গণতন্ত্রের মুখোসে একনায়কতন্ত্রের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে

লেখক
প্রভাত খাঁ

শাসক দলের ২০২৪-এর খেলা শেষ! এই দেশ যে কি পেল ও দলগুলো যে কি পেল তারাই জানে৷ তবে হতভাগ্য নির্বাচনমণ্ডলী যা পেল সেটাতে আনন্দের কিছু নেই কারণ জনগণের রায় শাসক দলের বিরুদ্ধে গেলেও সংখ্যার খেলায় তারাই শাসন ক্ষমতায় রয়ে গেল নির্বাচনী উদ্ভদ খেলায়৷ এই খেলার শেষ ফলে জনগণ হতাশ৷

নির্বাচন হলো নাগরিকদের কাছে পবিত্র দায়িত্ব পালন৷ সেই খেলা চল্লো দীর্ঘ প্রায় তিন মাস ধরে এই প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে৷ এটাকে কোন কোন নেতা উৎসব বলে উল্লেখ করেন৷ কিন্তু এটা নিছক আনন্দলাভের উৎসব নয় জনগণের কাছে৷ এটা এমনই উদ্ভট উৎসব কালে প্রতিশ্রুতির বহর বিতরণ হয়, আর উৎসব শেষে জনগণ প্রতারিত হয়৷ মনে হয় এমন নিষ্ঠুর প্রতারণার খেলা অন্য দেশে হয় বলে মনে হয় না! দীর্ঘ ৭৭ বছর ধরে এমনটা এদেশে হচ্ছে কেন? এর একমাত্র উত্তর হলো গদী হলো এমন জিনিস শাসকদের কাছে যা হারালেই রাজনৈতিক দলটাই শেষ হয়ে যাবে! তাই এটা হলো তাদের বাঁচার লড়াই আর শাসনযন্ত্রের মুকুট পেতেই এই প্রাণান্ত সংগ্রাম! তাতে নাগরিকদের কে গেল আর কি হলো নেতাদের তাতে কিছু এসে গেল না৷

