ধূমপান অতি বিপজ্জনক

লেখক
যোগাচার্য্য

ধূমপান করা যে কত বিপজ্জনক তা শুনে ধূমপায়ীরা আঁতকে উঠবেন৷ ব্রিটেনের রয়েল কলেজ অব্ ফিজিসিয়ান্স্(Britain's Royal College of Physicians) ধূমপানের কুফল সম্বন্ধে যে সকল সত্য উদ্ঘাটিত করেছেন তা সত্যিই উদ্বেগজনক৷

ধূমপানের বহু মারাত্মক রোগের বহুল প্রমাণ এইসব রিপোর্টে দেখান হয়েছে৷ যেমন ঃ  ফুসফুসে ক্যানসাব, হূদরো, ব্রঙ্কাইটিস্(Broncuitis) অর্থাৎ শ্বাসনালীর ঝিল্লীর প্রদাহজনিত রোগ বা কফ্ রোগ, পরিপাক যন্ত্রের বিভিন্ন রকম রোগ (যেমন ঃ পরিপাকযন্ত্রে ঘা(Peptic ulcer) ইত্যাদি৷

Royal College –এর রিপোর্টে বলা হয় সবথেকে ভয়ঙ্কর তথ্য ঃ একজন অভ্যস্ত ধূমপায়ী একটি সিগারেট স্মোক করলে তার আয়ু প্রায় সাড়ে পাঁচ মিনিট কমে যায়৷ অর্থাৎ দিনে দশটি সিগারেট স্মোক করলে ধূমপায়ীর আয়ু প্রায় এক ঘন্টা করে কমে যাচ্ছে৷ ভাবুন তো একজন ধূমপায়ী ধূমপান করে কিভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন৷ ভাবতেও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে৷

Royal College of Physicians –এর ধুমপান সম্বন্ধীয় যে প্রথম রিপোর্ট বের হয় তাতে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখান হয়েছে ঃ ‘‘ধূমপান অতি বিপজ্জনক’’৷ এই রিপোর্টে সিগারেটের মধ্যে যে সব রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে তাকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে৷

(১)  প্রথম গ্রুপে রয়েছে কারনিকোজেনিক(Carnicogenic) যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রোগজীবাণু সৃষ্টি করে ক্যানসার রোগ সৃষ্টি করে৷

(২) দ্বিতীয় গ্রুপে রয়েছে কিছু উত্তেজক পদার্থ যারা শ্বাসনালীর দুইটি প্রধান শাখার বা ক্লোম শাখার অন্তর বা আভ্যন্তরীণ[the lining or the inside covering of the Bronchal tubes] –কে উত্তেজিত করে ও ফুসফুস বা শ্বাসযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে ব্যাহত করে৷

(৩) তৃতীয় গ্রুপে রয়েছে নিকোটিন(Nicotine) ঃ এক প্রকার প্রভাবশালী ওষুধ যা দেহস্থ টিস্যুগুলি বিশেষ করে কেন্দ্রস্থ স্নায়ুসজ্জা(the central nervous system) –এর উপর বিস্তৃত প্রভাব বিস্তার করে, ফলে টিস্যুরা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷

(৪) চতুর্থ গ্রুপে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে৷ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কার্বন–মনো–ক্সাইড যা রক্তের অক্সিজেন ক্ষমতার মাঝে হাত দেয় বা ইনটারফেয়ার করে টিস্যুগুলির মধ্যে অক্সিজেন ব্যবহারের মধ্যেও হাত দেয়৷

  Royal college-এর শেষ রিপোর্টে দেখান হয়েছে যে নিকোটিন শরীরের যে কোন অঙ্গকে আক্রমণ করতে পারে৷

