গ্রেট ডিপ্রেসনের পথে ভারত সহ সমগ্র বিশ্ব

লেখক
সুকুমার সরকার

পূর্ব প্রকাশিতের পর

পুরাণ, ইতিহাস, বিজ্ঞানে যে দেশ এত এগিয়ে  ছিল সেই দেশের  রাষ্ট্র ক্ষমতার নেতা মন্ত্রীরা অহরহ  অযৌক্তিক ,অবৈজ্ঞানিক কথাবার্র্ত বলে যাচ্ছেন৷ দেশের হাজারো আর্থ-সামাজিক সমস্যা আছে, সে সব সমস্যার সমাধানের  জন্য কোনো পরিকল্পনা নেই৷ কৃষি শিল্পের দ্বন্দ্বে কর্ষকেরা  জর্জরিত৷ সে সব সমস্যার  সমাধানে সরকারি কোনো  প্রকল্প  ঘোষিত হচ্ছে না৷ হচ্ছে না কৃষিভিত্তিক বা কৃষিসহায়ক কোনো শিল্প৷ হচ্ছে না বানিজ্যিক  বা সাধারণ শিল্প কলকারখানাও ৷ লক্ষ লক্ষ বেকার  ছেলে মেয়েদের  স্বপ্ণ ধাবিত হচ্ছে অনিশ্চিয়তার  অন্ধকারের দিকে! যে কটি সরকারি প্রতিষ্ঠান এখনো টিকে আছে সে গুলোকেও বেসরকারিকরণ  করে দেওয়া হচ্ছে৷  আর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নেতা মন্ত্রীরা নিজেদের জামা জুতো তৈরি করছেন৷ শিল্প-কারখানা  না গড়ে, লক্ষ কোটি  টাকা খরচ করে গড়ছেন  মূর্ত্তি৷ সাধারণ মানুষের আর্থিক-সামাজিক  উন্নয়নের দিকে নজর না দিয়ে , নাচ গানের  শিল্প-সংস্কৃতির বন্যায় দেশকে ভাসিয়ে দিচ্ছেন৷ তাও আবার সেই সংস্কৃতি কোনো সুস্থ  সংস্কৃতি নয় অসংস্কৃতির  বন্যা! লক্ষকোটি  টাকা খরচ করে নিজেদের  নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার  ব্যবস্থা করেছেন৷ আর সাধারণ মানুষদের  জন্য  তৈরি করছেন ডিটেনশন ক্যাম্প৷ লক্ষ লক্ষ  মানুষকে নাগরিকত্বহীন করে সেখানে  বন্দি  করে রাখা  হবে! কী অদ্ভুত রাষ্ট্র নেতাদের  মানবিকতা! মানুষকে মানুষের  মর্যাদায় বাঁচতে  দেবার  মতো মানবিক  গুণাবলীর  অধিকারী এঁরা নন৷  অথচ  এঁরাই  আজ দেশের  প্রেসিডেন্ট , প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷

সমগ্র বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ধেয়ে আসছে৷ ভারতবর্ষেও৷ সে মন্দা ঠেকাবার মতো অর্থনৈতিক ভিত্তি এই মূহূর্তে ভারতবর্ষে কতটা মজবুত  তা নিয়েও নেতা মন্ত্রীদের মাথা  ব্যাথা নেই৷ রিজার্ভ ব্যাংকের  আপদকালীন ফান্ড থেকে টাকা  তুলে অর্থের নয় ছয় করছেন৷ দেশের  জন্য শিক্ষা-কলকারাখানা না বানিয়ে  এন.আর.সির মতো নেতিবাচক  পদক্ষেপ গ্রহণ করে কোটি কোটি  টাকা খরচ করছেন৷  এহেন পরিস্থিতিতে  মন্দা মহামন্দার  রূপ নেবেই! এবং তা হবেL টাইপের মহামন্দা৷ যার সূচকL অক্ষরের মতো নীচে নেমে দীর্ঘ পতনে চলতেই থাকবে৷  উত্তরণ খুব সহজে ঘটবে না! বিশেষ করে বর্তমান সময়ের  এই সংকটাপন্ন নেতৃত্বের  অভাবের দিনে৷

পঁুজিবাদী বা সাম্যবাদী দুটো অর্থনীতিই সাধারণ মানুষের  জন্য  দিশাহীন অর্থব্যবস্থা৷ কারণ দুটো ক্ষেত্রেই কাজ করছে শাসন ও শোষণের মানসিকতা৷ এখানে শোষক  ও শাসক  একত্রে হাত মিলিয়েছেন৷  শোষকের  উদ্দেশ্য যেনতেন প্রকারে শোষণের যন্ত্র সচল রাখা ৷ আর শাসকের উদ্দেশ্য যেনতেন প্রকারে  ক্ষমতায় টিকে থাকা৷ কারোরই উদ্দেশ্য জনকল্যান করা নয় ৷ সুতরাং এই মহামন্দা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে বাধ্য!