তাই মনে পড়ে বার বার সেই মহান স্বামীজীর মানসপুত্র নেতাজীর কথা৷ তিনি মন প্রাণ দিয়ে দেশকে ভালোবেসে ছিলেন তার নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশ মাতৃকার পূর্ণাঙ্গ মুক্তিকল্পে৷ কিন্তু দেশের ধান্দাবাজরা গদীর স্বার্থেই দেশটিকে কয়েক টুকরো করে রক্তাক্ত করে দেশের নেতা মন্ত্রী হলো সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে প্রাধান্য দিয়ে৷ আর নেতাজীকে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে ছোট করতে কুৎসা করতে লাগলো৷ পরে তাঁকে খোদ কংগ্রেস সরকার এর জওহরলাল ও তাঁর শাসকদল তাইহুকো বন্দরে প্লেন দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যু হয়েছে ঘোষনা করে ছাড়লেন বিমান মুখার্জী কমিশনের প্রমাণিত চির সত্যটিকে অস্বীকার করেই মাননীয় প্রণব মুখোপাধ্যায়-এর মুখ দিয়ে তা ঘোষণাও করলেন৷ আজও তাঁর মৃত্যু রহস্য উদ্‌ঘাটিত হলো না! সবই ধামাচাপা পড়ে গেল! এই হলো এদেশের শাসকদের নোংরা দলীয় রাজনৈতিক খেলা! লজ্জার কথা শাসকরা এমন নির্লজ্জ হয় দলীয় শাসনে গণতন্ত্রের নামে শাসন করে৷ জনগণের আজ সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ণ তা হলো এ কেমন গণতান্ত্রিক দেশ! ভারত যুক্তরাষ্ট্রে সবই শাসকদল ধামা চাপা দেয় কোন কারণে আর কিসের জন্য? মনে পড়ে সেই মহান ফরাসী দার্শনিক মাননীয় কোঁডের কথা৷ তিনি দিনান্তে রেস্তোরায় বসে এক কাপ চা ও একটু করো রুটি টেবিলে নিয়ে ভাবতেন ও কাঁদতেন এখনো অনেকই দেশের গরিবেরা মুখে কিছু দিতে পায়নি তাই আমি কি করে মুখে দিই! আর এই গরিব দেশ এর কোটি কোটি দরিদ্র দেশের মানুষকে শোষিত রিক্ত করে দেশের দলীয় শাসকগণ দলীয় গণতন্ত্রের নামে আত্মঘাতী করে রক্তের হোলী খেলে গদীতে যাচ্ছে ভোগ লালসার চরিতার্থ করতে! এই কথা প্রসঙ্গে সেই মহান নেতাজীর কিছু জীবনের ঘটনা উল্লেখ করি যখন ভারতের প্রান্তে ইংরেজ সরকারকে আক্রমণ করতে পাড়ি দিচ্ছেন তখন তার সৈন্য দলের ভয়ঙ্কর আর্থিক ও খাদ্য সংকট চলছে বন্ধু জাপান রাষ্ট্রে আমেরিকা ও ব্রিটেন এ্যাটম্‌ বোমায় নাগরিক হিরোসীমাকে ধবংস স্তূপে পরিণত করেছে৷ তাঁর সাহায্য তিনি পাচ্ছেন না তবু ভারতবর্ষের মুক্তির উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছেন ভারত যুক্তরাষ্ট্রের দিকে বার্র্মর সেই দুর্ভেদ্দ্য পথ ধরে৷ সৈন্যদের দুটো করে রুটি দেওয়া হয় কিন্তু নেতাজীকে দেওয়া হয় প্রায় ৬ খানা রুটি৷ সেটি দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যিনি খাদ্যবন্টন করছেন তাঁকে কেন এতো গুলি রুটি দেওয়া হলো? তিনি কোন উত্তর দিতে পারলেন না! তাঁর উত্তর ছিল শুধু আপনার জন্যই দেওয়া হয়েছে? তিনি বললেন আমি এঁদের মতোই একজন আই.এন.এ বাহিনীর সৈনিক! তুমি রুটি চার খানা তুলে নাও! এই হলেন মহান নেতাজী!

আজ ভারত যুক্তরাষ্ট্রে সেই নেতা কোথায়? সবাই দলীয় ধান্দাবাজিতে মত্ত৷ মাত্র দু’একজন বিরোধী দলের নেতা এদেশে সৎ আছেন মনে হয়৷ বাদবাকি সবই লুটে পুটে খেতে নির্বাচনে উদ্ভট খেলায় ও উৎসবে নির্বাচনে মেতেছে বলেই তাদের কাছে মহান নেতাজীর আদর্শটা তুচ্ছ! তাই এ দেশের এমন দুর্দশা!

বিশ্বকবি দুঃখ করেই বলেছেন--- ‘ওরে ভীরু তোর হাতে নেই ভুবনের ভার’’! এই অতীত দুঃখের কথা হতদরিদ্ররা অনেক ভেবেই সব লোভী ভীরুদের হঠাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে৷ আর প্রকৃতিও কখনো কখনো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে তবুও এদের হুঁস আসছে না!

তাই দেশ ও দশের জন্য চাই সেই মহান সৎনীতিবাদী দেশসেবক যাঁরা আত্মত্যাগী ও আদর্শবান৷ মানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্য দেশের শাসন ভার হাতে নেবেন৷

তাই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এইসব ধান্দাবাজদের হাত থেকে দেশের সার্বিক কল্যাণের সেই নেতাজীর মতো দেশ নেতাদের বেছে নিয়ে গদীতে বসাতে হবে৷ তবেই দেশ ও দেশের জনগণ বাঁচবেন৷ আর নির্বাচনে হবে এক সত্য ও অসত্যের লড়াই যেখানে লড়াই হবে মানবিক মূল্যবোধকে সামনে রেখেই আর নরমেধ যজ্ঞের হবে অবসান৷ তবেই ভারত জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আপন পাবে ও সারা পৃথিবী ভারতকেই অনুসরণ করবে৷