারাত্মক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে যুগপুরুষ ও শিক্ষাগুরু শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার প্রভাতসঙ্গীতের মাধ্যমে মানবজাতিকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন–‘‘মানুষ মানুষ হারায়ে হুঁশ, কোথায় চলেছ তুমি৷ / আকাশ বাতাস বিষিয়ে দিয়ে, নরক করে মর্ত্তভূমি৷৷’’ একথা আজ অস্বীকার করার উপায় নেই যে, শিক্ষাক্ষেত্রের দুষ্টচক্রের ঘুর্ণাবর্ত্তে পড়ে সমগ্র মানব জাতি আজ শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ভারত নয় সমগ্র বিশ্বে হাবুডুবু খাচ্ছে–বাঁচার জন্যে পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে৷ অবশ্য সে পথের সন্ধান শ্রীসরকার দিয়েছেন ও মানব জাতিকে মাভৈঃ বাণী শুনিয়েছেন৷ যাক সে কথা পরে আলোচনা করা হবে৷ বর্ত্তমান প্রেক্ষিতে শিক্ষার ক্ষেত্রে অশিক্ষা, কুশিক্ষার কিছু কিছু কুপ্রভাব সম্বন্ধে আলোচনা করা যাক্৷

বর্ত্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পুঁথিগত শিক্ষার ওপর সর্বাধিক বা সার্বিক গুরুত্ব দেওয়ার জন্যে তথাকথিত শিক্ষিতের হার গাণিতিক ও জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ বেকার তৈরী হচ্ছে৷ এদের সকলের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা কোন সরকারই করে উঠতে পারছে না৷ এরই পরিণতিতে গরীব শিক্ষিত বেকারেরা জীবনধারণের নূ্যনতম নিশ্চিততা পাচ্ছে না৷ অনেকেই আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে৷ অথচ প্রকৃতি প্রতিটি জীবের জন্যে, প্রতিটি মানুষের জন্যে অফুরন্ত সম্পদসম্ভার সঞ্চিত করে রেখে দিয়েছে, সম্ভাবনা তৈরী করে দিয়েছে৷ তাকে কাজে লাগানোর জন্যে উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ পরিকাঠামো তৈরী করা হচ্ছে না৷ বর্ত্তমান ভদ্রবেশী ছদ্মবেশী রাষ্ট্রনায়করা দেশনায়কদের এ ব্যাপারে সদিচ্ছার ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে মনে হয়৷ কারণ হিসাবে বলা যায়–মানুষ গরীব ও অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত থাকলে–ভণ্ড রাজনীতির জাল বিস্তার করা সহজ হয়৷ বর্তমান শিক্ষা চার্বাকের ভোগবাদী দর্শনকে প্রোৎসাহিত করে৷ এর ফলে মানুষ হয়ে ওঠে আত্মকেন্দ্রীক, স্বার্থান্বেষী৷ কারণ ভোগ্যপণ্যের যোগান সীমিত৷ আর ভোগ লালসার তাড়নায় মানুষ খাদ্যাখাদ্যের বিচার না করে খাওয়ার জন্যে হয়ে ওঠে নানান রোগে আক্রান্ত৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে–গরীবদের তুলনায় ভোগীরাই হয় বেশী রোগী৷ এই রোগের প্রকাশ ঘটে শরীরে ও মনে৷ ফলে মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ হয় ব্যাহত৷

বর্ত্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আর একটি কারণ হচ্ছে–রাজনীতির অনুপ্রবেশ৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মণ্ডলীর নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন (যদিও অনেক ক্ষেত্রে তা উহ্য থাকে) শিক্ষার পরিকাঠামো ও পরিবেশকে কলুষিত করে৷ দলীয় প্রভাব ছাত্রছাত্রাদের মধ্যে পড়ে৷ তাদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি মিটিং–মিছিল করে৷ শিক্ষা যুগ্ম তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্যে যে সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখনই শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে৷ তাদের দলের স্বার্থে নিয়োগ ব্যবস্থা, পরীক্ষা ব্যবস্থা, পাঠ্যসূচী নির্ধারণ সব কিছুই রদবদল করে৷ যাই হোক শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতির অনধিকার প্রবেশের ফলে ছাত্ররা হয়ে ওঠে উচ্ছৃঙ্খল, দাঙ্গাবাজ, গুণ্ডাবাজ৷ পরবর্ত্তী জীবনে সেই সব গুণ্ডাবাজ ছাত্ররাই হয়ে ওঠে নেতা, এম.এল.এ., এম.পি., বা মন্ত্রী৷ তার ফলে যা হবার তাই হচ্ছে৷ অথবা নেতা মন্ত্রীদের  আজ্ঞাবাহী  গুণ্ডা বা হার্মাদ বাহিনী হচ্ছে৷

