জ্বলন্ত মশাল

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

চতুর্দিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার৷ তিনি এলেন৷ আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলেন এক –একটা প্রজ্বলন্ত মশাল৷ তারপর কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ চলে গেলেন৷ আমরা বিমূূ হয়ে তাকিয়ে রইলুম৷........

প্রকৃতপক্ষে তিনি চিরকালই ছিলেন, এখনও আছেন আর ভবিষ্যতেও থাকবেন৷ তিনি তো শাশ্বত চৈতন্য কিন্তু আমরা তো চর্মচক্ষে তাঁকে দেখতে পাচ্ছি না৷ তাই তিনি যে আছেন–এ বিশ্বাসটাই আমরা সম্পূর্ণ হারিয়ে বসেছিলুম৷ ভাবছিলুম এই অন্ধকারটাই চিরসত্য৷ আলো বলে কিছু নেই৷ তিনি নেই, কখনো ছিলেনও না, থাকবেনও না৷ অন্ধকারের জীবেরা তাদের পিশাচ–নৃত্য চালিয়ে যাচ্ছে ও অনন্তকাল ধরে তা চালিয়ে যাবে৷ এই পিশাচ–নৃত্য চিরন্তন সত্য৷ এর থেকে পরিত্রাণের কোনও পথ মানুষের জানা নেই৷ তাই নিপীড়িত মানবতার দীর্ঘশ্বাসে আকাশ বাতাস ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল৷ আমরা যারা তাঁর সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্য লাভ করেছিলুম, হঠাৎ আমাদের ঘুম ভেঙ্গে গেল৷ আমরা অবাক বিস্ময়ে তাঁর সুস্মিত আননের পানে তাকিয়ে রইলুম৷ হতাশার কালো মেঘ কেটে গেল৷ না, তিনি তাহলে আছেন৷ অন্ধকারে পরপারে রয়েছে আলোর প্লাবন৷ না, অন্ধকারের পরপারেই বা বলছি কেন, তিনি যে ‘জ্ঞানাঞ্জন শলাকা দিয়ে আমাদের চক্ষু উন্মিলিত’ করে দিয়েছেন তাই আমরা দেখতে পেলুম, যাকে আমরা অন্ধকার বলছি, এরই মাঝে রয়েছে আলোর নর্তন৷ আমাদের চোখ এতদিন ঢাকা ছিল অন্ধকারের আবরণে৷ তিনি সেই আবরণ উন্মোচন করেছেন৷ দেখলুম, অমানিশার ঘনায়মান অন্ধকারের বুক চিরেই ফুটে উঠল আলোর শুভ্রজ্যোতি৷ দেখলুম, দুঃখের অকুল পাথারের জগদ্দল পাষাণ সরিয়ে আনন্দমূর্ত্তি রূপে তিনি আমাদের সম্মুখে বিরাজমান৷

এমনিভাবেই যুগে যুগে তিনি আসেন৷ এবারও ক্ষণকালের জন্য চারিদিকে বিদ্যুৎ–ঝলক ছড়িয়ে দিয়ে আবার তিনি অদৃশ্য হয়ে গেছেন৷

কিন্তু আমাদের হাতে তিনি তুলে দিয়ে গেছেন একটা অভিনব স্পর্শমণি৷ কবি কল্পনার স্পর্শমণি যেমন সব কিছুকেই সোণায় পরিণত করে দেয়, আনন্দমার্গের দর্শনও ঠিক তেমনি যে সমস্যার ওপরই প্রয়োগ করা হোক না কেন, ন্যায়–ধর্ম সম্মত সদুত্তর সে অবশ্যই বের করে দেবে৷ অন্ধকারে আলোর পথের নিশানা আমরা খুঁজে পাবই পাব৷

মহাসম্ভূতি শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী পার্থিব দেহের মহাপ্রয়াণ দিবস প্রকৃতপক্ষে মহাসংকল্প দিবস৷ তাঁর সর্বানূ্যসূ্যত দর্শনকে হাতিয়ার করে আজ সমাজের সর্বস্তরে যে শোষণ ও সমস্যা–দানবের পিশাচ–নৃত্য চলেছে সেই দানবের কবল থেকে আমরা মানব সমাজকে মুক্ত করবই করব৷ এই মহাপ্রয়াণ দিবস তাই মহাসংকল্প গ্রহণের দিবস৷ অতীতের সমস্ত ভুল–ভ্রান্তি–গ্লানি–ক আবর্জনাকে প্রবল বেগে দূরে নিক্ষেপ করে আমরা আমাদের জীবনকে ও জগৎকে অত্যুজ্জ্বল আলোকের আদর্শে গড়ে তুলবই তুলব৷ প্রভাতের অরুণ আলোয় বিশ্বভূবনকে উদ্ভাসিত করবই করব৷ তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন এই সুমহান কাজে পরমপুরুষের বরাভয় হস্তের কৃপা সর্বদাই আমাদের সঙ্গে রয়েছে৷ আমাদের এই মহাসংকল্প বাস্তবায়িত হবেই হবে৷