বর্তমান পৃথিবীতে যত প্রকার রাষ্ট্রপরিচালনার ব্যবস্থা আছে গণতন্ত্র তার মধ্যে ভালো, কিন্তু গণতন্ত্রকে একেবারে ত্রুটিমুক্ত বলা যায় না৷ তবে গণতন্ত্র মধ্যে মন্দের ভালো৷
বর্তমানে যে সব রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে ভারতবর্ষ তাদের মধ্যে অন্যতম৷ তবে ভারতবর্ষকে বলা যায় গণতন্ত্রের দ্বারা নির্বাচিত দলতন্ত্রের দ্বারা শাসিত রাষ্ট্র৷ একবার যে দল ক্ষমতা দখল করে তখন তার আর জনগণের উপর আস্থা বিশ্বাস কোনটাই থাকে না৷ তখন জনগণের রায়কে নিজের দিকে ধরে রাখতে নানা অসদ উপায় অবলম্বন করে৷ নানা প্রলোভন দেখিয়ে ভোটার লিস্টে কারচুপি করে, রাষ্ট্রশক্তি, অর্থশক্তি ও দৈহিক শক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতায় ফিরে আসতে চায়৷
সেই সরকার তখন আর জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, জনগণের জন্য, জনগণের সরকার থাকে না৷ রাষ্ট্রের শাসকরা আর জনগণের নেতা থাকে না৷ তারা হয়ে যায় দলের, গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের শাসক নেতা৷ এই ধরণের শাসকরা রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণের কথা, সর্বশ্রেণীর জনগণের কল্যাণের কথা ভাবে না৷ যদিও নির্বাচনের আগে ভোটপ্রার্থী হয়ে করজোড়ে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় প্রতিশ্রুতির বুলি মুখে নিয়ে৷ এই রাষ্ট্র নেতারা সামান্যতম গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন নয়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে এরা কোন মর্যাদা দেয় না৷ গণতন্ত্র এদের কাছে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারনা করে ক্ষমতা দখলের একটা অবলম্বন মাত্র৷
ভারতীয় গণতন্ত্রের সব থেকে বড় অভিশাপ জনগণের একটা বৃহৎ অংশ সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক বিষয়ে অসচেতন৷ জনগণের এই অসচেতনার সুযোগ নিয়ে ধুরন্দর নেতারা বাকচাতুর্যে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ভোট আদায় করে৷ তাছাড়া অসচেতন ভোটাররা বোট দেবার আগে বুঝতেও পারে না রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শ ও কর্মসূচী কতটা জনস্বার্থের পক্ষে, কতটা জনস্বার্থ-বিরোধী৷ জনগণের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই অনেক প্রতারক রাজনীতিতে এসে রাষ্ট্রের শাসক হয়ে বসে৷ ফলে রাষ্ট্রের ক্ষমতা চলে যায় চোর-ডাকাত প্রবঞ্চকদের হাতে৷ এই প্রবঞ্চক প্রতারক নেতারা নিয়ন্ত্রিত হয় ধনকুবেরদের দ্বারা৷ পরিনামে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ব-কলমে ধনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়৷ জনগণের জন্যে, জনগণের দ্বারা, জনগণের সরকার পরিণত হয় পুঁজিপতিদের জন্যে, পুঁজিপতিদের দ্বারা পুঁজিপতিদের সরকার৷ রাজনৈতিক দলগুলো হয়ে যায় পুঁজিপতিদের হাতের পুতুল৷ তাই রাষ্ট্রের সবাইকার সমস্যা ও স্বার্থের কথা ভেবে কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারে না, যদিও নির্বাচনের সময় গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে৷ ভারতবর্ষে এই ধরণের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই চলছে৷ তাই স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও সাধারণ মানুষ জীবন যাপনের নূ্যনতম প্রয়োজনটুকু ক্রয় করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে না৷
গণতন্ত্রের এইসব ত্রুটি বিচ্যুতি সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণ সম্ভব যদি জনগণের বৃহৎ অংশ সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন হয় ও সাধারণ মানুষের হাতে ক্রয় ক্ষমতা থাকে৷ তখন মানুষ চতুর রাজনৈতিক নেতাদের প্রলোভনে পা দেবে না ও তাদের বাকচাতুর্যে প্ররোচিত হবে না৷ তবুও গণতন্ত্রের ছিদ্রপথে আমলা প্রশাসন থেকে বিচারব্যবস্থা সব স্তরেই দুর্নীতির অবাধ অনুপ্রবেশের সুযোগ থাকছে৷
আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রাউটের সদ্বিপ্রতন্ত্রের কথা ভাবার সময় এসেছে৷ আজ সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে নিয়েছে পুঁজিপতি গোষ্ঠী৷ তাই দিন দিন ধনবৈষম্য বাড়ছে৷ গরীব আরও গরিব হচ্ছে, ধনীর ধনভাণ্ডার ফুলে ফেঁপে উঠছে৷ এই পরিস্থিতিতে প্রাউটের সদ্বিপ্রতন্ত্রই একমাত্র মুশকিল আসান৷ কারণ প্রাউটের সদ্বিপ্র নেতৃত্বের প্রাথমিক সর্তই হচ্ছে তাকে কঠোর নীতিবাদী হতে হবে, আধ্যাত্মিকতায় প্রতিষ্ঠিত, সংকীর্ণতা মুক্ত উদারনৈতিক দৃঢ় মনভাবা সম্পন্ন৷ প্রাউট প্রবক্তার কথায়--- সদ্বিপ্রতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হবে অনেক বৈদুষ্যের মস্তিষ্ক চালনায় ফলশ্রুতিতে তা অসির বলে মসীর বলে বা পেশীর বলে সম্ভব নয়৷ তাই এখানে দুর্নীতির অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা থাকবে না৷
রাষ্ট্রের প্রকৃত কল্যাণ কামী শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এই সত্য অনুভব করতে পারলে ও মানুষের সামনে তুলে ধরলে রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণ সম্ভব হবে৷
- Log in to post comments