আজ সমগ্র  বিশ্বজুড়ে  এই যে  এত অর্থনৈতিক  বিপর্যয় , রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সাম্প্রদায়িক হিংসা, সামাজিক অবক্ষয় , সাংসৃকতিক  অধগতি এ সবেরই  মর্মমূলে  আছে  এই অর্থনৈতিক মহামন্দার হাত! আজ বিশ্বের  প্রায় প্রতিটি দেশই এই মহামন্দার কবলে৷ এই মহামন্দার ফলে উদ্ভুত  পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচতে বিভিন্ন দেশ যে পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেছেন বা করতে চলেছেন তা এই সমস্যাগুলির হাত থেকে বাঁচার কোন সঠিক পদক্ষেপ  তো নয়ই উপরন্তু তা সংকটকে  আরও বাড়িয়েই তুলবে৷

আমেরিকা নিজেদের  দেশের অর্থনীতি চাঙা করতে  অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে  যে পদক্ষেপ  গ্রহণ  করছে বা করতে চলেছে, তাতে দীর্ঘ দশক ধরে জীবন  জীবিকার  তাগিদে আমেরিকায় আসা অভিবাসীর  জন্য অমানবিক  পদক্ষেপ ছাড়া  আর কিছুই না৷ এই ব্যালেন্স অর্থনীতিতে আমেরিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ অভিবাসী  মানবসম্পদও তো আমেরিকার অর্থনীতির  একটি ভিত৷ আমেরিকা নিজেদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন দেশের  মেধাশক্তি, শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়েছে৷ এই মেধাশক্তি ও শ্রমশক্তির  ঘাটতি হলে আমেরিকার  অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে৷  আমেরিকার  অর্থনীতিতে অভিবাসন  নীতি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা -এ আমেরিকার  অভিবাসী বাঙালী অর্থনীতিবিদ  অভিজিৎ বিনায়ক  বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল পুরস্কার  প্রাপ্তিই বলে দিচ্ছে৷ তাঁর সঙ্গে  নোবেল পাওয়া তাঁর স্ত্রী এস্থার  ডাফলোও প্যারিস থেকে আসা অভিবাসী৷ আমেরিকা কঠোরভাবে  অভিবাসন নীতি চালু হলে ভবিষ্যতে আমেরিকা অভিজিৎ এস্থারাদের পাবে না!

একই পদক্ষেপ করতে চলেছে বর্তমানের  ভারতবর্ষও৷ এন.আর.সি, নাগরিকত্ত্ব  বিল, এ সবই  ওই অর্থনৈতিক মন্দার হাত থেকে  বাঁচার  ভূল পদক্ষেপ৷ কিংবা বলা যেতে পারে, দিশাহীন  অর্থনৈতিক  অবস্থার  মধ্যে পড়ে  বাঁচার  জন্য বা  বাঁচাবার  জন্য ভুল অজুহাত! এটা ওই অযোগ্য নেতৃত্বের কাণ্ড-কারখানা, যোগ্য নেতৃত্ব হলে অর্থনৈতিক এই মহামন্দার  হাত থেকে  বাঁচতে  সঠিক  পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন৷

 সঠিক পদক্ষেপ  হিসেবে প্রথমেই খোঁজ করতে হতো  প্রকৃত  অর্থনৈতিক  দর্শন দিশার৷ সংজ্ঞায় ও সমীক্ষায় আমরা  দেখেছি, পঁুজিবাদী অর্থনীতিতে ত্রিশ বছর পর পর  স্বাভাবিকভাবেই  অর্থনৈতিক  মহামন্দা আসছে বা আসবে৷ ছোটোখাটো  মন্দাও আসছে  বা আসবে৷ আবার  তার উত্তরণও ঘটবে৷ কিন্তু মন্দার  সেই পতন সময়টুকুতে সময়টুকুতে সর্বক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ৷ রাষ্ট্রিক, আর্থিক , সাংসৃকতিক সর্বক্ষেত্রের বিপর্যয়েই বিধস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ৷ এখানে একটা প্রশ্ণ আসতে পারে, অর্থনৈতিক মন্দা যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হয়ে থাকে, তাহলে রাষ্ট্রনেতাদের কী করার আছে?