সাধক-দেহে বিভিন্ন গ্রন্থি-উপগ্রন্থিতে পজেটিব্ মাইক্রোবাইটামের মাধ্যমে পরমপুরুষ (সদ্গুরু) সাধকের ওপর শক্তিসম্পাত করেন৷ মূলাধার চক্র থেকে সহস্রার চক্র পর্যন্ত যোগ-মনস্তত্ত্বের চারটি পর্যায় বা স্তর রয়েছে৷ এরা হ’ল ---
(১) ভৌতিক স্তর physical stratum)
মূলাধার থেকে মণিপুর পর্যন্ত অর্থাৎ মূলাধার, সাধিষ্ঠান ও মণিপুর ---এই তিনটিকে একসঙ্গে বলা হয় ভৌতিক স্তর৷
(২) ভৌতিক মানসিক স্তর physio-psysicological stratum)
মণিপুর হতে বিশুদ্ধ চক্র পর্যন্ত হ’ল ভৌতিক মানসিক স্তর৷
(৩) মানস-আধ্যাত্মিক স্তর physio spiritual stratum)
বিশুদ্ধ চক্র হতে আজ্ঞাচক্র---এই পর্যায়টিকে মানসিক- আধ্যাত্মিক স্তর বলে৷
(৪) আধ্যাত্মিক স্তর spiritual stratum)
আজ্ঞাচক্র হতে সহস্রার চক্র এই পর্যায়টি হ’ল আধ্যাত্মিক স্তর৷ প্রতিটি চক্রের সঙ্গে গ্রন্থি ও উপগ্রন্থির একটা যোগসূত্র রয়েছে৷ পিটইটারী ও পিনিয়াল গ্ল্যাণ্ডের ওপর নেগেটিব্ মাইক্রোবাইটাম কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারে না৷ কিন্তু পজিটিব্ মাইক্রোবাইটাম দেহস্থিত সব কয়টি চক্রেই প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম৷ মানব দেহের বিভিন্ন চক্রের মধ্যে দিয়ে পজিটিব্ মাইক্রোবাইটামের মাধ্যমে সদ্গুরুর কৃপা অভিব্যক্ত হয়ে থাকে৷
মণিপুর চক্রের নীচে মূলাধার ও স্বাধিষ্ঠান এই চক্রদুটি তামসিক বৃত্তির স্থান৷ এই জন্য এই চক্র দুটিকে সাধারণত নেগেটিব্ মাইক্রোবাইটাম বেশী সক্রিয় হয়৷ তাই নেগেটেভ মাইক্রোটাম স্বভাবগতভাবে মানুষের শরীরের নিম্নস্থ চক্রগুলিতে কাজ করে৷ ফলে কিডনী, লিভার প্রভৃতিতে যন্ত্রণা ও নানান রোগ সৃষ্টি করে৷ এরপর মণিপুর চক্র হ’ল রাজসিক প্রকৃতির৷ আর এই মণিপুর চক্রের ওপরে হ’ল অনাহত চক্রের স্থান৷ কিন্তু অনাহার চক্র যেহেতু সাত্ত্বিক প্রকৃতির, সেহেতু এই চক্রের নেগেটিব্ মাইক্রোবাইটামের চাইতে পজিটিব্ মাইক্রোবাইটাম বেশী সক্রিয়শীল থাকে৷
অসাধকদের চেয়ে সৎ মানুষ ও সাধকেরা বেশী পজিটিব্ মাইক্রোবাইটাম আত্মস্থ করে৷ তাই এই সমস্ত মানুষ ও সাধকের মনোবৃত্তি পজিটিব্ ভাবনাযুক্ত হয়৷ এই অনাহত চক্রটি সৌরমণ্ডলের অন্তর্গত৷ তাই সৌরজগতের গ্রহ, তারা, নক্ষত্র, ধূমকেতু ইত্যাদি থেকে প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত আলোকতরঙ্গ সব চক্রগুলোতেই পড়ছে, তবে অনাহত চক্রকে বেশী প্রভাবিত করে, আর এই প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত আলোক রশ্মির মাধ্যমে মাইক্রোবাইটাম বাহিত হয়ে অনাহত চক্রের বারোটি (১২টি) উপগ্রন্থিকে প্রভাবিত করে৷ যেহেতু মাইক্রোবাইটাম ‘তন্মাত্র’(inferences) বা ভাব(idea) তরঙ্গের মাধ্যমে বাহিত হয়, সেহেতু সৌরমণ্ডলের আলোক তন্মাত্রের মাধ্যমে বাহিত হয় এই মাইক্রোবাইটামেরাও ক্রিয়াশীল হয়৷ অবশ্য পজিটিব্ বা নেগেটিব্ উভয় প্রকারের মাইক্রোবগাইটাম এর মাধ্যমেই বাহিত হয়৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে অগণিত জ্যোতিষ্ক মণ্ডলী আমাদের অনাহত চক্রকে প্রভাবিত করছে৷
