কামদেবের সংসার ত্যাগ

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

ইতিহাস প্রসিদ্ধ মহারাজ আদিশূর কান্যকুব্জ থেকে যে পাঁচজন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ গৌড়ে নিয়ে আসেন তাদের মধ্যে সাবর্ণ গোত্রের বেদগর্ভ নামে একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন৷ এই পাঁচজন ব্রাহ্মণের মোট ৫৬টি পুত্র সন্তান হয়৷ আদিশূরের উত্তরাধিকারী ক্ষিতিশূর এই ৫৬জন ব্রাহ্মণকে ৫৬টি গ্রাম প্রদান করেন৷ এই গ্রাম দান থেকেই ‘গাঁ-ই’ শব্দের উৎপত্তি৷ গাই বলতে বোঝায় গ্রামাধিকারী৷ পূর্বোক্ত বেদগর্ভ বারটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন৷ তাঁর সেই দ্বাদশ পুত্রের মধ্যে একজনের নাম ছিল হল৷ তিনি যে গ্রামটি পান তার নাম গঙ্গ৷ ফলে হলের সন্তানরা সবাই গঙ্গোপাধ্যায় বলেই পরিচিত হতে লাগলেন৷ এইভাবেই গঙ্গোপাধ্যায় পদবীর উৎপত্তি৷

হলের অধঃস্তন চতুর্দশ পুরুষ ছিলেন কামদেব গঙ্গোপাধ্যায়৷ তিনি ছিলেন শুদ্ধাচারী শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত৷ দিবারাত্রি জপতপ আর শাস্ত্রচর্র্চতেই তিনি নিমগ্ণ থাকতেন৷ সংসারী হলেও সংসার বন্ধন তাঁর ভালো লাগতো না৷ বৈরাগ্যের টানে ছুটে যেতে তাঁর মন উদ্‌গ্রীব হয়ে উঠলো৷ কিন্তু তাঁর স্ত্রী ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী৷ স্ত্রীর ভালোবাসা আর সেবা যত্নের মোহে কামদেব সংসার ত্যাগ করতে পারছিলেন না৷

অবশেষে কামদেবের সংসার বন্ধন ছিন্ন করার এক সুযোগ এসে গেল৷ তাঁর অন্তঃসত্বা স্ত্রী পদ্মাবতী প্রচণ্ড প্রসব বেদনা সহ্য করতে না পেরে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে প্রাণত্যাগ করলেন৷ স্ত্রী বিয়োগের পর কামদেব তাঁর সদ্যোজাত মাতৃহীন শিশুর মায়ায় আবার আবদ্ধ হয়ে পড়লেন৷ কামদেব ভাবতে লাগলেন, সে চলে গেলে এই মাতৃহীন দুগ্দপোষ্য শিশুটিকে কে লালন পালন করবে৷

কামদেব একদিন ঘরে বসে পুত্রের চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে পড়লেন৷ হঠাৎ লক্ষ্য করলেন, ঘরের চাল থেকে একটি টিকটিকির ডিম তাঁর সামনে পড়লো৷ ডিমটি মাটিতে পড়েই ভেঙে গেল৷ আর ভাঙা ডিম থেকে বেরিয়ে এলো একটি ছোট্ট টিকটিকির বাচ্চা৷ আর ঠিক সেই সময় একটি পিঁপড়ে সেখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল৷ টিকটিকির বাচ্চাটি অমনি খপ করে পিঁপড়েটিকে খেয়ে ফেললো

এই দৃশ্য থেকে কামদেব বুঝলেন, ঈশ্বর সমস্ত প্রাণীর জন্য জন্মের পর থেকেই খেয়ে বাঁচার ব্যবস্থা করে রেখেছেন৷ অতএব তাঁর সন্তান ও ঈশ্বরের কৃপায় অবশ্যই রক্ষা পাবে৷ এই ভেবে কামদেব সন্ন্যাসীব্রত অবলম্বন করে স্ত্রীকে শ্মশানে দাহ করলেন৷ তারপর একটি উত্তরীয় ধারণ করে সংসার ত্যাগ করলেন৷