হাতের লেখা সুন্দর করবার কৌশল

লেখক
বিশ্বজিৎ পাত্র

লেখাপড়া এই শব্দটিতে আমরা সবাই খুব পরিচিত৷ এই ভাষাটির আধুনিক স্রষ্টা বাঙলা ভাষার রূপকার পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়৷ আমরা কথা বলতে পারতাম কিন্তু সেই কথা লিপিবদ্ধ করতে পারতাম না৷ আকুলি বিকুলি মনে হন্যে হয়েছে বাঙালী৷ বাংলা ছিলো অন্ধকারে৷ অ,আ,ক,খ বর্ণপরিচয় এর আলোয় বাংলাকে উজ্বল করলেন মহাপুরুষ পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর৷

সেই থেকেই শুরু হলো আধুনিক বাংলা ভাষা লেখা বা লিপিবদ্ধ করা৷ সেই থেকেই এই বাঙলায়, বাংলা ভাষায় শুরু হলো লেখাপড়া৷ আমরা সবাই চাই মনের কথা নিজের  হাতে সুন্দর করে লিপিবদ্ধ করে রাখি৷ অন্যের পাশে আমার লেখাটি সুন্দরের আখ্যা নিয়ে প্রথম স্থান পাক, পাক প্রশংসার  মর্যাদা, সুন্দর  লেখায় প্রশংসার মর্যাদা পেয়েছেন বরেন্য সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়, সাহিত্যিক শ্যামলকান্তি দাস সাহিত্যিক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আমাদের সকলের পরিচিত বাকি শিল্পী দেবাশীষ চক্রবর্তী মহাশয়গণ, এছাড়াও বর্তমানে নেপালের এক স্কুল ছাত্রী প্রকৃতি মাল্লা সুন্দর হাতের লেখার  জন্য বিশ্ব বিখ্যাত৷ আর যদি নিজের মনের কথা লিখতে গিয়ে চোখ দেখে অক্ষর গুলো অসৌখিন, ইড়িং-বিড়িং, কাকের ঠ্যাঙ বকের ঠ্যাঙ হয় কষ্টে ভরে ওঠে মন, জলে টলটলিয়ে ওঠে চোখ৷ আর চলতে চায়না কলম, তবুও নিরুপায় হয়ে চালাতে হয়৷ সে পত্র লেখা হোক, স্কুলের খাতায় লেখা, পরীক্ষার খাতায় লেখা নতুবা অফিসের ফাইলে৷ খুব সতর্কে সাবধানে লিখতে হয় হিসাবের খাতায়৷ আর যদি শিক্ষক হয়ে ছাত্রর থেকে লেখা খারাপ হয়, অফিসের কর্তা হয়ে কর্মীর থেকে খারাপ হয়, অভিভাবক হয়ে ছেলে মেয়ে থেকে লেখা খারাপ হয়, তাহলে লজ্জায় আর  মান থাকে না৷ সেই কারণেই আমরা মুখে ভালো কথা বললেও লিখতে লজ্জা পাই৷ নানা অজুহাতে লেখা এড়িয়ে যাই৷

