একজিমা

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

লক্ষণ ঃ ক্ষত থেকে রসস্রবণ, চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও দপদপানির ভাব, প্রতি বৎসরই রোগের পুনরুদয়, রোগজনিত শারীরিক দুর্বলতা ও মধ্যে মধ্যে জ্বর, সময় সময় রোগের অতি প্রকোপের ফলে দেহের অস্থি পর্যন্ত বেরিয়ে আসা এই রোগের লক্ষণ৷

কারণ ঃ রস, রক্ত, মাংস ও মেদ এই চার ধাতুর বিকৃতির ফলে এই রোগ উৎপন্ন হয়৷ তাই এই রোগটি শ্বিত্র বা শ্বেতকুষ্ঠ অপেক্ষাও ক্ষতিকর৷ রক্তের দুর্বলতার ফলে (এই দুর্বলতার কারণ সর্ব ক্ষেত্রে না হোক, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাশয়, বিশেষ করে তা’ যদি ধারক ঔষধ ব্যবহার করে নিরুদ্ধ করা হয়ে থাকে) চর্মের সঙ্গে মাংস ও মেদও যখন দুর্বল হয়ে পড়ে ও তাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তিও হারিয়ে ফেলে, তখনই রোগবীজাণু শরীরে বাসা বাঁধবার সুযোগ পায়৷ রক্তের শ্বেতকণিকা এই রোগবীজাণুর সঙ্গে অক্লান্তভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে ও এই সংগ্রামেরই পরিণাম স্বরূপ রোগবীজাণু ও শ্বেতকণিকাসমূহের মৃতদেহ পূঁজ রূপে অথবা রস–রক্তের সঙ্গে দেহ থেকে নির্গত হতে থাকে৷ এই পূঁজ–রস–রক্তাদির নির্গমন শরীরের বেশ কিছুটা ভেতর থেকে হয়ে থাকে বলে রোগী অশেষ যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে৷

চিকিৎসা ঃ প্রতূ্যষে ঃ দীর্ঘপ্রণাম, যোগমুদ্রা, ভূজঙ্গাসন, অগ্ণিসার, পদহস্তাসন ও শীতলীকুম্ভক৷ সন্ধ্যায় ঃ মৎসোন্দ্রাসন, শয়নবজ্রাসন, কর্মকাসন৷

পথ্য ঃ মিষ্ট দ্রব্য ও আমিষ ব্যতিরেকে সব রকমের লঘুপাচ্য পুষ্টিকর খাদ্যই রোগী গ্রহণ করতে পারে৷ রোগীর অবশ্যই যথেষ্ট পরিমাণ জল পান করা উচিত৷ একাদশী, পূর্ণিমা, অমাবস্যা তিথির উপবাস বিধি মেনে চলা দরকার৷

বিধি–নিষেধ ঃ আমাশয় বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে এরূপ সকল খাদ্যই রোগীকে বর্জন করতে হবে৷ প্রত্যহ রোগগ্রস্ত জায়গায় রোদ লাগানো বিশেষ প্রয়োজনম৷ রোগ সম্পূর্ণ রূপে দূরীভূত না হওয়া পর্যন্ত আমিষ খাদ্য ও মাদক দ্রব্যের লোভ সংবরণ করে চলতে হবে৷

কয়েকটি ব্যবস্থা ঃ (১) শ্বেত করবীর মূল জলে ঘসে চন্দনের মত করে প্রলেপ দিলে, অথবা (২) কাঁচা হলুদের রস ও দই এক ছটাক পরিমাণ মিশিয়ে খেলে এই রোগে সুফল পাওয়া যায়৷ (৩) নারিকেল তৈলের সঙ্গে মুসব্বর মিশিয়ে প্রলেপ দিলে, অথবা (৪) পূর্ব দিন রাত্রে পিত্তলপাত্রে চূণ ও নারিকেল তেল এক সঙ্গে রেখে দিয়ে পরদিন ওই চূণ ও তেল ফেনিয়ে নিয়ে রোগগ্রস্ত স্থানে প্রলেপ দিলে আশু উপকার পাওয়া যায়৷  (৫) গন্ধক ও রান্নাঘরের ঝুল নারিকেল তেলে মেড়ে প্রলেপ দিলে, অথবা (৬) কেলেকোঁড়া পাতা হুঁকোর কটু জলে বেটে গরলের উপর ঘসে লাগালে ভীষণ ধরণের গরলেও উপকার পাওয়া যায়৷ গরমযুক্ত স্থান নারিকেল তৈল বা গব্য ঘৃতসহ পান দিয়ে বেঁধে রাখা বাঞ্ছনীয়৷

(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘যৌগিক চিকিৎসা ও দ্রব্যগুণ’ থেকে)