কেউ কথা রাখেনি

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

দেখতে দেখতে ৪২ বছর পার হয়ে গেল৷ কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন দুই দলের সরকার কেউই কথা রাখেনি৷ যারা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বা টেলিভিশনের পর্দায় পশ্চিম বঙ্গে সিপিএমের সন্ত্রাস ও গণহত্যার প্রসঙ্গ তুলে বাজার গরম করে তারা কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন গণহত্যার বিচার করে দোষীদের সাজা দেওয়ার এখনও পর্যন্ত ব্যবস্থা করল না৷ ১৯৮২ সালের ৩০ শে এপ্রিল কলকাতার রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে ১৭ জন আনন্দ মার্গী সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল৷ রড দিয়ে পিটিয়ে ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে সিপিএমের হার্মাদরা মার্গের সন্ন্যাসীদের হত্যা করেছিল৷ ভেবেছিল এভাবেই আনন্দ মার্গ প্রচারক সংঘকে শেষ করে দেবে৷ আনন্দ মার্গকে শেষ তো করতেই পারেনি ,উল্টে সিপিএম পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে৷ বিধানসভায় তারা আজ শূন্য৷ আনন্দ মার্গের বিজয় রথ কিন্তু দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে চলেছে৷

ছেলেধরার মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে সিপিএম হার্মাদরা যে নৃশংস হত্যা কাণ্ড ঘটিয়েছিল বিজনসেতু - বালিগঞ্জ এলাকায় , সেই ছেলেচুরির রটনা যে একেবারে মিথ্যে সে কথা ঐ ঘটনার পরে পরেই ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রাজ্য পুলিশের ডিজি স্বয়ং৷ এমনকি তিনি আরও বলেছিলেন রাজ্যের কোনো জেলা থেকেই কোনো ছেলে চুরি যায়নি৷ তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আনন্দমার্গের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছিল - সুপ্রিম কোর্টের কোনো কর্মরত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ঘটন করে ঐ নৃশংস ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা৷ সেই একই দাবি আজও আনন্দ মার্গীদের৷ কিন্তু জানিনা কোনজ্ঞাত কারণে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস বা বিজেপি দল কেউই এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ব্যাপারে আগ্রহী তো নয়ই বরং নীরবতা অবলম্বন করে চলেছে৷

 আমাদের রাজ্যে দীর্ঘ ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট রাজত্বে হাড়হিম করা ১৭ জন আনন্দ মার্গের সন্ন্যাসী হত্যা ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল৷ তৎকালীন রাজ্যের বিরোধী নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বাম জমানায় ঘটে যাওয়া প্রতিটি গণহত্যার বিচার করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করবেন বলে ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ তাঁর এই প্রতিশ্রুতিকে সিপিএমের হাতে নিহত ও নিগৃহীতদের পরিবার গভীরভাবে বিশ্বাস করেছিল৷ কিন্তু তিনিও সেভাবে সচেষ্ট হলেন না৷ ৩০ শে এপ্রিলের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সত্য উদঘাটনের জন্য বিচারপতি অমিতাভ লালার নেতৃত্বে ’লালা কমিশন’ ঘটন করেছিলেন৷ সেই কমিশন কী রিপোর্ট দিল ও সুপারিশ করল তা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি৷ অর্থাৎ ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে৷

সিপিএম বিরোধী তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের অবস্থান একই জায়গায় দেখা যাচ্ছে৷ এরা জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য মঞ্চে বা টেলিভিশনের টকশোতে নিহত আনন্দ মার্গের সন্ন্যাসীদের জন্য কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করে৷ এদের আসল রূপ সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে৷ এরা কেউই কথা রাখেনি৷ ভবিষ্যত প্রজন্ম এদের কাউকেই ক্ষমা করবে না