তাছাড়া বর্ত্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রকৃত শিক্ষাবিদ, দেশপ্রেমিক, দেশনায়ক, সুনাগরিক বা প্রকৃত অর্থে মানুষ তৈরী হচ্ছে না৷ একেবারেই হচ্ছে না বললে সত্যের অপলাপ করা হবে৷ তবে যা হচ্ছে–তা খুবই নগন্য, হয়ত বা শতকরা পাঁচ শতাংশ বা ১০ শতাংশ৷ বর্ত্তমানে শিক্ষার্থীদের বা তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্য হচ্ছে–শিক্ষান্তে চাকুরী করা বা রুজিরোজগারের ব্যবস্থা করা ৷ তাই তো দেখা গেল–বিগত মাধ্যমিক উচ্চ–মাধ্যমিক পরীক্ষায় সেরা ব্ধপ্সহ্মহ্মন্দ্বব্জব্  ছাত্রদের  তাদের জীবনে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য কী প্রশ্ণ করাতে কেউ বলেছে সে ডাক্তার হতে চায় কেউ বলেছে সে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, কেউ বা বলেছে–হোটেল ম্যানেজমেণ্ট করে অর্থ–উপার্জন করতে চায়৷ কিন্তু কেউ দেশের সেবা, গরীব মানুষের সেবা করার কথা বলছে না৷ তাই তো বাস্তবে দেখা যাচ্ছে–কেউ ডাক্তার হয়ে সরকারী হসপিটালে চাকরী পেয়ে তাতে সন্তুষ্ট হচ্ছে না, দু’বেলা প্রাইভেট প্র্যাকটিস  করে ইচ্ছামত, খেয়াল খুশী মত ফি বাড়িয়ে নিজের গাড়ি, বাড়ি, অট্টালিকা বানাচ্ছে–টাকার পাহাড় জমাচ্ছে৷ সরকারী হাসপাতালের চাকুরীতে নামে মাত্র সার্ভিস দিচ্ছে৷ অথচ কালোটাকার জন্যে সরকারের ঘরে নূ্যনতম আয়কর পর্যন্ত জমা দিচ্ছে না৷ তেমনি হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার বা অন্যান্য সব পদস্থ ..ড্র.ত্র. ও ঢ.ট্ট.ত্র., ঢ.ত্ন.ত্র. প্রভৃতি ক্ষেত্রেও৷

বর্ত্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে শিক্ষার্থীরা অতিমাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে৷ তাই দেখা যাচ্ছে–যে সব অভিভাবক বা মা–বাবা অনেক কষ্ট স্বীকার করে তাদের পড়াশুনার ব্যবস্থা করেছেন, শেষে নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে অর্থাৎ উপার্জনশীল হয়ে–তাদের অভিভাবক বা মা–বাবাদের ভরণ–পোষণের ব্যবস্থা করতে কুণ্ঠা বোধ করছে৷ আত্মীয় স্বজন, পরিবার পরিজন, প্রতিবেশী বা দেশবাসীর উপকারের কথা তো তাদের মাথায় চিন্তা–ভাবনায় আসে না৷ হ্যাঁ, তবে এর মধ্যে কিছু কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই রয়েছে৷

বর্ত্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার আর একটি বিশেষ ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়৷ নৈতিক চরিত্র গঠনের ব্যাপারে কোন রূপ গুরুত্ব দেওয়া হয় নি বর্ত্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায়৷ সে রকম কোন নীতিশিক্ষামূলক পাঠ্যক্রম বা মহাপুরুষদের জীবনী ও বাণী বা দেশ সেবামূলক কোন পাঠ্যক্রম চালু করতে চান না–বর্ত্তমান শিক্ষানীতির রূপকাররা সংস্কৃত শিক্ষার মধ্যে যে নীতি , উপদেশ বা স্তোত্র রয়েছে–সেগুলি পাঠ্যসূচীতে সকলের জন্যে স্থান পায় না৷ তাই তো মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সেটাকে উচ্ছেদ করা হয়নি বটে, তবে ঐচ্ছিক করা হয়েছে৷ কিন্তু বেশ কিছুদিন পূর্বে(আমরা যখন ছাত্র ছিলাম) সংস্কৃত ভাষা তৃতীয় ভাষা হিসাবে কম্পালসারি ন্তুপ্সপ্পহ্মব্ভপ্তব্দ্ বিষয় ছিল৷ তার ফলশ্রুতিতে তখন ছাত্রদের তথা নাগরিকদের নৈতিক মানও উন্নত ছিল৷ কিন্তু এখন ছাত্রছাত্রারা আকর্ষণীয় নম্বর নিয়ে ডিগ্রী নিচ্ছে, শিক্ষা শেষে অনেকে চাকরী পাচ্ছে বা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে কোনভাবে কিন্তু তারা হচ্ছে–অহংকারী, অসংযত, উচ্ছৃঙ্খল, অনিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন নেশায় নেশাগ্রস্ত, দুরন্ত, দুবির্নীত এক একজন দুর্যোধন বা দুঃশাসন৷ এরফলে পরিবারে, সমাজে, কর্মস্থলে–সর্বত্র অশান্তি সৃষ্টি করছে তারা৷ শেষে নিজেরাও ধ্বংসের পথ বানিয়ে নিচ্ছে নিজেদের৷ বলুন তো এরকম শিক্ষার কী সার্থকতা বা সফলতা বা মর্যাদা? তাদের মধ্যে মানবিক গুণগুলি হারিয়ে গিয়ে পশুপ্রবৃত্তির উৎসারণ হচ্ছে৷ মনে রাখবেন–এমনটি হচ্ছে, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে৷ তবে এর মধ্যে ব্যাকরণের সাধারণ নিয়মের মত মাঝে কিছু কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই রয়েছে৷ নীতিশিক্ষার অভাবেই আজ সমাজ হয়ে উঠেছে–অশান্ত, তাই তো প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত্তে হয়ে চলেছে খুন, ধর্ষণ, হানাহানি, মারামারি, চুরি, ডাকাতি, পকেটমার, শোষণ–নিপীড়ন, বঞ্চনা, বধূ নির্যাতন, নারী নির্যাতন–এর মত হাজার রকমের জঘন্য অপরাধমূলক কাজ৷ এর ফলে সমাজে আজ মানুষের মধ্যে বেড়েছে–হিংসা ঈর্ষা, অসূয়া, জিঘাংসা, পরনিন্দা, পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা, মহামন্যতা, হীনমন্যতা প্রভৃতি৷ এ সবের জন্যে বর্ত্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা দায়ী নয় কী?