রিপোর্টে ব্রিটেনের জনগণের ওপর ধূমপানের কুফল–সম্বন্ধীয় সম্ভাব্য পরিসংখ্যানের ওপর বিভিন্ন তত্ত্বের অবতারণা করা হয়েছে৷ এতে উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে যে যেভাবে  ব্রিটেনের মানুষ ব্রিটেনে ধূমপান করছে সেইভাবে ধূমপান করলে ব্রিটেনে ক্যানসার রোগ হবে প্রায় ৩৫০০০ জনের (এর মধ্যে পঁচিশ হাজার পুরুষ ও দশহাজার মহিলা)৷ তাছাড়া এতে দেখান হয়েছে যে ধূমপায়ীদের মধ্যে গলায়, মুখে, কণ্ঠনালী বা অন্ননালী(Oesophagus) ইত্যাদিতে ক্যানসার রোগ পাঁচ থেকে দশগুণ বেশী পরিমাণে হূদরোগে আক্রমণও বেশী হবে৷ আর একটা মূল্যবান তথ্য হল ঃ ধূমপান না করেও শুধু একঘন্টা ধূমপায়ীদের মধ্যে থেকে ঘ্রাণ নিলে একটি সিগারেট স্মোক করার ক্ষতিতে ভুগতে হবে অর্থাৎ আয়ু প্রায় সাড়ে পাঁচ মিনিট কমে যাবে৷

তাছাড়া এই রিপোর্টে সরকারকে সর্বতোভাবে ধূমপান বন্ধের জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করার আবেদন জানানো হয়েছে৷ এজন্যে বিশেষ আইন প্রণয়ন, শিক্ষাভিত্তিক প্রোটেক্টিভ মেসার ইত্যাদির প্রয়োজনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷

তাই সাধারণ মানবতার প্রশ্ণে অর্থাৎ মানব সমাজকে ধূমপানের এই ভয়াল বিভীষিকাময় কুফল হতে রক্ষা করার জন্যে সকল ভাই–বোনের অর্থাৎ সকল সমব্যথী মানবদরদী মানুষের কাছে আমি আবেদন জানাচ্ছি – আপনারা ধূমপানের এই কুফলবার্তাকে প্রতিটি গৃহকোণে পৌঁছে দিন ও নিজেরাও এখুনি সতর্ক হউন অর্থাৎ আপনারা সর্বত্র"Anti-Smoking Campaign" Sentiment ছড়িয়ে দিন৷

 

প্রতি বছর ৫০ লাখ লোক

মারা যায় ধূমপানের কারণে

ওয়ার্ল্ড হেলথ্ অর্গানাইজেশনের মতে নিকোটিন গ্রহণের কারণে সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ লোক মারা যায়৷ ডব্লিউ–এইচ–ও–র মতে ধূমপান বন্ধের ব্যাপারে কোন দেশের সরকার তেমন কড়াকড়ি করে না৷ মৃত্যুহারের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে৷ সারা বিশ্বের মোট ধূমপায়ীর প্রায় ৯৫ শতাংশই কোন নিয়ম কানুনের ধার ধারে না৷ ধূমপান করে৷ এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই মৃত্যুহার গিয়ে দাঁড়াবে ৮০ লাখে৷ তাদের তথ্য থেকে আরো জানা যায়, সেকেণ্ড হ্যাণ্ড ধূমপান অর্থাৎ ধূমপানের ধোঁয়া থেকে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ৬ লাখ লোক৷ ধূমপানের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যে ডব্লিউ–এইচ–ও ২০০৩ থেকে সারা বিশ্বের প্রায় ১৭০ টি দেশে ধূমপান সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে৷ মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে অনেক সচেতনমূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়৷ এছাড়া এ সব দ্রব্যের ওপর অনেক বেশী মাত্রার ট্যাক্সও নির্ধারণ করা হয়েছে৷ ডব্লিউ এইচ ও–র মতে শুধু বিজ্ঞাপন বা ট্যাক্স বাড়িয়ে দূমপানকে শিকড় থেকে নির্মূল করে ফেলা যাবে না৷ এর ভয়াবহতা নিয়ে সবাইকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে৷ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলে মাদক গ্রহণের হার বেশ কমে যাবে বলে আশা করছে ডব্লিউ এইচ ও কর্তৃপক্ষ৷