ভাষাতত্ত্ব প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে বিধির সাথে নিষেধ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকে৷ ‘হয়’–কে বাদ দিলে ‘নয়’ পুষ্ট হয় না, আবার ‘নয়’–কে বাদ দিলে ‘হয়’–এরও পায়ের তলায় জমি থাকে না৷ একথা সর্বক্ষেত্রেই সমভাবে প্রযোজ্য৷ তাই ভাষাতত্ত্বের ব্যাপারে একথা আমাদের মনে রাখতে হবে––মূল নিয়ম মনে রাখি বা না রাখি ব্যতিক্রমগুলো (হিন্দীতে ‘অপবাদ’) যত ৰেশী মনে রাখি ততই ভাল৷ ইংরেজীতে যেমন একক ব্যঞ্জনের পূর্বে যদি একক স্বরবর্ণ থাকে তাহলে ওই ব্যঞ্জনের পরে কোনো প্রত্যয় লাগলে ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব হবে৷ যেমন ‘ণ্ঠন্ব্ধ’ কিন্তু ‘ণ্ঠন্ব্ধব্ধনুন্ধ’, ‘ণ্ঠন্ব্ধব্ধন্দ্বস্তু’ ইত্যাদি৷ আবার এর ব্যতিক্রমও রয়েছে৷ যেমন ‘চ্ন্দ্বুন্দ্বন্দ্রন্ব্ধ’৷ এক্ষেত্রে ‘ব্ধ’–এর পরে প্রত্যয় লাগলেও শেষের ‘ব্ধ–এর দ্বিত্ব ঘটবে না৷
আমার পরিচিত দুইজন ইংরেজী পণ্ডিত ছিলেন৷ একজন মিঃ এস. পি. ৰ্যানার্জী, আর একজন মিঃ জি. সি. ৰ্যানার্জী৷ টাটানগর থেকে মিঃ জি. সি. ৰ্যানার্জী তাঁর কলকাতা অফিসের ঠিকানায় একটা চিঠি দিয়ে ‘চ্ন্দ্বুন্দ্বন্দ্রন্ব্ধ’ বানানে দুটো ‘ব্ধ’ ব্যবহার করেছিলেন৷ চিঠিটা যখন মিঃ এস. পি. ৰ্যানার্জীর হাতে এসে পড়ল তখন তিনি জি. সি. ৰ্যানার্জীকে ডেকে বললেন, –গৌর হে, এখানে দু’টো ‘ব্ধ’ লিখলে কেন? মিঃ জি. সি. ৰ্যানার্জী তখন ভারিক্কি চালে বললেন–‘‘স্যার, আপনি অনেকদিন হল লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছেন কিনা৷ তাই নিয়ম কিছু কিছু ভুলে গেছেন ৷ নিয়ম হচ্ছে, একক ব্যঞ্জনের পূর্বে যদি একক স্বরবর্ণ থাকে তাহলে ওই ব্যঞ্জনের পরে কোনো প্রত্যয় লাগলে ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব ঘটে৷ এই স্বীকৃত রীতির ভিত্তিতে আমি দুটো ‘ব্ধ’ব্ধব্ধগ্গ লাগিয়েছি৷’’ এর জবাবে সুরসিক মিঃ এস. পি. ৰ্যানার্জী বলেছিলেন–দেখ হে গৌর, তোমার নিয়ম যাই হোক না কেন, তুমি দুটো ‘ব্ধ’ লিখে ভালই করেছ৷ চিঠিটা টাটানগর থেকে কলকাতায় যাচ্ছে৷ মাঝপথে খড়গপুর৷ খড়গপুরে আজকাল ট্রেন–ডাকাতি হচ্ছে৷ ডাকাতেরা যদি একটা ‘ব্ধ’ লুঠ করেও নেয় অপরটি তো থাকল৷