বর্ত্তমান সমাজে আবার অনুকরণ প্রিয়তা ও উৎকট প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দিয়ে টি.ভি. ও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের বদান্যতায়৷ পাশ্চাত্যের জ্ঞান বিজ্ঞানের অনুকরণ ও অনুসরণ সর্বদা প্রশংসনীয়৷ কিন্তু তাদের মেকী কালচার, পোষাক পরিচ্ছদ ও খাদ্যাভ্যাস ভারতীয়দের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷

কিন্তু বর্তমানে মিডিয়ার সৌজন্যে এ হেন অনভিপ্রেত প্রবণতা প্রবলভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে–পশ্চিমবঙ্গ সহ, ভারতের সর্বত্র৷ হিন্দী সিনেমার প্রভাবে বর্ত্তমানে শিশুমনগুলি বিষিয়ে যাচ্ছে৷ তারা মস্তানদের মত আচরণ অনুকরণ করছে৷ এ প্রসঙ্গে বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে–সরকারের এই সব মিডিয়াদের উপর কঠোর সেনসর ব্যবস্থা চালু করে খারাপ দৃশ্য দেখানোতে নিয়ন্ত্রণ বিধি আরোপ করা৷

আজ কাল মেয়েরা আবার মিডিয়ার অনুকরণে জিনসের প্যাণ্ট–শার্ট পরে অথবা অর্ধাবৃত দেহে অবাধে বিচরণ করছে৷ ফলে সামাজিক সুস্থিতি ও শান্তি বিঘ্ণিত হচেছ৷ এ সবের জন্যে সরকারের সমাজকল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন৷

যাইহোক ভারতে বর্ত্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের দিকগুলি রয়েছে– সে কথাও প্রসঙ্গত স্মরণীয়৷ যেমন কারিগরী বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, পারমানবিক বিজ্ঞানে ভারত যথেষ্ট উৎকর্ষের পরিচয় দিয়েছে৷ বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বে আজ বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ স্থানলাভ করতে সমর্থ হয়েছে৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানেও ভারত পিছিয়ে নেই৷ জ্ঞানে বিজ্ঞানে, দর্শনে, সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতিতেও ভারত বিশ্বকে যুগে যুগে প্রেরণা যুগিয়ে আসছে ও আসবে৷ তবে এ বিষয়ে আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে৷ যাতে এগুলির মধ্যে কোন বিকৃতি না ঘটে৷ আধ্যাত্মিকতার পীঠস্থান ও নৈতিকতার আতুরঘর ভারত সমস্ত বিশ্ববাসীকে আলোকোজ্জ্বল পথ দেখাবে৷ তাই এ ব্যাপারে বাইরের দিকে আমাদের তাকাবার কিছু নেই বা বাইরের থেকে চাওয়ার–পাওয়ার কিছু নেই৷ একথা মনে রেখে ভারতবাসীকে তার মৌল মানবিকতার আদর্শ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে৷ আক্ষরিক দিক থেকে আমাদের সার্বিক শিক্ষার প্রসার হয়েছে–একথা উপলব্ধি করেও পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে এ হেন একটি সমীক্ষামূলক আলোচনা বা সমালোচনা করতে হলো–অন্তরের অন্তঃস্তলের গভীর মর্মন্তুদ সমবেদনার তাড়নায়৷ এ জন্যে দুঃখিত৷ কিন্তু দুঃখিত মর্মাহত হলেও আশাহত নয়৷ কারণ প্রভাতসঙ্গীতে সঙ্গীতকার বলেছেন–

‘‘কেটে গেছে মেঘ, গেছে দুর্যোগ, আলোকের এই যাত্রাপথে৷

 দূর নীলিমায় কারা ডেকে যায়– সোনালী সৌর রথে৷’’