কর্ণাটকে পুনরায় ইয়েদুরাপ্পা মুখ্যমন্ত্রী ঘোড়ার পিঠে চড়ে এক পঙ্গু সরকার

লেখক
প্রভাত খাঁ

কর্ণাটকে ঘোড়া কেনাবেচার রাজনীতি আপাততঃ শেষ৷ ভারতের গণতন্ত্রকে এক ভয়ঙ্কর নক্কারজনক পরিহাসে পরিণত করেছে ঘোড়া কেনা-বেচার রাজনীতি৷ দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্য বর্তমানে এই নক্কারজনক রাজনীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে৷ কুমারস্বামী জোট সরকারের কংগ্রেসের ১৩ জন বিধায়ক ও জে.ডি.এস.-এর তিন বিধায়ক সরকার থেকে পদত্যাগ করেন৷ একজন অবশ্য পরে পদত্যাগ প্রত্যাহার করে নেন৷

ফলে জোট সরকারের পক্ষে ১০১ জন ও বিজেপির পক্ষে ১০৫ জন বিধায়কের সমর্থন থাকে৷ প্রথম দিকে অধ্যক্ষ পদত্যাগীদের সম্বন্ধে কোনও সিদ্ধান্ত নেন নি৷ কর্ণাটক বিধানসভায় নির্বাচিত বিধায়ক হচ্ছেন ২২৪ জন ও একজন মনোনীত বিধায়ক আছেন৷ এই হিসেবে সরকার গড়তে ১১৩ জনের সমর্থন লাগে৷ দলত্যাগ বিরোধী একটি আইন রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পাশ করেছিলেন৷ সেখানে দলের এক-তৃতীয়াংশ দলত্যাগ করলে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে৷ অর্থাৎ দলত্যাগ করলেও তাঁরা বিধায়ক থেকে যাবেন৷ গণতন্ত্রের এ এক বড় প্রহসন, ত্রুটিপূর্ণ আইন৷ কারণ যে দলের প্রতীকে বিধায়ক নির্বাচিত হন, সেই দল ছাড়লে দলীয় সমর্থক ও দলের সঙ্গে একপ্রকার বিশ্বাসঘাতকতা৷ কারণ সবসময় জনগণ প্রার্থীকে ভোট দেয় না৷ অনেক সময়ই দল দেখে ভোট দেয়৷ তাই দলত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে বিধায়ক পদও ত্যাগ করা উচিত৷ সেটাই বৈধ আইন হবে৷

১৭ই জুলাই সুপিম কোর্ট কর্ণাটকে দলত্যাগী বিধায়কদের দলত্যাগ বিরোধী আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন অধ্যক্ষকে৷ বিদ্রোহী বিধায়করা উচ্চতম আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ ২৫শে জুলাই এক সংবাদে প্রকাশ পায়---বিজেপির মুখপাত্র জি. মধুসূদন জানান দল ক্ষমতা দখল করতে রাজী নয়, কিন্তু ২৬শে জুলাই বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা সাংবাদিক সম্মেলনে অন্য কথা বলেন৷ তিনি বলেন---আমি বিজেপির পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করতে প্রস্তুত৷  বাস্তবে তাই-ই হয়েছে৷

রাজ্যে রাজ্যে গণতন্ত্রের নামাবলী গায়ে জড়িয়ে যেভাবে শাসন ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছে তা গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ রাজনীতিকে মূলধন করে ও দেশীয় পুঁজিপতিদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতারা গণতন্ত্রকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে৷ আর কোটি কোটি জনসাধারণ প্রাণধারণের, দিনযাপনের গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছে৷  দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে যাঁরা দলীয় টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন, ক্ষমতার লোভে সেই দলকে ডুবিয়ে অন্য দলে ভিড়তে তাদের বিবেকে বাধে না৷ দেশপ্রেমের নামে, জনসেবার নামে রাজনীতির এ এক জুয়াখেলা৷ যে যতটা পারে কামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা৷ এই খেলা চিরদিন চলতে পারে না৷ জনগণের চেতনা যখন ফিরবে তখন এই জনগণই তাঁদের জননেতাদের গায়ে থুতু ছেটাবে৷ দেশের প্রতিটি রাজ্যেরই এই চালচিত্র৷ অল্প কিছু নেতা-নেত্রী হয়ত সৎ আছেন, কিন্তু বেশীরভাগই জনসেবার নামে লুটেপুটে খেতে ব্যস্ত৷ রাজনৈতিক দলের মঞ্চটাই আজ দুর্নীতির সবথেকে বড় আখড়া৷ স্বাধীনতার পর থেকে ৭২ বছর ধরে এই রাজনীতিই চলছে৷ এই রাজনীতি অবিলম্বে বন্ধ  হওয়া দরকার৷

কর্ণাটক প্রসঙ্গে ফিরে আসি৷ শেষ সংবাদ কর্ণাটক বিধানসভার অধ্যক্ষ দলত্যাগী বিধায়কদের বিধায়ক পদ খারিজ করেছেন৷ ফলে বর্তমান অবস্থায় বিজেপির পক্ষে ১০৫ ও বিরোধী পক্ষে ১০১ জন বিধায়ক আছেন৷ এই অবস্থায় বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথে কোন বাধা নেই৷ ২৬শে জুলাই তিনি চতুর্থ বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথও নিয়েছেন৷ কিন্তু এর পশ্চাতে রয়ে গেল এক কদর্য রাজনীতির খেলা৷ সমস্ত রকম ন্যায়নীতিকে বিসর্জন দিয়ে, গণতন্ত্রের মূল শক্তি জনগণকে অবজ্ঞা করে দলতন্ত্রের এক নক্কারজনক নজীর হয়ে থাকল কর্ণাটকের সাম্প্রতিক রাজনীতি৷ এই রাজনীতি একদিকে যেমন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে তেমনি গণতন্ত্রের ভিতকেও দুর্বল করবে৷ বিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক তাঁর ‘Mischief of party spirits’ প্রবন্ধে লিখেছেন-- It is pernicious to the last degree ’৷ অর্থাৎ গণতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই দলবাজী দেশকে ধবংসের পথে নিয়ে যাবে৷ দেশের তরুণ ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের উচিত দেশকে এই ধবংসের হাত থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে এগিয়ে আসা৷