দলীয় বোটমুখী একপেশে বাজেট

লেখক
প্রভাত খাঁ

বিজেপি সরকার ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কোটি কোটি অসহায় গরিব মানুষদের নিয়ে যে শাসনের নামে ব্যভিচার করে চলেছে সেটা ফ্যাসিজিমকেও হার মানায়! তারই জ্বলন্ত নিদর্শন বর্তমানের ২০২৫-২৬-এর বাজেট৷ এই বাজেটে কোটি কোটি হতদরিদ্র জনগণের জন্য কোন কিছুই সুরাহা করা হয়নি৷

এই সরকার হলো ধনী ও কর্পোরেট ব্যবসাদারদের সেবা দাস! কারণ এই বাজেটে প্রথমই ঘোষনা করা হয়েছে যে বাৎসরিক ১২লক্ষ টাকায় কোন আয়কর দিতে হবে না! এবার প্রশ্ণ হলো দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ লোকের মধ্যে ১২লক্ষ টাকা কত জনের বাৎসরিক আয় হয়? এটা তো সেই শতকরা ২৫ শতাংশ ধনী ভাগ্যবানদের ব্যাপার কি নয়? চরম দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জি.এস.টি-এর যন্ত্রণায় দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ চরম আর্থিক শোষণে কাতর কারণ এক তো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া তার উপর চরম ট্যাক্স এর চাপ এটা কেমন দেশ সেবা? তবে দেশের নাকি ৮০ কোটি মানুষকে কেন্দ্র মাসে ৫ কেজি চাল ও গম ভিক্ষা স্বরূপ দেওয়া হয় যার খাদ্য মান অতি নিম্নমানের! এই রেশনটা দেখা যায় অধিকাংশ লোকই বাজারে বিক্রি করে খাবার মতো চাল, আটা, ময়দা কিনে থাকে! আর ঐ বিনামূল্যের সরকারী ভিক্ষা স্বরূপ দানটা খোলা বাজারে কিছুটা সস্তায় বিক্রি হয়! তাতে অনেক নাগরিকের স্বভাবটাই ব্ল্যাক মার্কেটের দিকে চলে কি যাচ্ছে না? এতে বলতে দ্বিধা নেই নৈতিক অধঃপতন ঘটছে৷ আর এই বিনা পয়সায় রেশন নিয়ে সারা দেশে যে কাণ্ডটা শাসক দল করছে সেটা মোটেই শোভনীয় নয়৷

এবার আমি ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর দিতে হবে না৷ এখন মাথায় ছাদ নেই, পরনে কাপড় নেই সেই দরিদ্রগণ কি কেউ এমন কি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত কতোজন পড়েন এতে?এটা সেই উঁচুতলার মানুষজন যারা এই বিজেপিকে মুক্ত হস্তে চাঁদা দিয়ে কোটি কোটি পতি করে তুলছে নিজেদের তারা সব৷ সেই টাকার খেলা কি নির্বাচনে হচ্ছে না? তাই নির্বাচনটাই তো আজ প্রহশন! ৪ লাখ থেকে ৮লাখ ৫ শতাংশ কর, ৮ লাখ থেকে ১২ লাখ ১০ শতাংশ কর, থেকে ২৪ লাখ ২৫ শতাংশ কর, ইত্যাদি৷ এটা যারা দিচ্ছে তারা কারা? সেই বিজেপি দলের সমগোত্রীয় আর বাজেটে কারা দাদাগিরি করছে আর জীবনদায়ী ওষুধের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়৷ এতে সারা দেশই কাতর গরিব থেকে ধনী তাই ৩৬টির দাম কমেছে৷ আর কিছুর ট্র্যাক্স উঠে গেছে৷ এটাতে কতজনের কি কল্যাণটা হয়েছে৷

এমন গরিব লোক আছেন যাঁরা অর্থের অভাবে ওষুধই কিনতে পারেন না৷ আগেই অর্থমন্ত্রী ঘোষনা করেছিলেন নোতুন চাকুরীর সম্ভব নয় প্রায় নেই! গত দশ বছরে তো দেশ শ্মশানে পরিণত হয় মারাত্মক করনা বা কোভিদ আগ্রাসনে৷ ঘর থেকে বেরনোই বন্ধ সব তছনছ হয়৷ বাহিরের অন্য সেই সব শ্রমিকরা ফিরে আসেন শূন্য হাতে! বেকারের সংখ্যা চরম বাড়ে! এখন জনদরদী সরকারের কাজ কি? রামমন্দির নির্মাণ না জনদরদি সরকার হিসাবে তাদের মুখে অন্ন যোগাতে কর্মের ব্যবস্থা করা কারণ, তারাই তো জ্যান্ত রাম জনতা? শাসক হিসাবে এই জ্ঞানের অভাব হলো কেন? বাড়ি ফিরতেই কতো হতভাগ্যের যে প্রাণ গেছে তার হিসাব নেই! স্বামী বিবেকানন্দ তো আগেই বলেছিলেন

বহুরূপে সম্মুখে তোমায় ছাড়ি

কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর!

জীবে সেবা করে সেই জন

সেই জন সেবিছে ঈশ্বর৷ কই সাধক প্রধানমন্ত্রী তো সেদিকে নজর দেননি! তাই বিজেপি সরকার কিসের জন্য অহংকার করেন? কিছু ট্রেন বাড়িয়েছেন সেগুলি সবই এক্সপ্রেস যাদের ভাড়া আকাশ ছোয়া ও খুবই আরামপ্রদ৷ কিন্তু তাতে কারা চড়বেন সুখ লাভ করবেন? সেটা ঐ উঁচুতলার ভাগ্যবান নয়? গরিব তার ধারেও এগুতে পারবে না৷ লোকাল ট্রেন কতো বেড়েছে? লোকসংখ্যা কিন্তু অধিক সেই গরিব জন যারা নর নারায়ণ! তাঁরা এই সরকারের শাসনে বঞ্চিত ও লাঞ্চিত কি নয়৷ যা শুনা যায় ও যা হচ্ছে! সব কলকারখানা বন্ধ কর্ম স্রোতটা আটকে৷ তাই বলি গতিশীলতাটা কোথায়? খালি লেকচারে আর সরকারী রিপোর্টে৷ দেশের সব নদনদী মজে গেছে তার সংস্কার কোথায়? জল দুষিত নানা কারণে এটাকে অস্বীকার করতে পারে না৷ এসব নিয়ে সরকারের কোন চিন্তা ভাবনা নেই৷ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বলেছিলেন---নির্দ্ধারিত টাকার ১৫ শতাংশ কাজ হয়৷ জনগণ আজ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে৷ পরিশেষে বলি এই বাজেটে পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত-বিহারে বোটের দিকে তাকিয়ে শরিক তোষণের বাজেট হয়েছে৷ তাই বলি এই বাজেট হলে নিছক বিজেপির দলীয় বাজেট, ঘাটতি বাজেটে,বোট কেন্দ্রিক একপেশে বাজেট৷ তিলমাত্র জনমুখী নয়৷