প্রকৃতির নির্মম পরিহাস! মানুষের সীমাহীন লোভের পরিণতি! প্রকৃতিকে জয় করার বিজ্ঞানের ব্যর্থ প্রচেষ্টা ! পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল,সেই পৃথিবীর মানুষ জলের জন্য হাহাকার করছে৷ কোথাও এক বুক জলে দাঁড়িয়ে মানুষ এক ফোঁটা জলের জন্যে হাহাকার করছে৷ কোথাও রুক্ষ্ম-শুক্ষ মরুভূমিতে মানুষ এক বিন্দু জলের জন্যে বুক চাপড়াচ্ছে৷ জল থেকেও জল নেই অবস্থা!
একটি সমীক্ষায় জানা গেছে আগামী বছর ভারতের দশটি শহরে ভূগর্ভস্থ জল শেষ হয়ে যাবে৷ প্রায় দশ কোটি মানুষ তীব্র জলসংকটের সম্মুখীন হবে৷ কলকাতা বাসীর আপাত স্বস্তি দশের তালিকায় কলকাতা নেই৷ তবে এগার নম্বরে আসতে বেশী দেরী হবে না, তাই আপাত কথাটি বলা! তিন ভাগ জলে বাস করেও জলের জন্য হাহাকার কেন? কেন ভূগর্ভস্থ জলে টান! কেন একফোঁটা পানীয় জলের জন্যে মানুষের হাহাকার৷ এই সঙ্কট থেকে পরিত্রানের পথ কি? পথ তো আছেই, কিন্তু দেশের কর্ণধাররা সেই পথে চলবে কি?
প্রায় চারদশক আগে পাট শিল্পের সংকট ও সমাধানের পথ দেখিয়েছিলেন প্রাউট প্রণেতা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার৷ কিন্তু সেইপথে না চলার মূল্য আজ পাট শিল্পকে দিতে হচ্ছে৷ একইভাবে ভূগর্ভস্থ জল সংকটের কথাও প্রাউট প্রণেতা অনেক আগেই বলেছেন, শুধু তাই নয় , তিনি জল সমস্যা সমাধানের সুস্পষ্ট পথ নির্দেশনাও দিয়েছেন৷ কিন্তু দেশের কর্ণধাররা সে কথায় কর্ণপাত করেন নি৷ তাই আজ এই সংকটের সম্মুখীন দেশের একটা অংশ৷ ‘‘চেরাপঞ্জী থেকে একখণ্ড মেঘ ধার করে এনে দিতে পার গোবী সাহারার বুকে’’৷ বাক্যটির ভাবগত অর্থ অনেক প্রকার হতে পারে৷ কিন্তু আজ রূঢ় বাস্তব হলো মানুষের অপরিণাম দর্শিতার ফলে চেরাপঞ্জীও গোবী সাহারায় পরিণত হওয়ার দিকে এগোচ্ছে৷
বন-জঙ্গল উচ্ছেদ, খাল, বিল,পুকুর ভরাট করে শিল্প কারখানা, অপরিকল্পিত ভাবে গৃহনির্র্মণ, ভূগর্ভস্থ জলের অব্যবহার, অতিরিক্ত ব্যবহার এই সংকটের জন্য দায়ী৷ এই সমস্যাগুলো মনুষ্যসৃষ্ট৷ প্রকৃতি কোনভাবেই এর জন্য দায়ী নয়৷ ভূগর্ভের জলে টান অনাবৃষ্টির আশংকা, নানাপ্রকার দূষিত পদার্থের মিশ্রনে নদী, খাল বিলের জলও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে৷ মানুষের সীমাহীন লোভ ও অদূরদর্শিতার কারণে মানুষ জীবজন্তু, পশুপক্ষী তরুলতা সবাই আজ বিপদের সম্মুখীন হয়েছে৷ এই অবস্থা থেকে ত্রাণ পেতে হলে অবিলম্বে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে৷ পাশাপাশি ভূগর্ভের জলের স্তর যাতে বাড়ে সেই পরিকল্পনাও নিতে হবে৷ খাল, বিল, নদীর জল যাতে দূষিত না হয় সেদিকে কঠোর নজর দিতে হবে৷ প্রাউট প্রণেতা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার এ বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত ও যুক্তিযুক্ত পথ নির্দেশনা দিয়েছেন৷ দেশের কর্ণধার ও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ যত সত্ত্বর এই পথে আসবে ততই মানুষের কল্যাণ৷ পৃথিবীর শুধু মানুষই নয়, পশুপাখী,তরুলতা সবাই এই জল সংকটের হাত থেকে মুক্তি পাবে৷
- Log in to post comments