খারাপ লোক, খারাপ অভ্যাস, খারাপ ব্যবহার যেমন করে মানুষ পছন্দ করে না, ঠিক তেমন করেই খারাপ হাতের লেখা কেউ পছন্দ করে না৷ বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের খারাপ হাতের লেখা স্কুলের খাতা বা পরীক্ষার খাতা কোনো শিক্ষক শিক্ষিকাই দেখতে চান না৷ তবুও তাঁদের দেখতে হয়৷ পরীক্ষার নম্বর দিতে হবে৷ স্কুলে বা পরীক্ষার  খাতায় ভালো সুন্দর সৌখিন ঝক্‌ঝকে চক্‌চকে হাতের লেখার খাতা পেলে আনন্দে ভরে ওঠে মন৷ খুব সহজেই বুঝতে পারেন লেখার সারমর্ম, আর তখন ঐ ছাত্র-ছাত্রীটি পায় প্রশংসা অর্থাৎ ভালো নাম্বার৷ খুব সহজেই ঐ ছাত্র ছাত্রীটি পৌঁছে যেতে পারে আকাঙ্খিত শিখরে আর যদি হাতের লেখা পড়ে খারাপ অসৌখিন কাকের ঠ্যাঙ বকের ঠ্যাঙ হাতের লেখার স্কুলের খাতা নতুবা পরীক্ষার খাতা শিক্ষক বুঝতে পারেন না লেখা, উত্তরের সারমর্ম, একটা গড় নাম্বার দিয়েদেন৷ ঐ ছাত্র-ছাত্রী পূর্ণ নম্বর না পাওয়ার কারণে পৌঁছাতে পারে না৷ আকাঙ্খিত শিখরে৷ তখন বিশাদে ভরে যায় মন৷ ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় অন্ধকারে৷ আর এমনি অন্ধকারে যারা হারিয়ে যায় তাদের আবার শিক্ষার আলোয়  ফিরিয়ে আনার স্বপ্ণে হলাম বিভোর৷ কেমন করে পাব আলোর সন্ধান কিভাবে জ্বালাবো লেখার আলোর কাঠি, কেই বা দেখাবে আমাকে আলোর দিশা মাথার ভিতর কিল বিল করে ভাবনা পোকাগুলো৷ ভুলিয়ে দিয়েছিলো নাওয়া খাওয়া ঘুম,খারাপ লেখা চোখে পড়লেই চোখ হতো স্থির৷ লেখার নেশায় পাগল হল মন হৃদয় হল উন্মাদ৷ দিক-বিদিক জ্ঞান থাকলো না সময়ের, ঠিক তখনি লেখার কলম হলো আমার আড়াই-তিনবছরের ছেলে৷ মাটি গুটি নিয়ে নিয়ে খেয়ালে দেওয়ালে এখানে ওখানে টানতো আঁকি বুকি৷ তখনি মন বলে উঠলো ইউরেকা ইউরেকা শুরু হলো মনপ্রাণ দিয়ে গবেষণা৷ কিভাবে যে সময় দিন রাত্রি সরে চলে যেতে লাগলো বুঝতেই পারলাম না, কেটে গেলো কয়েকটা বছর, তৈরী করলাম হাজারও ফ্রি-হ্যান্ডস্‌ (মুক্তহস্ত) তার থেকে এগারোটি নিলাম চয়ন করে৷ শিক্ষানবিশ হয়ে শুরু করলাম বাম হাতে ফ্রি-হ্যান্ডস্‌ অভ্যাসঙ্গী তারপর শুরু করলাম হাতের লেখা, বাম হাতে একপ্রকার লিখতে পারলাম৷ তখন আস্থা ভরসা বিশ্বাস এলো নিজের উপর৷ শেখানোর প্রথম ছাত্র পেলাম এক নবম শ্রেণীর ছাত্র, প্রায় ছয় থেকে আটমাসের  নিরলস চেষ্টায় তৈরী করলাম ছাত্রটিকে৷ সেই থেকেই শুরু  হলো পথ চলা৷ এখনো থামা নেই৷ আজ কয়েক’শ ছাত্র-ছাত্রীর হাতে তুলে দিয়েছি সৌখিন সুন্দর ঝক্‌ঝকে লেখার প্রদীপ৷ ওরা আজও স্কুলের খাতায় পরীক্ষার খাতায় এমনকি নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে তা জ্বালিয়ে খুশিতে উজ্বল হয়েছে৷ দেখে খুশি হয়েছেন শিক্ষক শিক্ষিকা অভিভাবকগণ আর সেই আলোর ঢেউ ছুঁয়ে যায় আমাকে, যখন ছাত্র-ছাত্রী বা অভিভাবকেরা বলে বা বলেন স্যার হাতের লেখার জন্য স্কুলে অতিরিক্ত নম্বর পেয়েছে বা একটা ভালো স্কুলে ভর্তি বা কলেজে ভর্তি হয়েছে, তখন গর্বে আনন্দে মন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে তোমার গবেষণা সার্থক৷ আজ আমি নয়, আমার তৈরী ‘বাঁশকলম’ একাডেমি সকলের মুখে মুখে, যখন কেউ ফোন করে বলেন আপনি ‘বাঁশকলম’ একাডেমির প্রশিক্ষক তখন খুব খুশি হই৷ তবে হ্যাঁ, ওরা আমাকে শ্রম দিয়েছে আমি ওদের  লেখা দিয়েছি৷ এটা বলতে পারি যেমন শেখার পড়ার কোনো বয়স হয় না৷ ঠিক তেমনি লেখা শেখার বয়স হয় না৷ আমার কাছে বাবা ক্লাস করে গিয়েছেন অফিস, ছেলে গিয়েছে স্কুলে৷ পিসি ক্লাস করে গিয়েছেন শিক্ষকতা করতে, ভাইঝি গিয়েছে কলেজ৷ মা ছেলে একসঙ্গে বসে করেছে ক্লাসঙ্গী আজ যেমন ওরা তৈরী হয়েছে বলে খুশি হয়েছি ঠিক তেমন করেই কষ্টে মন ভরে ওঠে কোন ছাত্র-ছাত্রীর অ-সৌখিন ইড়িং-বিড়িং হাতের লেখা দেখলে৷ তোমাদের যাদের হাতের লেখা খারাপ তাদের বলছি, আমার কাছে একটিবার এসে হাতের লেখার প্রদীপটি জ্বালিয়ে নিয়ে যাও আর সারাজীবন  আনন্দে খুশিতে থাকো, সর্বপরি আবারও বলছি, তোমরা আমাকে শ্রম দাও, তোমাদের লেখা দেবো৷