পজিটিব্ মাইক্রোবাইটামের ক্রিয়াশীলতাকে শক্তিশালী করার জন্য আর নেগেটিব্ মাইক্রোবাইটামের প্রভাবকে কমাতে বা ধবংস করতে অবশ্যই নিয়মিত ভাবে সাধনা করার প্রয়োজন আছে৷
এরপর বিশুদ্ধ চক্রের কথায় আসা যাক৷ বিশুদ্ধ চক্র নক্ষত্রমণ্ডলের অন্তর্গত৷ সাধারণতঃ পজিটিব্ মাইক্রোবাইমাট প্রত্যক্ষভাবে এই নক্ষত্রমণ্ডলের মাধ্যমে মানুষের শরীরের সংস্পর্শে আসে৷ সূর্য্য হ’ল আমাদের নিকটতম নক্ষত্র৷ আমাদের এই সূর্য্য ছাড়াও সূর্য্য অপেক্ষা বড় বহু নক্ষত্র আছে মহাবিশ্বের জ্যোতিষ্ক মণ্ডলীর মধ্যে৷ আর এই সমস্ত নক্ষত্রের আলোক আমাদের কাছে আসতে সময় লাগে কোটি কোটি বছর৷ এখন মহাকাশ থেকে এই আলোক রশ্মিগুলি এসে পড়ে বিশুদ্ধ চক্রের ওপর৷ তারপর বিশুদ্ধ চক্রে প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়ে যে আলোক তন্মাত্র সৃষ্টি করে, সেই আলোক তন্মাত্রের মধ্যে পজিটিব্ অথবা নেগেটিব্ মাইক্রোবাইটামেরা বাহিত হয়ে বিশুদ্ধ চক্রের ষোলটি গ্রন্থি, উপগ্রন্থিকে প্রভাবিত করে তথা মানুষের শরীরকে প্রভাবিত করে৷ এক্ষেত্রে প্রকৃত সাধক সাধনার দ্বারা নেগেটিব্ মাইক্রোবাইটামকে দূরে সরিয়ে দিয়ে নেগেটিব্ মাইক্রোবাইমাটের প্রভাবকে প্রতিহত করতে পারে ও এর সাথে সাথে পজিটিব্ মাইক্রোটামের প্রভাবকে শক্তিশালী করা যায়৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে নেগেটিব্ মাইক্রোটাম শারীরিক, মানসিক চক্রগুলিকে অর্থাৎ মূলাধার হতে বিশুদ্ধ চক্র পর্যন্ত প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে৷ কিন্তু তারা পরমপুরুষের ঐশী শক্তি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন চক্রে Ocult plexus) পৌঁছতে পারে না৷ শুধুমাত্র পজিটিব্ মাইক্রোবাইটাম আজ্ঞাচক্রকে স্পর্শ করতে পারে৷
মাইক্রোবাইটাম আবিষ্কারক শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন, ‘নেগেটিব্ মাইক্রোবাইটাম অপ্রতক্ষ্যভাবে প্রভাব বিস্তার করে বিশুদ্ধ চক্রে কিন্তু তারা কোনক্রমেই গুরুচক্রের ঊধের্ব উঠতে পারে না৷ কেবল বিরাট প্রভাবশালী ব্যষ্টির দ্বারা মানসাধ্যাত্মিক শক্তির সম্প্রোয়গের ফলে এই নেগেটিব্ মাইক্রোবাইটাম বিশুদ্ধ চক্রের ঊধের্ব আজ্ঞাচক্র পর্যন্ত যেতে পারে৷ বিশুদ্ধ চক্রের ঊধের্ব নেগেটিব্ মাইক্রোবাইটামের এই অধিরোহণকে বলে---ঋষ্টি৷ আজ্ঞাচক্র হ’ল পজিটিব্ মাইক্রোবাইটামের পক্ষে সর্বোচ্চ বিন্দু৷ কিন্তু যদি তারা গুরুচক্র পর্যন্ত উঠে থাকে তাকে বলা হয় ‘কৃপা’, আর এই আজ্ঞাচক্র থেকে সহস্রার চক্র পর্যন্ত অর্থাৎ মানব মহিমার সর্বোচ্চ বিন্দু পর্যন্ত পজিটিব্ মাইক্রোবাইটামের ঊধর্বগতিকে বলা হয় ‘করুণা’৷ কৃপা ব্যতিরেকে করুণা অসম্ভব৷ কৃপাকে বাদ দিয়ে সরাসরি অগ্রগমন সম্ভব নয়৷ সুতরাং মানুষের উচিত ‘ঋষ্টি’ বা নেগেটিব্ মাইক্রোবাইটামের ঊধর্বগতিকে এড়িয়ে চলা৷
- Log in to post comments