আমাদের রাজ্যে ইদানিং বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে৷ তাতে কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ কোথাও ছেলেধরার গুজব রটিয়ে কোথাও বা আবার চোর সন্দেহে পেটানো হচ্ছে৷ ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের উপর ভরসা না করে নিজেদের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, যা সত্যই উদ্বেগজনক৷ পুলিশ প্রশাসনের উপর অনাস্থার কারণে এ ধরনের আচরণ কতিপয় মানুষ করছে, নাকি
রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে কলুষিত করার জন্য কোনো চক্রান্ত চলছে রাজ্য প্রশাসনের তা ভালো ভাবে ভেবে দেখা দরকার৷
ছেলে ধরার গুজব ( যদিও তা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত চক্রান্ত) যে কি ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি করেছিল রাজ্যের রাজধানী কলকাতার বুকে, এখনকার প্রজন্ম না জানলেও পঞ্চাশোর্ধ রাজ্যবাসী তথা দেশবাসী ভালো ভাবেই জানেন৷ ১৯৮২ সালের ৩০ শে এপ্রিল ছেলেধরার মিথ্যে গুজব রটিয়ে সংস্কৃতির পীঠস্থান কলিকাতার রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে আনন্দমার্গের ১৭ জন সন্ন্যাসী -সন্ন্যাসিনীকে রড দিয়ে পিটিয়ে ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল সিপিএমের মদতপুষ্ট গুণ্ডারা বিজন সেতু, বালিগঞ্জ,বণ্ডেল গেট এলাকায়৷ ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে কলিকাতার পুলিশ কমিশনার ও রাজ্য পুলিশের ডিজি জানিয়েছিলেন রাজ্যের কোনো জায়গা থেকে কোনো ছেলে চুরি যায়নি৷ অথচ নিরীহ, নিষ্পাপ ১৭ জন সন্ন্যাসী -সন্ন্যাসিনীর প্রাণ অকালে ঝরে গিয়েছিল৷ আজও সেই ঘটনায় যুক্ত দোষীরা চিহ্ণিত হল না, শাস্তি তো অনেক দূরের কথা! লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরে হঠাৎ করে গণপিটুনির ঘটনা রাজ্যে বেড়ে যাওয়ার পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি নেই তো? একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য এই ঘটনাগুলো ঘটছে না তো? ১৯৮২ সালের এপ্রিল মাসে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে৷ সভা করে গুজব ছড়ানো শুরু হয় সুপরিকল্পিতভাবে৷পরিনতি কি হয়েছিল তাতো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে৷ বর্তমানে যা ঘটছে এই বিষয়গুলোকেও হাল্কাভাবে না দেখে রাজ্য প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে৷
- Log in to post comments